খেলা

ভুলে ভুলে উড়ে গেল বাংলাদেশ

ইশতিয়াক পারভেজ

১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

শেরডন কটরেল একাই ধসিয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। ২৮ রানের ৪ উইকেটে নেন এই পেসার

টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাজে হার! ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমন সময় আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ সফরে এসে। বাকি ছিল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের মান বাঁচানো। চারদিকে সমালোচনার ঝড় ক্যারিবীয় ক্রিকেটের বেহাল দশা নিয়ে। অন্যদিকে প্রশংসার মুকুট পরেছিল টাইগাররা। এককথায় সাফল্যের আকাশেই উড়ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুতেই মাটিতে পতন। ব্যাটিং ভুল! বোলিংয়েও ভুল! টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে এক ওভার বাকি থাকতেই ১২৯ রানে অলআউট হয় সাকিবের দল। অধিনায়কের লড়াকু ৬১ রানের ইনিংস। এছাড়া বাজে ব্যাটিংয়ের মহড়াতে কেবল দুই ব্যাটসম্যানই ছুঁয়েছেন দুই অংক। আর বল হাতে নেমে মাত্র ১০.৫ ওভারেই হার নিশ্চিত। ৫৫ বল বাকি রেখেই ২ উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয়রা পৌঁছায় জয়ের বন্দরে। এতে রচিত হয় রেকর্ড আর লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে। যেখানে ১-০তে পিছিয়ে থেকে সিরিজ বাঁচাতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।  
সিলেটে সবকিছুই ছিল বাংলাদেশ দলের অনুকূলে। সময় পরিবর্তন হওয়াতে রাতের শিশিরের ভয় ছিল না। ব্যাটিং উইকেটে টসেও জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হয়নি ভালো ব্যাটিং। দুই দলের ব্যাটিংয়ের পার্থক্য স্পষ্ট। ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের দুই ওপেনারের জুটিতে ১.৪ ওভারে এসেছে ১১ রান। সেখানে প্রতিপক্ষের ওপেনাররা মাত্র ৩.২ ওভারে গড়েন ৫১ রানের জুটি। সাকিবের দল ১০.২ ওভারে ৫ উইকেট হারায় ৭৩ রানে। আর ১০.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয়রা জয় নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের ইনিংসে সব মিলিয়ে ৬ এর মার ২টি আর চারের মার ১৩টি। সেখানে ক্যারিবীয়দের ইনিংসে ৬ এর মার ৯টি যার ৬টি হাঁকিয়েছেন একাই শেই হোপ। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা শুরু থেকেই সতর্ক করেছিলেন টাইগারদের। বলেছিলেন, ‘ফরম্যাট যত ছোট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ততোই ভালো দল।’ যার প্রমাণ সিলেটেই আরো একবার মিলেছে দারুণভাবে। পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলে ফেলে ১ উইকেটে ৯১ রান। টি-টোয়েন্টিতে যা সর্বোচ্চ।
অধিক বল রেখে টি-টোয়েন্টিতে জেতার এটি ১৪তম ঘটনা। সর্বোচ্চ ৯০ বল বাকি রেখে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ১০০’র বেশি তার রান তাড়া করে অধিক বল অবশিষ্ট রেখে জেতার ক্ষেত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই জয়টি দ্বিতীয়। এর আগে নিউজিল্যান্ড ১৪৩ রান তাড়া করে জিতেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬০ বল বাকি রেখে।
গতকাল ১৩০ রানের লক্ষ্য মামুলি বানিয়ে দেয়ার ঝড়টা শুরু হয় মেহেদী হাসান মিরাজের করা দ্বিতীয় ওভারে। শেই হোপ তিন ছক্কা হাঁকিয়ে এই  অফস্পিনারের ওভার থেকে  নেন ২৩ রান। তার আগে দুই বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার ও মোস্তাফিজুর একটি করে ওভারে দেন ১৫ রান। আরেক পেসার সাইফউদ্দিন ১৩ রান দিয়ে বিদায় করেন এভিন লুইসকে।  এরপর  ফের হোপের ঝড়ের মুখে পড়েন মিরাজ। এক ৪ ও দুই ৬-এ তুলে নেন ১৮ রান।  সেই সুবাদে ১৬ বলে হোপ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। টি-টোয়েন্টিতে ক্রিস গেইলের ১৭ বলের রেকর্ড ভেঙে এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্রুততম ফিফটি। অন্যদিকে সব মিলিয়ে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি এটি।  তাকে থামান মাহমুদুল্লাহ। তারপরও ঝড় থামেনি। ১৪ বলে তিন ৬ আর এক চারে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান কিমো পল। ১৭ বলে তিন চারে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন নিকোলাস পুরান।
এর আগে তামিম ইককাল ৫, তার চেয়ে এক রান বেশি করলেন লিটন দাস। সৌম্য যেন এ দেখে অনুপ্রাণিত, তিনিও ৫ রানে বিদায় নিলেন। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানই জীবন দিয়েছেন উচ্চাভিলাষী শটে। তিনজনই আউট হয়েছেন শট বলে পুল করতে গিয়ে। সেখান থেকেই লড়াই শুরু করণে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শুরুতেই সঙ্গী পেলেন মুশফিকুর রহীমকে। কিন্তু বিপদে মাথা বিগড়ে গেলে যা হয়! ব্যক্তিগত ৫ রানে রানআউট মুশফিক। এবার সাকিবের সঙ্গে দলের বিপর্যয় বাঁচাতে লড়াই শুরু করলেন মাহমুদুল্লাহ। আশাও জাগিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের জুটি ভাঙে ২৫ রানে। ১৯ বলে ১ চারে ১২ রান করে সহ-অধিনায়ক কট বিহাইন্ড হন বলের গতিতে পরাস্ত হয়ে। এরপর দলের সবচেয়ে বড় ৩০ রানের জুটি আসে আরিফুল হক ও সাকিবের লড়াইয়ে। দলের  বিপর্যয়ে আরিফুলের অবদান ১৭ রানের। তবে স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে সুইপ খেলে আউট হন আরিফুল। টেস্ট ও ওয়ানডেতে দলের সঙ্গে থাকলেও একাদশে সুযোগই পাচ্ছিলেন না এই অলরাউন্ডার। তরুণ পেস অলরাউন্ডার সাইফ উদ্দিনও ব্যর্থ ১ রানে আউট হয়ে। আর দারুণ এক বলে টাইগার অধিনায়কের প্রতিরোধ ভাঙেন কটরেল। তবে অধিনায়কের ৬১ রানের ইনিংসটাই দলের মান বাঁচানোর প্রতীক হয়ে থাকে। ৪৩ বলে ৮ চার ও দুই ছক্কা হাঁকান সাকিব। তার বিদায়ের পর বাকি দুই ব্যাটসম্যান যোগ করেন মাত্র ৭ রান। টাইগারদের ইনিংস শেষ হয় ৬ বল বাকি থাকতেই।  তামিমকে দিয়ে শুরু বাঁহাতি পেসার কটরেলের। এরপর ২৮ রানে  নেন সব মিলিয়ে ৪ উইকেট। কিমো পল ২ উইকেট নেন ২৩ রানে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status