এক্সক্লুসিভ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার

১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের জনগণের হৃত মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৭ দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। আমাদের ৭ দফা যৌক্তিক দাবির কোনোটিই সরকার মেনে নেয়নি। অপরপক্ষে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনে একটা স্বাধীন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো কাজ না করে একটা দলীয় প্রতিষ্ঠানের মতো আচরণ করছে। এরপরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- যার মাধ্যমে জনগণের ভোটে এই দুঃশাসনের অবসান হবে।

দীর্ঘ ১০ বছর একটা অপশাসনের অধীনে আছে বাংলাদেশ। এই সরকার ক্ষমতায় থাকার পুরো সময়ে কখনোই সুশাসন ছিল না এবং এই রাষ্ট্র বেশিরভাগ নাগরিকের জন্য কল্যাণকরও ছিল না। ২০০৯ সালে প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর এই পরিস্থিতি যতটা খারাপ ছিল, তার চেয়ে বহুগুণ খারাপ হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির পর।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নামের প্রহসনটির আগেই কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের বেশি (১৫৪টি) আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিলেন। এভাবে সরকার গঠিত হওয়া সংবিধানের ৬৫ (২) ধারার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক। এই ধারায় রাষ্ট্রের সংসদ নির্বাচন বলতে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনকে বোঝানো হয়েছে। তাই তথাকথিত নির্বাচনের আগেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চাইতে বেশি আসন পেয়ে জয়ী হওয়া বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে কোনোভাবেই নির্বাচিত, নৈতিকভাবে বৈধ সরকার বলে আমরা মনে করি না। বলাবাহুল্য, এই নির্বাচনের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রে জনগণের ন্যূনতম মালিকানাটিও শেষ করে ফেলা হয়েছে।

এই অনির্বাচিত সরকারটির সময় গত ৫ বছরে বিরোধী দলীয় আন্দোলন দমন করার নামে শত শত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে বিনাবিচারে হত্যা এবং গুম করা হয়েছে। এমনকি সাধারণ জনগণ তাদের স্বার্থে খুব সাধারণ ধরনের প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে আসলেও তাদের ওপরে ভয়ঙ্কর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। সামপ্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে তরুণ এবং কিশোরদের ওপরে পুলিশ এবং সরকারদলীয় গুণ্ডাদের আক্রমণ আমাদেরকে এটা খুব ন্যক্কারজনকভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারি মতের বাইরে কোনো ধরনের বক্তব্য দেয়া হলেই সরাসরি হামলা, মামলা করে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। এই লক্ষ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো নিপীড়নমূলক আইন তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ব বিখ্যাত ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম শুধুমাত্র জনগণের স্বার্থের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের জন্য যে ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন সেটা আমাদেরকে স্পষ্ট করে দেয় একটা জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার শেষ পর্যন্ত মানুষের ওপরে কতোটা ভয়ঙ্কর নিপীড়ক হতে পারে।

দেশের বর্তমান অবস্থার স্বীকৃতিও আমরা দেখতে পাই আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নেও। ইকোনমিস্ট পত্রিকার ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এই বছরের বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান (৯২তম), সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-এর অবস্থান (৭৫)-এর চাইতেও অনেক খারাপ। অথচ এই জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থার জন্য। নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল গণতন্ত্রের জন্য। জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে এই রাষ্ট্রকে পূর্ণ স্বৈরতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার একটা রক্ষাকবচ হিসেবে বর্তমান সরকার তথাকথিত উন্নয়নকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় চার পাঁচ গুণ বেশি করে সেতু, রেলপথ ও ফ্লাইওভার তৈরি করা হয়েছে উন্নয়নের নামে। কিন্তু এই তথাকথিত উন্নয়নের সুফল হাতেগোনা কিছু মানুষের কাছেই পৌঁছেছে। এর ফলে এই সমাজে ভয়ঙ্কর রকম বৈষম্য বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস- এর হিসাব বলছে সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশের খানাপ্রতি আয় (হাউজহোল্ড ইনকাম) ২০০৫ সালে ছিল ১১০৯ টাকা, যা ৩৫ শতাংশ কমে ২০১৬ সালে ৭৩৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ধনী পাঁচ শতাংশের খানাপ্রতি আয় ৩৮ হাজার ৭৯৫ থেকে বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণের বেশি, ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা।

শুধুমাত্র নিজ দলের এবং সমাজে তাদের পদলেহী নানাভাবে ক্ষমতাশালী বিভিন্ন শ্রেণির কিছু সদস্যের জন্য রাষ্ট্রীয় যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা অবারিত করার মাধ্যমে লুটপাট করার এই চর্চা, যা অর্থনীতিতে ‘ক্রনি ক্যাপিটালিজম’ হিসেবে কুখ্যাত, সেটা বিপুল পরিমাণ দুর্বৃত্ত পুঁজি তৈরি করছে। সরকারের প্রত্যক্ষ প্রভাব ব্যবহার করে নানা বৃহৎ প্রকল্পে যৌক্তিক বাজেটের চাইতে কয়েকগুণ বেশি বাজেট নির্ধারণ করে মুনাফা করা, সরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা, পুঁজিবাজারে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ, নির্বিচারে শ্রমশোষণ, উৎপাদিত পণ্য বা সেবার মানোন্নয়ন ছাড়াই অতি মুনাফা, কর ফাঁকি এবং যতভাবে সম্ভব সরকারের নিকট থেকে সুবিধা আদায় করে নেয়াটাই এই ক্রনিদের মূল লক্ষ্য থাকে। এভাবে তৈরি হওয়া পুঁজির স্বাভাবিক পরিণতি হলো পাচার হওয়া, যেটা আমরা এর মধ্যেই দেখছি।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার বা ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৪ সালেই পাচার হয়েছে প্রায় ৯১১ কোটি ডলার বা প্রায় ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। যৌক্তিকভাবে অনুমান করাই যায়, বর্তমানে এই অঙ্ক কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকা হবে।

এই ক্রনিরাই সরকারের সহযোগিতায় সীমাহীন লুটপাট চালিয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে। এই মুহূর্তে ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ (অবলোপনকৃত ঋণ এবং সুদসহ) প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, নানাভাবে রিশিডিউলিং এবং নতুন ঋণের মাধ্যমে শ্রেণিকৃত ঋণ কমিয়ে ফেলার ‘ক্যান্সার’ বিবেচনায় নিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ৩ লাখ কোটি টাকা হবে।

তথাকথিত উন্নয়নের ডামাডোলের মধ্যে আমাদের কর্মহীন তরুণদের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই চারদিকে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও)-এর ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’  শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ‘জবলেস গ্রোথ’- এর স্বীকৃতি বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রীও দিয়েছেন। সামপ্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করা তাদের কর্মহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।

অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ২০১৪ সালের পর সরকার ‘কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন’-এর কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে গণতন্ত্রকে উন্নয়ন হতে বিযুক্ত করে দেখার চর্চা বাতিল হয়েছে। ্তুউবাবষড়ঢ়সবহঃ অং ঋৎববফড়স্থ বইতে অমর্ত্য সেন উন্নয়ন বলতে পাঁচটি বিষয়ের সমন্বয়কে বুঝিয়েছেন। এগুলো হলো- ১. রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার (যেমন- বাকস্বাধীনতা, মুক্ত মিডিয়া, সভা-সমাবেশের অধিকার, প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার, নির্বাচিত প্রতিনিধির জবাবদিহিতা চাওয়ার অধিকার ইত্যাদি) ২. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (যেমন- মুক্ত শ্রমবাজার, সমান সুযোগ প্রাপ্তি, ব্যবসায়ে নৈতিকতা, কর্মক্ষেত্রে নারীদের মুক্ত অংশগ্রহণ ইত্যাদি) ৩. সামাজিক সুযোগ (যেমন- শিক্ষা-স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা, লৈঙ্গিকসমতা, নারীদের সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি) ৪. স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা (যেমন- দুর্নীতি মুক্ত থাকা, ন্যায়বিচার পাওয়া, বিপদে পুলিশের সহায়তা পাওয়া) ৫. নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা (যেমন- জরুরি সাহায্য, আশ্রয়, সামাজিক নিরাপত্তামূলক ভাতা ইত্যাদি)।

তাই মানুষকে আমরা সেই উন্নয়ন দর্শনের কথা বলছি, যেটা মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করবে। গণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের কোনো সংঘাত তো নেই-ই, গণতন্ত্র বরং উন্নয়নের খুব গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ।

নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কল্যাণে সরকার পরিচালনা করবে। এই পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐকমত্য, সকলের অন্তর্ভুক্তি এবং যেকোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত থাকা। ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় যাবতীয় পদক্ষেপের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রের মালিকগণের মালিকানা সুদৃঢ় করা। রাষ্ট্রের এই মালিকানা শুধুমাত্র নির্বাচনে জেতা দলের মানুষের নয়, এই মালিকানা থাকবে নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদেরও। এই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচনে পরাজিতদের মতামত এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।

আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা যেসব কাজ সম্পন্ন করবো এই ইশতেহারে আমরা সেই বিষয়গুলোকে স্থান দিয়েছি।

১. প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য
* বিগত দশ বছরে কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতা এবং পুলিশকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, গুম, খুন, মামলার ঘুষ বাণিজ্য ও বিচার বহির্ভূত হত্যায় লক্ষ পরিবার ক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত। এই সমস্যা সমাধান করে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, আইনজীবী সমন্বিত সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন (ঞৎঁঃয ধহফ জবপড়হপরষরধঃরড়হ) কমিশন গঠন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অতীতের হয়রানিমূলক মামলা সুরাহার লক্ষ্যে খোলামনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সৃষ্ট সকল ফৌজদারি মামলা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সৃষ্ট সকল মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* সকল জাতীয় বীরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা হবে।
* একদলীয় শাসনের যেন পুনর্জন্ম না ঘটে তা নিশ্চিত করা হবে।

২. ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনী আইন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে।
* রাষ্ট্রের মালিক জনগণের ভোটের অধিকার শতভাগ রক্ষা করার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় নাগরিকদের পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার পূর্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
* সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরি করা হবে।
* নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় তার কাজে সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকবে এবং তার স্বাধীন বাজেট থাকবে।
* গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজ করা হবে এবং স্বতন্ত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনের বিধান বাতিল করা হবে।
* প্রতিটি পর্যায়ের নির্বাচনে পেশিশক্তি, কালো টাকা এবং গণমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ করার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

৩. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ
* ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা হবে।
* মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। গণমাধ্যমের ওপর কোনো রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
* সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি নিষেধ থাকবে না।
* সরকারি পদক্ষেপ এবং পদধারীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, এমনকি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপেরও অধিকার থাকবে। এসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে মানহানির মামলা তার নিজেকেই করতে হবে (অন্য কেউ করতে পারবে না) এবং এই ধরনের মামলা কোনোভাবেই ফৌজদারি মামলা হবে না।

৪. ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ
* দেশের বিচার ব্যবস্থা, বিশেষ করে নিম্ন আদালত এখনো কার্যত সরকারের অধীনেই আছে। সংবিধানের ১১৫ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দেয়া হবে।
* সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুধু অনাস্থা ভোট এবং অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে দলীয় সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে না এমন সংশোধনী ৭০ অনুচ্ছেদে আনা হবে।
* সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা হবে। সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।
* সকল সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য সুস্পষ্ট আইন তৈরি করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ সব সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন (বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিসহ) গঠন করা হবে। উক্ত কমিশন কর্তৃক প্রাথমিক মনোনয়নের পর নিয়োগের পূর্বে তাদের নাম জনগণের মতামতের জন্য প্রচার করা হবে।
* সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উল্লেখযোগ্য পদ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হবে।
* প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। মন্ত্রিসভাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হবে। পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না।
* সংসদের ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে।
* আইন এবং রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং পর্যালোচনাই হবে সংসদ সদস্যদের মূল কাজ। খবরদারি নয়, সংসদ সদস্যগণ স্থানীয় উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সহায়তামূলক ভূমিকা পালন করবেন।
* বিরোধী দলের সাংবিধানিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। রাষ্ট্রপরিচালনায় বিরোধী দলের মতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হবে।

৫. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এবং বিকেন্দ্রীকরণ
* দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে।
* বর্তমানে কমবেশি ৫% বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয়ের পরিবর্তে প্রতিবছর ৫% হারে বাড়িয়ে পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৩০% বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয়ের বিধান করা হবে।
* বাজেটে প্রতিটি জেলার জন্য জেলা বাজেট এবং সেটা পর্যায়ক্রমে নিচের দিকে স্থানীয় সরকারের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
* জেলা পরিষদ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে।
* রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
* পৌর এলাকাগুলোতে সব সেবা সংস্থা মেয়রের অধীনে রেখে সিটি গভর্নমেন্ট চালু করা হবে।
* স্থানীয় সরকারের দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রথা বাতিল করা হবে।
* ঢাকার কাছাকাছি বিভিন্ন জেলায় উন্নত নাগরিক সুবিধাসহ কয়েকটি শহর গড়ে তোলা হবে। যেখান থেকে ঢাকায় খুব দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে।
* জনকল্যাণে প্রশাসনিক কাঠামো প্রাদেশিক পর্যায়ে বিন্যস্ত করা এবং স্থানীয় সরকারের স্তর নির্ধারণের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করা হবে।

