প্রথম পাতা

বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় বাধা, হামলা

সিরাজগঞ্জে পুলিশের গুলিতে বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদ আহত

বাংলারজমিন ডেস্ক

১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল এসব হামলা, সংঘর্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে।

প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এমনকি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এক কর্মীকেও রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে পুলিশের গুলিতে বিএনপির প্রার্থী রোমানা মাহমুদসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক নারী কর্মীর দুই চোখ গুলিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিএনপি প্রার্থীর প্রচারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

সিরাজগঞ্জে পুলিশের গুলিতে বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদসহ আহত ২০: সিরাজগঞ্জ শহরে পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী রুমানা মাহমুদসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় রুমানা মাহমুদের পিঠে, পায়ে ও হাতে গুলির স্প্লিন্টার লেগেছে। এছাড়া গুলিতে শহর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেরিনার দু’চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অন্তত ৭ জন পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলের আঘাতে আহত হয়েছেন। শহরের কলেজ রোড ও বিএনপি কার্যালয়ে সামনে মাগরিবের নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রুমানা মাহমুদ সন্ধ্যার পর শহরে গণসংযোগের জন্য জেলা বিএনপি কার্যালয়ে যান। সেখানে আগে থেকে বিএনপি ও অঙ্গদলের হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। ধানের শীষের প্রার্থীসহ নেতাকর্মীরা যখন গণসংযোগে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন ১০-১২টি মোটরসাইকেলে করে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহড়া দেয়। মাগরিবের পর একপর্যায়ে তারা জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দুইটি ককটেল ছুঁড়ে। এ সময় বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকরা তাদের ধাওয়া দেয়। টুকু জানান, পরমুহূর্তে সেখানে পুলিশ আসে এবং বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ।

একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। টুকু জানান, পুলিশের ছোড়া গুলির কয়েকটি স্প্লিন্টার ধানের শীষের প্রার্থী রুমানা মাহমুদের শরীরে বিদ্ধ হয়। চিকিৎসকরা তার পিঠ, পা ও হাত থেকে বেশ কয়েকটি স্প্রিন্টার বের করেন। এছাড়া পুলিশের ছোড়া গুলির স্প্লিন্টারে দুই চোখে বিদ্ধ হয়েছে এক মহিলা দল নেত্রীর। সিরাজগঞ্জ পৌর কমিশনার হেলেনার গলায়, জেলা ছাত্রদল সভাপতির গলায়, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ সুইটের মাথায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশে রুমানা মাহমুদের হোসেনপুরের বাসার সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়া হবে-এমন সংবাদ পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে গিয়ে মহড়া দিতে থাকে।

বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হলে পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার পর আমরা কলেজ রোড দিয়ে মিছিল নিয়ে মোড়ে যাওয়ার পরই পুলিশ টিয়ার শেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে বাবার বুলেটের আঘাতে বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদ আহত হন এবং গুলি লেগে মেরিনা নামে এক মহিলা নেত্রীর দু’চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও দলের আরও অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ জানান, পুলিশ টহল দেয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা চালায়। এ সময় রাবার বুলেট টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। হামলায় পুলিশের একটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

মুরাদনগরে বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা: কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির প্রার্থী কেএম মুজিবুল হকের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। এতে অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। হামলার দৃশ্য ধারণ করার সময় চ্যানেল ২৪ ও ভোরের পাতার দুই সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের কর্র্মীদের দায়ী করেছেন বিএনপির প্রার্থী কেএম মুজিবুল হক।  

হামলার পর বিএনপির প্রার্থী কেএম মুজিবুল হক উপজেলা সদরের তার বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, প্রচারণাকালে বিকাল ৫টার দিকে গাড়ি নিয়ে উপজেলা সদরের থানার সামনে পৌঁছার পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা লাঠি-সোটা, ইটপাটকেল ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। গাড়ি ভাঙচুর করে।

মুরাদনগর থানার ওসি কেএম মঞ্জুর আলম জানান, উপজেলা সদরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকার পরও উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন জানান, যারা হামলা করেছে তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, বহিরাগত কেউ হতে পারে।  

হাতিয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দরবেশপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের ৫০ জন আহত হন।  নোয়াখালী-৬ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম জানান, তিনি বৃহস্পতিবার বিকালের পর গাড়িবহর নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা চানন্দী ইউনিয়নের দরবেশ বাজারে গণসংযোগ করতে যান। এ সময় সন্ত্রাসীরা তার গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে প্রায় ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আয়েশা ফেরদৌস অভিযোগ করেন, বিএনপি প্রার্থীর উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে বিএনপির লোকজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপি প্রার্থীর উপস্থিতিতে আল-আমিন বাজারে নৌকার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করার সূত্র ধরে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একই কথা বলেন পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরিফ। তিনি জানান, ফজলুল আজিম গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় বলে জানান এসপি। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির ১০৭ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের চানন্দী ইউনিয়নের নেতা বেলাল হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন বলে জানান হাতিয়া থানার ওসি কামরুজ্জামান শিকদার।

কলারোয়ায় বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা: সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিবের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায়  বিএনপি প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমানসহ ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয় দুই সাংবাদিককে মারধর করে আহত করা হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলারোয়া পৌর সদরের শহীদ মিনার এলাকায় এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় আরো আহত হয়েছেন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম চন্দন, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তাওফিকুর রহমান সঞ্জু, পৌর কৃষক দলের সভাপতি বিএম সিরাজ, বিএনপি কর্মি রুহুল আমিন রুবেল ও উপজেলা যুবদল সহ-সভাপতি মোজাম হোসেন। আহতদের কলারোয়া ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত দুই সাংবাদিক হলেন, কলারোয়া দৈনিক নওয়াপাড়া পত্রিকার প্রতিনিধি তাজ উদ্দিন রিপন ও দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার হেলাতলা প্রতিনিধি ফারুক হোসেন রাজ।

