দেশ বিদেশ

কুমিল্লার মামলায় জামিন বহাল

খালেদা জিয়ার রিটে অনাস্থার লিখিত আবেদন আজ

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

প্রার্থিতা ফিরে পেতে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা তিনটি রিটে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানানোর বিষয়ে আজ হলফনামা (এফিডেভিট) আকারে আবেদন করা হবে। হলফনামা না করায় আইনজীবীদের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আদালত।
গতকাল দুপুরে বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল লিখিত অনাস্থা জানানোর জন্য সময় চেয়ে বলেন, আমরা এফিডেভিট করতে পারিনি। কারণ এফিডেভিট কমিশনারদের একটি সভা চলছিল। তাই আমার লিখিত অনাস্থার বিষয়টি এফিডেভিট করে কাল সকালের মধ্যে দেব। এরপর আদালত কাল সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর আগে সকালে এফিডেভিট করার বিষয়টি জানিয়ে সময় চাইলে বেলা দুইটা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
গত বৃহস্পতিবার একই বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী মৌখিকভাবে অনাস্থার বিষয়টি জানান। তখন আদালত অনাস্থার বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে বলে সোমবার পর্যন্ত মুলতবি রাখেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এএইচএম কামরুজ্জামান মামুন, সালমা সুলতানা সোমা প্রমুখ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, এফিডেভিট কমিশনারদের সভা থাকায় এটি সম্পন্ন করা যায়নি। আজ হলফনামা শেষ করে এটি দাখিল করা হবে।
অনাস্থার যুক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন যেহেতু হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ বিচারপতি স্থগিতাদেশ ও রুল জারি করেছেন সেহেতু অপর কোনো জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির বেঞ্চে এটির শুনানি হতে হবে।
গত ১২ই ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার তিনটি রিটের বিভক্ত আদেশটি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চে পাঠান প্রধান বিচারপতি। আগের দিন খালেদা জিয়ার এ রিট আবেদনে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বৈধ হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিলেও অপর বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেন। এর প্রেক্ষিতে আদালত পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়।
গত ৮ই ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে অপর তিন কমিশনার মনোনয়ন বাতিলের পক্ষে রায় দিলেও কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার মনোনয়ন বহালের পক্ষে রায় দেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। গত ৯ই ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত ও আপিলে নির্বাচন কমিশনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেন তার আইনজীবীরা।
কুমিল্লার মামলায় জামিন বহাল: ওদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা নাশকতার মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রয়েছে আপিল বিভাগে। জামিনের বিরুদ্ধে সরকারের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতির আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ।
এর আগে গত ৬ই ডিসেম্বর জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনে স্থগিতাদেশ না দিয়ে ১৩ই ডিসেম্বরের মধ্যে লিভ টু আপিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে লিভ টু আপিল করে সরকার। এরপরও শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ হলো গতকাল।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
গত ২৮শে নভেম্বর কুমিল্লার এ মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ। এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে চেম্বার জজ আদালত জামিন স্থগিত না করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
এর আগে গত ১৩ই সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেএম সামছুল আলম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১৪ই অক্টোবর খালেদা জিয়ার পক্ষে আবেদন যথাযথ হয়নি উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল আপত্তি দিলে আদালত যথাযথ প্রক্রিয়ায় আপিল করার নির্দেশ দেন। পরের দিন ১৫ই অক্টোবর খালেদা জিয়ার পক্ষে এ আপিল করেন তার আইনজীবীরা।
২০১৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার হায়দারপুল এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরের দিন অর্থাৎ ২৬শে জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ ২০ দলীয় জোটের স্থানীয় ৩২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এই মামলা করেন। মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status