৬. তরুণদের কর্মসংস্থান
* বেকার সমস্যার সমাধান হবে আমাদের সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের একটি। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার ফলে ‘কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির’ দুষ্টচক্র থেকে তরুণ সমাজকে বের করে আনতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী ব্যতীত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোনো বয়সসীমা থাকবে না।
* সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা থাকবে না।
* ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারের জন্য বেকার-ভাতা চালু করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা পরীক্ষা করে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে।
* আগামী ৫ বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
* প্রতি জেলা-উপজেলায় তরুণদের কর্মমুখী করার লক্ষ্যে কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। উদ্যোক্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা ও স্বীকৃতি প্রদানের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বেকার তরুণদের উদ্যোক্তা করার প্রয়াসে বেসরকারি ঋণ প্রদান ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রশাসনিক জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতি, রাজনৈতিক পোষকতা মুক্ত বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* বড় নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের মতো বিভাগীয় শহরগুলোতেও নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ?সরকারি কর্মকমিশনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধি করে সরকারি সকল চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। প্রয়োজনে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা বোর্ড গঠন করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* সরকারি চাকরি আইনের আলোকে বেসরকারি চাকরি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে বিদ্যমান বৈষম্য কমানো হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* দেশে কাজ করা ওয়ার্ক পারমিটবিহীন অবৈধ সকল বিদেশি নাগরিকের চাকরি করা বন্ধ করা হবে। যেসব সেক্টরে বৈধ বিদেশি চাকরিজীবী আছেন, সেসব ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশীয় তরুণদের নিয়োগে উৎসাহ দেয়া হবে। বৈধ বিদেশি চাকরিজীবীদের আয়কর প্রদানে বাধ্য করা হবে।
* সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তরুণদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হবে। ফ্রিল্যান্সিং-এর আয় দেশে নিয়ে আসার জন্য দ্রুততম সময়ে পেপাল সেবা দেশে আনা হবে।
* বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং চাকরি উপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদেরকে বিদেশে কর্মসংস্থানে সহায়তা করা হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যয় বর্তমানের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। চূড়ান্তভাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হলে নামমাত্র সুদে ঋণ দেয়া হবে।
* গ্রামে অবস্থান করে দেশবাসীর পুষ্টির উন্নয়নের জন্য শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা ক্ষুদ্র পোলট্রি ফার্ম স্থাপন করে উৎপাদন ও বাজারজাতে নিয়োজিত হলে তাদের বিনা সুদে ঋণ ও অন্যান্য বিশেষ প্রণোদনা সাহায্য দেয়া হবে এবং পোলট্রি সংশ্লিষ্ট প্রাণী ও উৎপাদন সামগ্রীর পুরো আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর মুক্ত হবে আগামী ১০ (দশ) বছরের জন্য। তবে বড় পুঁজির পোলট্রিতে ১৫% বিক্রয় শুল্ক ও ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।
* উদ্যোক্তা তরুণদের জন্য খুব কম সুদে ঋণ প্রদান করা হবে।
* ব্যাপক সংখ্যক নন-গ্র্যাজুয়েটের কর্মসংস্থান হবে কৃষি উৎপাদন এবং কৃষি বিপণন সমবায়ে। প্রয়োজনমাফিক সকল বহুল ব্যবহৃত এবং প্রয়োজনীয় স্বল্প উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিশেষ উৎসাহ ভর্তুকি দেয়া হবে।
* দরিদ্র স্বল্প শিক্ষিত যুবকদের একটি আফ্রিকান ভাষায় কথোপকথন ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দেয়া হলে, তাদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সমূহ হবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের কৃষিতে। জাপানেও কৃষিতে কর্মসংস্থানের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।
* তরুণদের সরকারি উন্নয়ন কাজে সংযুক্ত করা হবে।
* বেশি সংখ্যক কর্মসংস্থানের জন্য শ্রমঘন মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতকে উৎসাহিত করা হবে এবং প্রণোদনা দেয়া হবে।

৭. শিক্ষা
* কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে।
* সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে।
* জাতির ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে প্রথম বছরেই ডাকসুসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হবে।
* পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
* প্রকৃত দরিদ্র অসচ্ছল মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে উপযুক্ত হারে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে এবং এই ক্ষেত্রে অর্থায়নের সাহায্যের জন্য সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিএসআর বাধ্যতামূলকভাবে চালুর ব্যবস্থা করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করে সরকারিভাবে শিক্ষাব্যয় সুনির্দিষ্ট করে ফি নির্ধারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* মেধাপাচার রোধে মেধাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি যথার্থ মূল্যায়ন ও উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। ট্যালেন্ট সার্চ কর্পোরেশন গঠনের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন কৃত্রিম সংকট দূর করে আবাসন সমস্যার সমাধান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলের সংখ্যা (বিশেষ করে মেয়েদের হল) বৃদ্ধি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ছাত্র রাজনীতির নামে আবাসিক হলগুলোতে সিট বাণিজ্য জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং আবাসিক হলের বরাদ্দ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর খাবারের মানোন্নয়ন ও মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেয়া হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আলাদা আলাদা ভাবে না নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষক নির্বাচনে একাডেমিক ফলাফল গবেষণা কর্ম বা পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া নিয়োগ প্রদান করা হবে না। ?শিক্ষকদের পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নির্ধারণ এ গবেষণা কর্মের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সহশিক্ষকতার সার্বিক দক্ষতাকে বিবেচনা করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* ‘প্রশ্নফাঁসবিরোধী সেল’ গঠন এবং প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ মহলে জবাবদিহিতা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)।
* বেসরকারি স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে।
* ধসে পড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সকল পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করা হবে।
* প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু করা হবে।
* শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহীদের বৃত্তি প্রদান করা হবে।
* মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান করা হবে।
* প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
* শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপি’র অনুপাতে বরাদ্দ বর্তমানের ২.২৫ শতাংশের পরিবর্তে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ইউনেস্কো নির্দেশিত ৬ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