আহত বিএনপি প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব সাংবাদিকদের জানান, গণসংযোগে বের হলে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, জিআই পাইপ, হকিস্টিক নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মারুফ আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

থানচিতে বিএনপির তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখম: বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম তিন্দু এবং রেমাক্রীতে বিএনপির তিন কর্মীকে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানচি উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আচু মং মারমা নামে একজনকে আটক করেছে বিজিবি। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় জেলার থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও হেডম্যান প্রেমথাং খুমী (৪০)কে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।

অপরদিকে রেমাক্রী ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপির দুই কর্মীকে কুপিয়ে আহত করেছে। আহতরা হলেন, অংসিং মারমা (২৪) এবং উক্য অং মারমা (২৭)। খবর পেয়ে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। শুত্রুবার সকালে তিন্দু ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও হেডম্যান প্রেমথাং খুমীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অধ্যাপক ওসমান গনি জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির তিন কর্মীকে গুলি করে এবং কুপিয়ে আহত করেছে।

তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাংসার ম্রো বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি। থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুচ সাত্তার বলেন, থানচির তিন্দু ও রেমাক্রীতে বিএনপির তিন কর্মীকে গুলি ও কুপিয়ে আহত করার খবর পেয়েছি। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই পুলিশকে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি।

রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ক্যাম্পে থাকা আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় কর্মী সমর্থকদের দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকরা। উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের হাটাব  জেলেপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন মোল্লা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে  বিএনপির ২০-২৫ জন কর্মী সমর্থক মুখোশ পরে ক্যাম্পটি ভাঙচুর করেছে। এ সময় বাজারের পাহারাদার এগিয়ে এলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা।

ঝিনাইদহে বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা: ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে হামলা আর পুলিশের গণগ্রেপ্তারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিএনপি। গতকাল দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হামলা ও গ্রেপ্তারের এসব তথ্য জানান ঝিনাইদহ-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার রাতে শহরের আরাপপুর রাবেয়া ক্লিনিকের সামনে থেকে শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান খান দিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ ও পৌর ছাত্রদলের সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম আকূলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

হলিধানী ইউনিয়নের শালিয়া গ্রামের কনছের আলী মণ্ডলের ছেলে আলমকে হাত পা ভেঙে দিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। গতকাল দুপুরে শহরের সৃজনী মোড়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফলসি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিম উদ্দীন ও ভায়না ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমকে নৌকার সমর্থকরা হামলা করে তাদের কুপিয়ে জখম করেছে। এ সময় তাদের দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নৌকার সমর্থকদের হাত থেকে সাংবাদিকরাও বাদ যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার ইস্তেফাপুর গ্রামের মজনুকে মরধরের সময় ছবি ওঠাতে গিয়ে হামলার শিকার হন আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সুলতান আল একরাম নামে এক সংবাদকর্মী।

বেলকুচিতে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর: সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের বেলকুচিতে আওয়ামী লীগের দুটি নির্বাচনী অফিসে হামলা, ভাঙচুর করেছে মুখোশধারীরা। আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে পৌর এলাকার মুকুন্দগাঁতী কড়ইতলা এবং এর কিছুক্ষণ পরই চালা সাতরাস্তা মোড় এলাকায় এ হামলা ও এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। মুখোশধারী বেশ কিছু লোক লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতা ও বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমিরুল ইসলাম আলিম জানান, ফায়দা লোটার জন্য নিজেরা নিজেদের অফিস ভেঙে বিএনপির ওপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।

গৌরনদীতে বিএনপির ওপর আওয়ামী লীগের হামলা:  গতকাল দুপুরে জুমার নামাজের আগে ও পরে বরিশালের গৌরনদীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপি ও ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

হামলাকারীরা এ সময় দুটি মোটরসাইকেল ও ধানের শীষের প্রচার মাইক ভাঙচুর করে। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী এম. জহির উদ্দিন স্বপন জানান, গতকাল দুপুরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার সময় উপজেলা সদরের বাদামতলা ও উপজেলার আধুনা, হোসনাবাদ, সেনের হাট এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালায় বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের ওপর। হামলায় গুরুতর আহত হন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান চোকদার, গৌরনদী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান সরদার, গৌরনদী পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বুলবুল সরদার, সরিকল ইউনিয়ন যুবদল কর্মী সোহেল আকন, আব্বাস আকন। বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার হোসনাবাদ এলাকায় ধানের শীষের প্রচারণার সময় স্থানীয় প্রচার মাইক ভাঙচুর ও বিএনপির দুই কর্মীকে আহত করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, এই অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গৌরনদী পৌরমেয়র মো. হারিছুর রহমান বলেন, ইলেকশন কমিশনের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা পেতে হামলা ভাঙচুরের কাল্পনিক অভিযোগ করেছেন জহির উদ্দিন স্বপন।

বরিশালে ইশা প্রার্থীর ওপরে আওয়ামী লীগের হামলা: হাতপাখার লিফলেট বিতরণকালে আওয়ামী লীগের হামলায় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

বরিশাল নগরীর রূপাতলী আছালত খান জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে। আহত শাকিল হোসেন ইশা ছাত্র আন্দোলন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রশিক্ষণ সম্পাদক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাকিল নামাজের পর মসজিদের বাইরে হাতপাখা প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, শায়েখে চরমোনাইর লিফলেট বিতরণ করছিলেন, এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে শেরে বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করেন। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বরিশাল-৫ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়েখে চরমোনাই। তিনি বলেন, বরিশাল ইসলামী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রখ্যাত। এখানে আমার কর্মীদের ওপর হামলার পরিণাম ভালো হবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status