দেশ বিদেশ

বিজয় দিবসে দেশ গড়ার দৃপ্ত শপথ

শাহনেওয়াজ বাবলু ও হাফিজ উদ্দিন, সাভার থেকে

১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

ছবিঃ জীবন আহমেদ

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকীতে গতকাল বীর শহীদদের প্রতি লাখো জনতার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সকাল থেকে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ-বেরঙের ফুল নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন লাখো জনতা। সাধারণ মানুষ তাদের হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ জাতির সূর্য সন্তানদের। সকাল থেকে দিনভর চলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন।

সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। তখন তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাদের সালাম জানায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দলের শীর্ষ নেতা, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান ও দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়ে আবারো বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

সকাল সোয়া নয়টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ফুল দেন নেতারা। প্রায় ১০টার দিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। পরে সংবিধান প্রণেতা ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে তবে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা পেয়েছি মুক্তির জন্য কিন্তু এখনো আমাদের সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে আরো সংগ্রাম করে যেতে হবে। গণতন্ত্র আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যকে আরো সংহত করেছি। যে ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, যেকোনো কিছুর বিনিময়ে এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ লোক জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আজকে বিজয়ের দিনে এখানে এসে তাদের স্মরণ করা উচিত। সেই স্বাধীনতাকে আমরা যেন সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি-বিজয়ের মাসে এটাই আমাদের শপথ হওয়া উচিত। জীবন দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন তারা দেখেছিল যে স্বপ্ন তারা দেখতো- দেশে গণতন্ত্র থাকবে, আইনের শাসন থাকবে, মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে চলাফেরা করবে, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদসহ সংবিধানের চার মূলনীতি অনুযায়ী দেশকে পরিচালনা করতে হবে। কোনো ধরনের সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও লাঠিয়ালদের তাণ্ডব মেনে নেয়া যায় না। যারা রুগ্ন রাজনীতি করে, কালো টাকা ব্যবহার করে, লাঠিয়াল ব্যবহার করে, যারা জনগণকে মর্যাদা দেয় না, তাদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ও মূল্যবোধসহ সব কিছু রক্ষা করবো। এটা আমরা বিশ্বাস করি। ইনশাআল্লাহ ঐক্যবদ্ধ জনগণের বিজয় অনিবার্য।

মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিজয়ের মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। এই নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার জন্য বিরোধীদের ওপর সরকার সাংঘাতিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। প্রহসনে পরিণত করতে প্রতিনিয়ত বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে, হামলা করা হচ্ছে, গুলি চালানো হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। আগামী ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশের প্রত্যাশা করা হয়েছিল, বিএনপি তা পায়নি বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, সরকার যখন বিরোধীদের ওপর নিপীড়নে ‘অগ্রণী ভূমিকা’ পালন করছে, তখন নির্বাচন কমিশন তাদের ‘অদক্ষতার’ পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান আমাদের গণতন্ত্র বঞ্চিত করেছিল। গণতন্ত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আজকেও গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য আমাদের সংগ্রম চলেছে, চলবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতেও আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। একে একে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বীর শহীদদের স্মরণে শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। একাত্তরের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো ফুলের তোরণে ভরে উঠে স্মৃতিসৌধের বেদি। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয়  বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেডিসি), সোনালী ব্যাংক, সচেতন নাগরিক কমিটি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জনসেবা পার্টি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিট, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সাভার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, সাভার প্রেস ক্লাব, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজয় দিবসে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। বিকালে বঙ্গভবনে সংবর্ধনার আয়োজন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতিসহ রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনেরা এতে অংশ নেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status