৮. দুর্নীতি দমন
* বৃহৎ প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মুখোমুখি হওয়া বিভিন্ন সেবাখাতের দুর্নীতি দমনকে আমাদের সরকার অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখবে।
* দায়িত্ব পাবার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বর্তমান সরকারের সব দুর্নীতির তদন্ত করে তার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
* সংবিধান নির্দেশিত পথে ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে এবং সংবিধান নির্দেশিত সব দায়িত্ব পালনে ন্যায়পালকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিটি ইউনিটে ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে।
* দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবে।
* দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতির বিধান (সরকারি চাকরি আইন-২০১৮) বাতিল করা হবে।
* স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তথ্য অধিকার আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
* সরকারি-বেসরকারি নানা দুর্নীতি অনিয়ম প্রকাশকারী ব্যক্তিদের (হুইসেল ব্লোয়ার) সুরক্ষা দানকারী হুইসেল ব্লোয়ার’স অ্যাক্ট সংশোধন করে আরো শক্তিশালী করা হবে এবং সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি ফাঁসকারীদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।  
* দেশ থেকে টাকা পাচারের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাচারকৃত টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৯. স্বাস্থ্য
* দেশের সকল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহ স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সরকারি কর্মকর্তার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
* ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্টে রূপান্তর করা হবে।
* সকল জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপনপূর্বক ৫০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে।
* সকল জেলায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট ঈঈট, ২০ শয্যার ওঈট, ১০ শয্যার ঘওঈট স্থাপন করা হবে।
* পুরাতন ২১ জেলায় অগ্রাধিকারভিত্তিক একটি করে ২০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার এবং একটি করে ক্যান্সার কেমোথেরাপি সেন্টার গড়ে তোলা হবে এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে তা সকল জেলায় প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হবে।
* গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্যে সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এক বৎসর ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করে এক বছর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
* সকল বড় ও জেলা শহরে জেনারেল প্র্যাকটিশনার প্রথা চিকিৎসা সৃষ্টি করে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসার জন্য রেফারেল ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। মেট্রোপলিটন শহরে সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক জেনারেল প্র্যাকটিশনার পদ্ধতি চালু করা হবে। সকল নাগরিক একজন স্থানীয় জেনারেল প্র্যাকটিশনারের সাথে নিবন্ধিত থাকবেন। জেনারেল প্র্যাকটিশনার  রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনমাফিক রোগীকে জেনারেল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করবেন। জেনারেল প্র্যাকটিশনার ক্লিনিকে পূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা পরিচর্যা ও রোগ নির্ণয়, ৫০টি অতীব প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ ও ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা থাকবে। কেন্দ্রীয় বাজেটে জেনারেল প্র্যাকটিশনার পদ্ধতি প্রচলনের জন্য পর্যাপ্ত বার্ষিক বরাদ্দ থাকবে।
* তিন মাসের মধ্যে ঔষধ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ নির্ধারণ করে সেটা প্রয়োগের মাধ্যমে এসব খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হবে।
* এনজিও ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্রিয় সাহায্য সহযোগিতায় সকল রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা ব্যাপক প্রসার, নিরাপদ পানীয় ও পয়ঃপ্রনালী, অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ ও শতভাগ গর্ভবতীর সেবা প্রচলন ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান প্রসব রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সঙ্গে স্থানীয় ধাইদের অব্যাহত প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ বাড়িতে নিরাপদ প্রসব চেষ্টা বিস্তৃত হবে।
* অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন সংস্কার করা হবে যাতে কোনো সুস্থ ব্যক্তি স্ব-ইচ্ছায় নিজের একটি অঙ্গ বা অঙ্গের অংশবিশেষ দান করতে পারেন স্ব-ইচ্ছায় অঙ্গ দান ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হবে। অঙ্গ দানকারীকে সরকার বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন।
* বেসরকারি পর্যায়ে একজন সার্জনকে ৫০,০০০ টাকা অপারেশন ফি দেয়ার পরও অঙ্গ প্রতিস্থাপন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকায় করা সম্ভব হবে। উন্নতমানের চোখের ফ্যাকো সার্জারি ১৫,০০০ টাকায় এবং ৩০-৪০,০০০ টাকায় হৃদরোগের স্টেন্ট স্থাপন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত মুনাফা করতে পারবেন। স্বাস্থ্যখাতে লাগামহীন মুনাফা অকল্পনীয় দুর্নীতির সমতুল্য। সুতরাং এই সকল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেবেন সরকার বিজ্ঞ নিঃস্বার্থ পেশাজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিক কমিটির মাধ্যমে।
* বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ৪০০ অনধিক ওষুধের কাঁচামালের আমদানি শুল্কমুক্ত করা হবে। দেশে উৎপাদিত কাঁচামালের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাবহির্ভূত ওষুধের উৎপাদন ও আমদানির উপর ২৫% শুল্ক ধার্য হবে। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য অধিকতর প্রণোদনা দেয়া হবে। দেশের প্রধান ৫০টি ওষুধ ফরমুলেশন কোম্পানি কমপক্ষে দুটি করে কাঁচামাল উৎপাদনে বাধ্য থাকবেন, যাতে ওষুধের কাঁচামালের জন্য বিদেশনির্ভরতা কমে এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র সুদে অর্থায়নের সুবিধা দেয়া হবে এবং সকল কেমিক্যালস আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর মুক্ত হবে।
* সরকারি হাসপাতালসমূহে ক্যান্সার ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারি এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের  অপর একটি ইউনিট দ্রুত স্থাপন করা হবে চট্টগ্রামে।
* এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানির উৎপাদিত সকল ওষুধ উন্মুক্ত বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হবে যাতে জনসাধারণ সরকারি হাসপাতালের বাইরে উন্নত মানের ওষুধ সুলভে কিনতে পারেন। প্রতিযোগিতার কারণে ওষুধের বাজারে মূল্যস্থিতি আসবে।
* দেশের সকল খুচরা ওষুধের দোকানে ছয় মাস মেয়াদে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ন্যূনতম এইচএসসি পাস দুইজন ওষুধ বিক্রেতা এবং ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টকে রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে যাতে ওষুধের ভুল প্রয়োগ কমে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগীরা সচেতন হন।
* জেলা শহরের বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার জন্য স্থানীয়ভাবে সরাসরি মনোনীত ২০০ জন আগ্রহী বিভিন্ন উদীয়মান বিশেষজ্ঞদের রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে দুই বৎসর সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে।
* শারীরিক সুস্থতা থাকলে এ সকল বিশেষজ্ঞদের অবসর বয়স হবে ৭০ (সত্তর) বৎসর। সকল বিশেষজ্ঞদের বিনা ভাড়ায় হাসপাতাল সংলগ্ন বাসস্থান এবং বিশেষ বেতন-ভাতা দেয়া হবে।
* শহরের বিশেষায়িত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞগণ নিজ নিজ হাসপাতালে বিকেলে প্র্যাকটিস করতে পারবেন। সকল সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিশ নিষিদ্ধ করা হবে।
* নার্সিং শিক্ষার সংস্কার করা হবে। তিন বৎসর মেয়াদি ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্সে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি পাস (জিপিএ ২.৫) এবং সেবার মনোবৃত্তি। সকল প্রশিক্ষণরত: নার্সগণ ন্যূনতম ৬ মাস উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক ভাবে অবস্থান করে শিক্ষা নেবেন। এ সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রশিক্ষণার্থী নার্সদের জন্য ২৫০০ বর্গফুটের ডরমিটারি নির্মাণ করা হবে।
* সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা এবং প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধদের সেবার জন্য অতিরিক্ত একলাখ ডিপ্লোমাধারী নার্স, ২৫,০০০ টেকনিশিয়ান এবং ৫০,০০০ ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপিস্ট ও ১০০,০০০ সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ফিজিওথেরাপি সহকারীর প্রয়োজন রয়েছে। মেধার ভিত্তিতে এমবিবিএস অধ্যয়নরত দরিদ্র পরিবারের ছাত্রদের জন্য ১০% বৃত্তির ব্যবস্থা থাকবে। সরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের টিউশন ফি ও হোস্টেল ভাড়া বাড়িয়ে যৌক্তিক হারে নির্ধারিত হবে।
* প্রত্যেক মেডিকেল ছাত্র ৫ (পাঁচ) বৎসর অধ্যয়নকালে ন্যূনতম দু’বার এক মাস করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ নেবে এবং গ্রামের সাথে পরিচিত হবেন।
* সকল নবীন চিকিৎসক ন্যূনতম দুই বৎসর উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত থাকার পর উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। মফস্বলে ন্যূনতম বৎসর চিকিৎসা না দিয়ে কোন চিকিৎসক উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হতে পারবেন না। বেসরকারি চিকিৎসকদের বেলাতে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
* ১৯৯০ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির আলোকে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। যার একজন নির্বাচিত চেয়ারপারসন থাকবেন এবং জেলা সিভিল সার্জন হবেন নির্বাহী ভাইস চেয়ারপারসন। জেলায় কার্যরত সকল চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থাপনা এই কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত হবে।
* জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে নতুন সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাধারণ চিকিৎসকদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেবেন। প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য প্রাথমিক ভাবে দুজন নবীন চিকিৎসককে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োগ দেবেন। অদূর ভবিষ্যতে আরও একজন নবীন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হবে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত যেয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন, তাদের চিকিৎসা পর্যালোচনা করবেন এবং রেফারেল রোগীদের পরামর্শ ও চিকিৎসা দেবেন।
* জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক ও ইন্টার্নদের ও মেডিকেল ছাত্রদের বাসস্থান এবং ক্লাসরুম ও ডরমিটরির জন্য অন্যূন ৫০০০ (পাঁচ হাজার) বর্গফুটের স্থাপনা তৈরি করা হবে জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় বাজেটের বিশেষ বরাদ্দে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত নার্স ও টেকনিশিয়ানদের জন্য অনধিক ৩০০০ বর্গফুটের বাসস্থান ও ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে।
* ৫ বৎসর ইউনিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক ভাবে কর্মরত থাকার পর নবীন চিকিৎসকগণ সরকারি অর্থায়নে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। উচ্চ শিক্ষার পর তারা স্ব-স্ব জেলার বিশেষায়িত হাসপাতালে সহযোগী বিশেষজ্ঞ পদ পাবেন। কয়েক বৎসর পরপর পর্যায়ক্রমে নবীন বিশেষজ্ঞ সিনিয়র বিশেষজ্ঞ, প্রধান বিশেষজ্ঞ পদে উন্নীত হবেন।
* জেলা শহরগুলোতে বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে নতুন কোনো সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে না।
* স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণের জন্য একজন ‘‘ন্যায়পাল’’ থাকবেন। তার অধীনে কতক বিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ, ফার্মাকোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও ইপিডিমিওলজিস্ট থাকবেন যারা নিয়মিত ওষুধের অপপ্রয়োগ রোধে ব্যবস্থাপত্র নিরীক্ষা এবং সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর খতিয়ান নিয়মিত পরীক্ষা করে জনসাধারণকে ফলাফল অবহিত করবেন।
* ন্যূনতম প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে সকল কৃষক-শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা হবে।
* স্বাস্থ্যখাতে জিডিপি’র বর্তমান বরাদ্দ .৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। দ্রুত যেন সেটা কমপক্ষে ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যায়।

