এক্সক্লুসিভ

চট্টগ্রামে বেকায়দায় বিএনপি প্রার্থীরা গ্রেপ্তারে আতঙ্ক

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে চট্টগ্রামে বিএনপি জোটের প্রার্থী, প্রার্থীর স্বজন ও অনুসারী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি, বোমা ও ধারালো অস্ত্রের হামলা বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রচারণা থেকে একের পর এক গ্রেপ্তারের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পুলিশ। এতে চরম বেকায়দায় রয়েছে চট্টগ্রামের সবকটি আসনের বিএনপি প্রার্থীরা। প্রার্থীরা জানান, গত তিন-চার দিনে চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনটি ও উপজেলার ৮টি আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী ও প্রার্থীদের স্বজন এবং অনুসারী নেতাকর্মীদের উপর হামলা হয়েছে। কোথাও কোথাও গুলি, ককটেল নিক্ষেপসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে। ১৬ আসনের সবকটি প্রচারণার মাঠ থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশের ধাওয়ায় শনিবার রাতে নগরীর ইপিজেড এলাকায় এক ছাত্রদলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।  
 
এর মধ্যে গত ১০ বছরে দায়ের করা মিথ্যা নাশকতাসহ বিভিন্ন গায়েবি মামলায় জামিনে থাকা নেতাকর্মী যেমন রয়েছে তেমনি মামলা নেই এমন নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো কোনো আসনে প্রচারণায় না নামার জন্য আগেভাগে হুমকি দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর অনুসারীদের কাছ থেকে। প্রচারণায় নামলে গ্রেপ্তারের হুমকিও দিচ্ছে পুলিশ। এমতাবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চট্টগ্রাম-৮ বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনে বিএনপির প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এ ব্লকের ১ নম্বর সড়কে অবস্থিত বাড়ি লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ও কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে মহাজোটের প্রার্থী মইনুদ্দিন খান বাদলের অনুসারীরা। এ সময় বাড়ির ভেতরে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত ছিল অনেকে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ধাওয়া দিলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এতে কেউ হতাহত হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল বাশার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছিলাম। তাদের পক্ষ থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর দাবি করা হলেও তেমন কিছু ঘটেছে বলে মনে হয় না। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। তবুও কে বা কারা হামলা চালিয়েছে আমরা তা তদন্ত করে দেখছি।

এদিকে চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আসনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রার্থী কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের ছেলে ওমর ফারুক সনির (৪০) ওপর শনিবার বিকালে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অনুসারীরা।

হামলাকারীরা এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওমর ফারুক সনির বাম হাতের আঙুল কেটে নেয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করে। এ সময় ওমর ফারক সনির সঙ্গে থাকা কেওচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ, বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম ও আব্দুল গফুরসহ ১০ জন আহত হন। ওমর ফারুক সনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর বর্তমানে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানান কর্নেল অলির নির্বাচনী মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক মো. জসিম উদ্দিন।

এই ঘটনা সম্পর্কেও কিছুই জানে না বলে জানান সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবির। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগও করেনি। তবে কে বা কারা হামলা চালিয়েছে আমরা তা তদন্ত করছি।

চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গা আসনেও নির্বাচনী প্রচারণার সময় বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে মহাজোটের প্রার্থী এমএ লতিফের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মহিলা দলের এক নারীনেত্রীসহ স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ৭ নেতাকর্মী আহত হন। আর পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে উল্টো বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।  
বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম ওই সময় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় বিএনপি দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানালেও হামলার বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানান।

এদিকে এ আসনের ইপিজেড থানার ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ কলেজ এলাকায় মুরাদ ভবনে শনিবার দিনগত রাতে পুলিশের ধাওয়ায় ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ছাত্রদলকর্মী রাসেলের মৃত্যু হয়। অথচ এ বিষয়েও কিছুই জানে না বলে জানান ইপিজেড থানার ওসি মীর রুহুল আমিন।  

চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনের বিএনপি জোটের প্রার্থী নুরুল আলম জানান, শনিবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগেভাগে খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান মাহমুদের অনুসারী দুষ্কৃতকারীরা লাঠি-সোটা নিয়ে অবস্থান নেন। এমনকি প্রচারণা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশও অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওই এলাকায় প্রচারণা এড়িয়ে যায়।  

চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনের বিএনপির প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী জানান, প্রচারণার মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর অনুসারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার হুমকি দিলেও পুলিশ কিছুই করছে না, বরং গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বাড়িতে আয়োজিত মতবিনিময় সভা থেকে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চেয়েছিলাম। কমিশন সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির প্রার্থী, প্রার্থীর স্বজন ও অনুসারী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি-বোমা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করেই চলেছে। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের সবকটিতে হামলা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status