১০. খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ
* ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ এর যুগোপযোগী সংস্কার করা হবে এবং সেটার কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজাল এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তির এক বছরের মধ্যে মানুষকে নিরাপদ খাদ্য পাবার নিশ্চয়তা দেয়া হবে।  
* বিএসটিআই-এর প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন করে খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের মান নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্তভাবে ক্ষমতায়ন করা হবে।

১১. মাদক নিয়ন্ত্রণ
* দায়িত্বপ্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণকে সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের তালিকায় আনা হবে। মাদক পরিবহন এবং বিপণন-এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক চোরাচালান রোধে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহায়তামূলক সম্পর্ক জোরদার করা হবে।
* মাদকাসক্তির জন্য দায়ী সামাজিক এবং পারিবারিক কারণসমূহ সমাধান করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে।
* এর মধ্যে যারা মাদকাসক্ত হয়ে গেছে তাদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা হবে। এই লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মাদকাসক্তি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
* সিগারেট এবং সকল তামাকজাত পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক ধার্য করা হবে।

১২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
* বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম (এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। ইতিপূর্বে সংঘটিত এ ধরনের সকল ঘটনাগুলোর তদন্ত করা হবে।
* মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে।
* পুলিশ সকল অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে তদন্ত করতে বাধ্য থাকবে। চার্জশিট হলে আদালতে লিখিত অনুমতি দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবে, তার পূর্বে না। বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
* রিমান্ডের নামে পুলিশি হেফাজতে কোনো প্রকার শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না।
* পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে পুরোপুরি স্বাধীন করা হবে।
* ৩৩ শতাংশ এসপি নিযুক্ত হবেন সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে চাকরি শুরু করা অফিসারদের মধ্য থেকে।  
* পুলিশ অ্যাক্ট রিভিউ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।
* পুলিশ সকল অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে তদন্ত করতে বাধ্য থাকবে, চার্জশিট হলে পরে আদালতের লিখিত অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবে, তার পূর্বে নয়। এতে হয়রানি ও পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হবে।
* মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং মিথ্যা মামলায় সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
* বর্তমানে সাধারণ মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে স্থানীয় অসৎ নেতৃত্ব ও পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়া প্রতিহত করার লক্ষ্যে মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট ছাড়া কোনো অস্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা যাবে না।
* অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে মানহানির মামলা করতে পারবেন কেবলমাত্র সরকার বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, অন্য কেউ নয়। তা বর্তমান আইনে সুস্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও নিম্ন আদালতের বিচারকদের অজ্ঞতা কিংবা সরকারকে তুষ্ট করার কারণে আইনের ব্যত্যয় ঘটছে এবং শত শত মামলা সৃষ্টি হচ্ছে। কেবলমাত্র নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিকটস্থ আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়াও যেকোনো ব্যক্তি বিনা কোর্ট ফিতে দেশের যেকোনো আদালতে মামলা করার প্রথা বন্ধ করা হলে অপ্রয়োজনীয় মামলার জট কমবে।
* বিভিন্ন জায়গায় এবং মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করা হবে।
* হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।
* টিআইবি’র খানা জরিপ বলছে, এই সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্নীতিতে সবচেয়ে উপরে রয়েছে। খুব দ্রুত রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রেখে কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে এই বাহিনীর জবাবদিহিতা এবং পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা হবে। সম্পূর্ণ দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে পুলিশ হবে সত্যিকার অর্থেই একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী।
* পুলিশ বাহিনীর ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* জাতিসংঘ বাহিনীতে পুলিশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গৃহীত হবে।   

১৩. আদালত
* বিভাগীয় সদরে স্থায়ী হাইকোর্ট বেঞ্চ থাকবে।
* হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
* মামলার জট কমানো এবং হয়রানি বন্ধের নিমিত্তে মামলার বাদী-বিবাদী তিনবারের বেশি সময় নিতে চাইলে কোর্টের সময় অপরাধী পক্ষের উকিলের ফি বাবদ কোর্ট ফি ন্যূনতম জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
* জামিনযোগ্য মামলায় জামিন না হলে বিচারের দিন এই নিম্ন আদালতের বিচারক লিখিত রায় দেবেন যাতে অভিযুক্ত ওই দিনই উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারে।
* হাইকোর্ট কাউকে জামিন দিলে অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল করে কোর্টের সময় অপব্যয় করবেন না। সরকার উচ্চ আদালতে বিরোধিতা করতে চাইবে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকার কোর্ট ফি দিয়ে আপিল করবেন। আপিল ব্যর্থ হলে উক্ত কোর্ট ফি বিবাদী পাবেন।
* সরকারি কর্মচারীদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস দ্রুত ন্যায়বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বিধায় অ্যার্টনি জেনারেল ও তার সহকারীগণ, পাবলিক প্রসিকিউটর, সরকারি উকিল ও তাদের সহকারীদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে তাদের প্রাইভেট মামলা পরিচালনা নিষিদ্ধ করা হবে।
* সুপ্রিম কোর্টে ফৌজদারি, দেওয়ানি, কোম্পানি ও কর বিষয়ক এবং সংবিধান সম্পর্কিত ৪টি স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। প্রতিটি বেঞ্চে ৭ জন সিনিয়র বিচারপতি থাকবেন। এসব বিচারপতিগণের বেঞ্চের রদবদল হবে না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর বয়স হবে ৭০ (সত্তর) বৎসর।
* বিচারপতি ও বিচারকগণ প্রতিবছর নিজের এবং ঘনিষ্ঠ নিকটজনের সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।
* উচ্চ আদালতের বাৎসরিক ছুটি ছয় সপ্তাহে সীমিত হবে।

১৪. কৃষি ও কৃষক
* ক্রমাগত কমতে থাকা কৃষি ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়ে সার, বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হবে।
* সরকারি ব্যাংক থেকে খুব সামান্য সুদে কৃষকদেরকে ঋণ দেয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের একটা নির্দিষ্ট অংশ কৃষকদের মধ্যে বিতরণে বাধ্য করা হবে।
* ভূমিহীনদের মধ্যে সরকারের খাস জমি বণ্টন করা হবে।
* ভূগর্ভস্থ পানি কম ব্যবহার করতে হয় এমন ফসল উৎপাদনে এবং অর্গ্যানিক পদ্ধতিতে চাষে কৃষককে প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনা দেয়া হবে।
* সেচের সুবিধার্থে পদ্মা ব্যারেজ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* সরকার স্থানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষিগুদাম ও হিমাগার নির্মাণে ভর্তুকি/অনুদান দেবে। উৎপাদকদের বিপণনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক উপজেলাভিত্তিক ন্যায্য বিপণন সমবায় স্থাপিত হবে। উৎপাদকগণ সরাসরি এই বিপণন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থাকবেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের উপদ্রব কমবে।
* ক্রমবর্ধমান নগর আবাসন শিল্পায়নের ফলে আবাদযোগ্য ভূমি ও জলাশয়-এর উদ্বেগজনক হ্রাসের হার কমানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সরকারি প্রণোদনা থাকবে।
* স্থানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি গুদাম ও হিমাগার নির্মাণে এ সরকার প্রণোদনা দেবে।
* জলমহাল এবং হাওরের ইজারা সম্পূর্ণ বাতিল করে মৎস্যজীবী ও দরিদ্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।  

১৫. শিল্পায়ন
* শিল্পায়নের জন্য ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
* আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিরসন করার জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা এবং আইন ও বিধিমালা সহজ করা হবে।
* আলোচনার মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকায় গার্মেন্টসে কোটা বৃদ্ধি করা হবে। গার্মেন্টস পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। বিভিন্ন দেশের স্থানান্তর করা গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশে স্থাপনে প্রণোদনা দেয়া হবে।
* কৃষিনির্ভর এবং শ্রমঘন শিল্পে বিশেষ উৎসাহ দেয়া হবে।
* দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ জেলাগুলোতে শিল্পায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।
* বিভিন্ন দেশের শিল্প স্থাপন উৎসাহিত করার জন্য আরো এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন স্থাপন করা হবে।
* দেশে-বিদেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা নিয়ে আরো পাট শিল্প স্থাপন করা হবে। নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।

১৬. শ্রমিক কল্যাণ
* দু’বছরের মধ্যেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে।
* সকল খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে।
* খণ্ডকালীন এবং পূর্ণকালীন গৃহকর্মীদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের কাজের জন্য উপযোগী নীতিমালা তৈরি করা হবে।
* অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
* সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
* গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সকল শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
* স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে শ্রমিকগণ মাসে ২৫০ টাকার প্রিমিয়ামের মাধ্যমে সকল চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। প্রিমিয়ামের ১০০ টাকা দেবেন শ্রমিক নিজে এবং ১৫০ টাকা দেবেন মালিকপক্ষ। ওষুধের অর্ধেক মূল্য শ্রমিককে বহন করতে হবে। রোগ নির্ণয়, অপারেশন ও হাসপাতালে ভর্তি বাবদ শ্রমিকের অন্য কোনো খরচ লাগবে না।

১৭. ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার, বাজেট
* ব্যাংকিং খাতের এই বিশৃঙ্খলা এবং লুটপাটের কারণে এই খাতটি একেবারে ভেঙে পড়ার পর্যায়ে চলে এসেছে। অতি দ্রুত এখানে কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সেক্টরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।
* এই সেক্টরে লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। খেলাপি ঋণ আদায়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ঋণ আদায় করা হবে।  
* ব্যাংকগুলোকে পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হবে। এই উদ্দেশ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করা হবে।
* সরকারি মদতে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে কিছু মানুষ বিপুল পরিমাণ টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। এই লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* সঠিক ব্যবস্থা এবং প্রণোদনার মাধ্যমে শেয়ার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে শেয়ার বাজারকে তার সঠিক গতিপথে নিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা খুব দ্রুত নেয়া হবে।
* ধনী-তোষণের বাজেটের পরিবর্তে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়া হবে। নিম্ন আয়ের মানুষদের সুরক্ষা দেয়ার প্রয়োজনে জাতীয় বাজেটে পরোক্ষ করের (ভ্যাট, সম্পূরক কর) হিস্যার পরিমাণ কমানো হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাজেটে আয়করের হিস্যা ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে।
* আয়কর দেয়ার পদ্ধতি আরো সহজ করা হবে। করযোগ্য ন্যূনতম আয়ের সীমা বাড়ানো হবে। পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের মানুষদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
* সম্পত্তি করকে যৌক্তিক করায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* বাজেট এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানুষের মাথাপিছু ঋণ কমিয়ে আনার জন্য বাজেটে ব্যবস্থা থাকবে।

১৮. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
* বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করার নামে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বছরের পর বছর চালিয়ে মানুষকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল দামে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব পাবার সাথে সাথে অতি ত্বরিতগতিতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইনডেমনিটি বাতিল করে এই খাতের সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেসরকারি খাত থেকে সকল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রিভিউ করে মূল্য যৌক্তিক করা হবে।
* কয়লা এবং গ্যাসভিত্তিক বৃহদায়তনের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং গ্যাসভিত্তিক বর্তমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওভারহোলিং করে সেগুলো সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ৩ বছরের মধ্যে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে। এতে বিদ্যুতের দাম সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে।
* সস্তা দামে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার আগে বিদ্যমান অবস্থায়ও প্রথম বছরে সকল গ্রাহকের জন্য বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের দাম বাড়বে না। সর্বোচ্চ ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের মূল্য আগামী পাঁচ বছরে বাড়বে না।
* গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং দেশের সকল সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালকে বাণিজ্যিক দামের পরিবর্তে হ্রাসকৃত বাসস্থানের দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
* পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
* ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বিদ্যুৎখাতে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে।
* স্থলভাগ এবং সমুদ্রসীমায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধান করা হবে। খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানি ও সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানিকে একীভূত করে প্রয়োজনীয় মূলধন যোগান দিয়ে জাতীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করা হবে। এই কোম্পানির সরবরাহের দর হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রতিযোগিতামূলক।
* বিইআরসি-এর পরিচালক নিয়োগের পূর্বে তাদের তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে এবং ভোক্তাদেরও দুইজন প্রতিনিধি বিইআরসি-এর পরিচালকের পদে নির্বাচিত হবেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সকল উৎপাদন ও আমদানি ব্যয় বিস্তারিতভাবে বিইআরসি-এর গণশুনানিতে উপস্থাপিত হবে।  
* নবায়নযোগ্য জ্বালানি সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ ইত্যাদিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নতুন জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করা হবে।

১৯. সামাজিক নিরাপত্তা
* গত দশ বছরে সরকারের নীতির কারণে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর বৈষম্য দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে অনেক বেশি শক্তিশালী করা হবে।
* এই খাতে জিডিপি’র অনুপাতে বাজেট আগামী ৫ বছরে ধাপে ধাপে বর্তমানের ৩ গুণ করা হবে।
* অতি দরিদ্র এবং দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে।
* বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতার পরিমাণ এবং আওতা বাড়ানো হবে।
* শ্রমিক ও ক্ষেতমজুরসহ গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভমূল্যে রেশনিং চালু করা হবে।
* পুনর্বাসন ছাড়া শহরের বস্তিবাসী ও হকারদের উচ্ছেদ করা হবে না। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাড়ার মাস্তান এবং পুলিশের চাঁদা আদায় করা সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে।
* শহরাঞ্চলে গরিব মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে বসবাসের জন্য সরকারি উদ্যোগে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে।
* হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
* বেদে এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
* শারীরিকভাবে সক্ষম ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ভিক্ষুকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ভিক্ষাবৃত্তিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া হবে।
* ছিন্নমূল শিশুদের কল্যাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

২০. বয়োবৃদ্ধ
* (৬৫ ঊর্ধ্ব) সকল বয়োবৃদ্ধ অর্ধেক দামে সকল যানবাহনের ভ্রমণের সুবিধা পাবেন। বিনা ফি-তে তারা পার্ক, চিড়িয়াখানা, চিত্রশালা, জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারবেন।
* শিক্ষিত বয়োবৃদ্ধদের জন্য ন্যূনতম ভাতা রেখে অবৈতনিক খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান হবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং সামাজিক মূল্যবোধের উন্নতির নিমিত্তে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায়। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুলে তারা পরীক্ষকের দায়িত্বও পালন করবেন।
* সকল বয়োবৃদ্ধ মাসিক ২০০ টাকায় জাতীয় স্বাস্থ্যবীমার আওতায় শুধুমাত্র ওষুধ ছাড়া অন্য সব চিকিৎসা ও পরিসেবা বিনা খরচে পাবেন। তারা ওষুধ পাবেন অর্ধেক দামে।
* সারা দেশে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বৃদ্ধনিবাস নির্মাণ করা হবে এবং স্থানীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এগুলো পরিচালিত হবে। বয়োবৃদ্ধদের নিজ পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে রেখে জীবনযাপনের জন্যও উৎসাহিত করা হবে।
* বেসরকারি চাকরিজীবীদের অবসর ভাতা দেয়া হবে। আয়কর প্রদানকারী সকল নাগরিক তাদের প্রদত্ত আয়করের এক-তৃতীয়াংশ পেনশনের মাধ্যমে ফেরত পাবেন।

২১. নারীর নিরাপত্তা এবং ক্ষমতায়ন
* সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। তবে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারীদের মনোনয়ন দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে। আগামী দুই নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসন প্রত্যাহার করে সংসদে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নারীর সংখ্যা ন্যূনতম ২৫ শতাংশ উন্নীত করা হবে।
* কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সকল নারীর ওপর বাচিক কিংবা শারীরিক যৌন হয়রানি ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। যৌতুক পুরোপুরি বন্ধ করা হবে।
* কোনো বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়াই বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর বয়স ১৮ তে পুনঃনির্ধারণ করা হবে।
* সরকারি চাকরিতে যোগ্য নারীর উপযুক্ত পদে পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা হবে। নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়ানো হবে।
* সরকারি পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে। বেসরকারি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার ক্ষেত্রে খুব সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে।
* নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে।

২২. নিরাপদ সড়ক, যাতায়াত এবং পরিবহন
* কিছুদিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু-কিশোররা যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে তাদের দাবিকৃত ৯ দফা দাবির আলোকে সড়ক আইন সংশোধন করা হবে।
* নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপরে নৃশংস হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।
* বড় শহরগুলোতে ট্রাফিক জ্যাম নিরসনকল্পে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* সড়ক দুর্ঘটনা ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য সব রকম ব্যবস্থা অত্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া হবে।
* শহরে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহন নীতি প্রণয়ন করা হবে এবং মানুষের জন্য আরামদায়ক গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে।
* রেল খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সমপ্রসারণ করা হবে। ঢাকার সঙ্গে বড় শহরগুলো উচ্চ গতির ট্রেন-এর মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। দেশের সবগুলো জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। শুধু যাত্রী নয়, পণ্য পরিবহনেও রেল খাতকে অগ্রাধিকার দিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* দেশের নৌ-পথগুলো পুনরুদ্ধারে আইনগত এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করা হবে। চট্টগ্রাম, মোংলা এবং পায়রাবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দ্রুত প্রকল্প নেয়া হবে।  
* বাংলাদেশ বিমানকে সমপ্রসারণ এবং লাভজনক করে তোলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেসরকারি বিমান সংস্থা প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনাকে উৎসাহ দেয়া হবে। ঢাকায় নতুন কোনো বিমানবন্দর স্থাপন করা হবে না। নতুন রানওয়ে, নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করে বর্তমান বিমানবন্দরটিকে ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী করে তোলা হবে।

২৩. প্রবাসী কল্যাণ
* প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।
* সকল দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে।
* দূতাবাসে প্রবাসী কর্মীদের প্রতি কোনো ধরনের অসহযোগিতার অভিযোগ পেলে সেটার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* অদক্ষ শ্রমিকের জায়গায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো হবে।
* প্রবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে আসার পর তাদেরকে বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
* প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়া হবে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো হবে।
* ইউরোপ, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শ্রমশক্তির রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা হবে।
* মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে মরদেহ সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে আনা হবে এবং বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে।
* বিদেশে বসবাসকারী অসাধারণ ক্যারিয়ারের মানুষদের দেশে কাজ করতে উৎসাহিত করা হবে। সেই ক্ষেত্রে তাদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

২৪. গণমাধ্যম
* একটি স্বাধীন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে সকল প্রকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।
* সাংবাদিকদের মজুরি বোর্ড নিয়মিত করা হবে।
* ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমকে উৎসাহিত করা হবে। এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
* ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণের জন্য নতুন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হবে।
* সংবাদপত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হবে এবং এতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হবে।
* সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হবে।
* সামপ্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ সকল ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক নিগ্রহের বিচার হবে।
* কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়া হবে।

২৫. ডিজিটাল প্রযুক্তি
* মোবাইলের কলরেট কমানো হবে।
* মোবাইলের ইন্টারনেট-এর খরচ কমানো হবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি নিশ্চিত করতে মোবাইল অপারেটরদের বাধ্য করা হবে।
* দেশের বিভিন্ন গণজমায়েত এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিনামূল্যে ওয়াইফাই-এর ব্যবস্থা করা হবে।
* সারা দেশে আরো আইটি পার্ক স্থাপন করা হবে।
* সারা দেশের ভূমি রেকর্ড পুরোপুরি ডিজিটাল করা হবে।
* ই-গভর্নেন্স-এর ব্যাপ্তি বাড়ানো হবে।
* কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি ইত্যাদি ভিত্তিক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে এবং প্রয়োজনীয় কর্মী প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।
* সঠিক কক্ষপথে নতুন স্যাটেলাইট প্রেরণ করা হবে।

২৬. সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ
* সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ-এর প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে।
* জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এসব বিষয়ে ছাত্রদের শিক্ষা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সমাজের সব শ্রেণির জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের আলেম-ওলামাদের দ্বারা মোটিভেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে।

২৭. ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
* সংখ্যালঘুদের মানবিক মর্যাদা অধিকার নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
* সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ন্যূনতম ঘাটতি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো রকম হামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
* পাহাড় এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংস্কৃতি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।
* ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা হবে।

২৮. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
* দেশের ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে রাজনীতির বাইরে পেশাগতভাবে গড়ে তোলা হবে।
* ক্রিকেটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত ফুটবলকে আবার তার পুরনো মর্যাদায় ফিরিয়ে আনা হবে। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে থানা পর্যায় পর্যন্ত ফুটবল লীগ আয়োজিত হবে। স্কুলে ফুটবলের চর্চা বাড়ানো হবে।
* সারা দেশের স্টেডিয়ামগুলোকে খেলার উপযোগী করা হবে এবং নতুন খেলার মাঠ এবং স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে।
* শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ক্রীড়া সংগঠনগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে ক্রীড়া সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হবে। বিভিন্ন খেলায় নারীদের অংশগ্রহণ ও উৎসাহ দেয়ার জন্য মোটিভেশন কর্মসূচি নেয়া হবে।
* বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ইত্যাদি বিষয়ে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে। সরকারি অনুদানে আরো বেশি স্বল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র তৈরি করা হবে।
* সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে সারা দেশের জেলা এবং থানা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
* ভিন দেশীয় ক্ষতিকর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে নাগরিকদের রক্ষা করায় দৃঢ় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা এবং প্রসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

২৯. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
* গত ১০ বছর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কোনো গুরুত্বই আমরা দেখতে পাইনি। বাংলাদেশের মতো এত ক্ষুদ্র আয়তনের একটা দেশে এত বড় জনসংখ্যা আমাদের অসংখ্য সংকটের জন্য দায়ী। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রাধিকারে পরিণত করা হবে।

৩০. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ
* বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সেসব দেশের উপর সবচেয়ে বেশি পড়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
*বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধকল্পে বাংলাদেশ আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
*জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করার জন্য বাংলাদেশে আরো অনেক বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে এবং সেটা সদ্ব্যবহার করবে।
* দেশের প্রাকৃতিক বন রক্ষার সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি আরো বড় পরিসরে চালানো হবে।
* পরিবেশ দূষণকারী কোনো শিল্প-কারখানা চলতে দেয়া হবে না। এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়া কোনো শিল্প- কারখানা কাজ শুরু করতে পারবে না।
* নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিয়ে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ কমানো হবে।
* শহরে গাড়ির হর্ন এবং অন্যান্য তীব্র শব্দের কারণে সৃষ্ট শব্দ দূষণ কঠোর হস্তে কমানো হবে।
* শহরের বর্জ্য বিশেষ করে হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত করা হবে।

৩১. বর্তমান সরকারের সময়ের উন্নয়ন প্রকল্প
* বর্তমানে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না, তবে বর্তমান সরকারের শেষ দুই বছরে তড়িঘড়ি করে নেয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। বর্তমানে চালু থাকা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* খুব ভালো অর্থনৈতিক উপযোগিতা ছাড়া বৈদেশিক ঋণ নির্ভর কোনো প্রকল্প গৃহীত হবে না।

৩২. মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা
* যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে।
* মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা হবে।
* সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
* মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’দের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
* মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।

৩৩. প্রতিরক্ষা
* রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করা হবে।
* সকল বিতর্ক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে একটি দক্ষ এবং পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা বিষয়েই ডিজিএফআই-এর কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ থাকবে। ডিজিএফআই, এনএসআই, এসএসএফ কোনো রকম রাজনৈতিক বিষয়ে যুক্ত হবে না, কিংবা হস্তক্ষেপ করবে না।  
* প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র এবং অন্যান্য সব সরঞ্জাম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেনা হবে।
* জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ এর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে।
* সশস্ত্র বাহিনী দিবসের রিসেপশন ক্যান্টনমেন্টের বাইরে শহরের নানা স্থানে আয়োজন করা হবে যেন সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারে।  
* সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

৩৪. পররাষ্ট্রনীতি
* ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিতে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হবে।
* সার্ক সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক জোট সমূহ আরো শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখা হবে।
* সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী করায় পদক্ষেপ নেয়া হবে। সকল ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে।
* নিকটতম অন্যতম প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
* চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর যে সব প্রকল্প দেশের জন্য লাভজনক বিবেচিত হবে সেগুলোতে বাংলাদেশ যুক্ত হবে।
* মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা নীতির ভিত্তিতে সম্পর্ক উন্নয়ন করা হবে।
* তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যা সহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা হবে।


৩৫. অন্যান্যঃ
* দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরো শক্তিশালী করা হবে। সম্ভাব্য ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দ্রুত সংগ্রহ করা হবে।
* দেশের নানা প্রান্তে নতুন নতুন খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং বর্তমানে প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে উত্তোলন করা হবে।
* বঙ্গোপসাগরে নতুন ভূমি উদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান

প্রিয় দেশবাসী
দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন এখনো খুব গুরুতরভাবেই আছে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের নানা রকম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আমাদের সে ব্যাপারে খুব বেশি আশান্বিত হতে দেয় না।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন নামে যে প্রহসনটি হয়েছিল সেটা সংবিধানে বর্ণিত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিকানা হারিয়েছে। জনগণ যখন রাষ্ট্রের মালিক থাকে না তখন রাষ্ট্রের মালিক হয়ে পড়ে কায়েমী স্বার্থবাদী দেশি-বিদেশি নানা গোষ্ঠী। এর মাশুল দিতে হয়েছে এ দেশের মানুষকে। এই রাষ্ট্রটি মানুষের জন্য একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে কিনা, সেটা নিশ্চিত হবে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যদি এই রাষ্ট্র্র জনগণের হাতে আবার ফেরত যায়। জনগণের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ তখনই নিশ্চিত হতে পারে যখন সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই রাষ্ট্রের জনগণই আবার এই রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরত পাবে।

বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরের (বিশেষ করে গত ৫ বছরের) অপশাসন এই রাষ্ট্রটিকে একেবারে ধ্বংস হওয়ার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিসহ নানান রকম সমস্যা সৃষ্টি করে, সর্বোচ্চ বিচারালয়সহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রটিকে একটি প্রায় টোটালিটারিয়ান রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। ক্ষমতায় এসে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও এই ভঙ্‌গুর রাষ্ট্রব্যবস্থাটিকে ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন কাজ হবে। এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সজাগ আছে। জনগণের কল্যাণ করার ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং সে অনুযায়ী পরিশ্রম করার প্রতিজ্ঞা জাতীয় ফ্রন্টকে সেই চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে সাহায্য করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সামপ্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও বলতে চাই এই রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন। দীর্ঘ ১০ বছরের অপশাসনে ভেঙে পড়া রাষ্ট্রব্যবস্থাটি মেরামত করে বাংলাদেশকে সত্যিকারের উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার যে সংগ্রাম সামনে আছে সেটির যাত্রা শুরু হবে আগামী সাধারণ নির্বাচনের দিন, ৩০শে ডিসেম্বর। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিশ্বাস করে, সেদিন দলে দলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে, ভোট দেবে, ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করে ভোটের অনিয়ম রুখবে, ভোট শেষ হওয়ার পর নিজেদের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া দেখে বাসায় ফিরবে। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এক গণঅভ্যুত্থানের দিন হবে ৩০শে ডিসেম্বর।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status