প্রথম পাতা

তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কিনা, খতিয়ে দেখার তাগিদ

২০১৪ সালের আলোকে কৌশল প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার

১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

নির্বাচন নিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। একই সঙ্গে ভোটের ভাগ্য যাতে মাস্তান-সন্ত্রাসীদের হাতে চলে না যায়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন সিইসি। গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সব জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), সব জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিইসি তার বক্তব্যে দশম সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, পেছনের একটা ঘটনার রেশ টানা প্রয়োজন। সেটি হলো ২০১৪ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনার আলোকে আমাদের এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতির রূপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল। সশস্ত্র বাহিনী ছিল, পুলিশ বাহিনী ছিল, র‌্যাব ছিল, বিজিবি ছিল।

তবুও আমরা কী দেখিছিলাম! পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল, প্রিজাইডিং অফিসার নিহত হয়েছিল, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। সেটা কী প্রেক্ষিত ছিল, আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি- সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ ও প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না। তিনি আরো  বলেন, সেই অবস্থা থেকে আমাদের কীভাবে উত্তরণ করা যায়। সেরকম কোনো পাঁয়তারা যাতে না হয়। আবার যাতে সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আপনাদের (আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য) দায়িত্ব জনগণের জীবন রক্ষা করা, মালামাল রক্ষা করা, সম্পদ রক্ষা ও দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। আমি আশা করবো আপনাদের যে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্ব দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও মানসিকতা দিয়ে এবারের নির্বাচনে আমরা এসব মোকাবিলা করতে পারবো। এ বছর যেন আর সেরকম তাণ্ডব না ঘটে। সেরকম পরিস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি না হয়। এখন থেকে সেটা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেন সিইসি। কেএম নূরুল হুদা বলেন, আমরা কিন্তু আশঙ্কাগুলো একেবারেই অবহেলা করতে পারি না।

যেদিন প্রতীক বরাদ্দ হলো তার পরের দিনই দুর্ঘটনা। সে ঘটনাগুলো যত ছোটই হোক না কেন, দুটো জীবন চলে গেল। সে দুটো জীবনের মূল্য অনেক। কিন্তু কেন হলো? তারপরে এখানে ওখানে ভাঙচুর, প্রতিহত করা। এগুলোর পেছনে কি রাজনৈতিক, সামাজিক কারণ নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে কি না তা কিন্তু ভালোভাবে নজরে নিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি থাকতে হবে। তিনি বলেন, একটা ঘটনা ঘটে গেলো একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হালকাভাবে নিলে হবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সতর্ক অবস্থান নেয়ার প্রয়োজন হবে।

এর মধ্যে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি সতর্ক নজরদারি রাখার অনুরোধ করবো। সিইসি আরো বলেন, নির্বাচন নিয়ে যখন স্বতঃস্ফূর্ত জনজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তখনই খুনের ঘটনা, হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। এদেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হোক তা না চাওয়ার দলের প্রভাবশালী মহল সক্রিয় থাকতেও পারে। তাদের বিষয়ে সকলের বিশেষ করে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সমাজের সচেতন মহল ও জনগণের সচেতন থাকা প্রয়োজন। ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এবার আমরা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করতে চাই। জনগণের ভোট মাস্তানদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না।

বাক্স ছিনতাইকারীদের হাত থেকে ভোটারদের মুক্তি দিতে হবে। তার প্রথম ও প্রধান যে পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে, সে পদ্ধতির পরিবর্তে আরেকটি পদ্ধতি আনতে হবে। নির্বাচন কমিশন মনে করে ইভিএম সেরকম একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভোটারদের ভোটের নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হবে। আমরা ছয়টি এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে যাচ্ছি। সে ছয়টি এলাকায় যার যার দায়িত্ব তাদেরকে অনুরোধ করবো, সেগুলোর দিকে আলাদাভাবে দৃষ্টি দেয়া, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবেন।  ইভিএম সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এদেশের ৮০ শতাংশ অনিয়ম দূরীভূত হবে বলে বিশ্বাস করি।

সবগুলো নির্বাচন ইভিএমের আওতায় আনার একটি অভিষ্ঠ লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। ইভিএম ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কারণ বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের অনিয়ম দূর করার এটাই একমাত্র এবং নির্ভরযোগ্যপন্থা যোগ করেন তিনি। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে সিইসি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে পেশাদারি ও নিরপেক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সব বাহিনীর কৌশল ঠিক করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সব থেকে বেশি তথ্য-উপাত্ত থাকে। তথ্য, উপাত্তগুলো প্রয়োগ করে অন্যান্য সব বাহিনীর আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ছক তৈরি করতে হবে। সব গোয়েন্দা সংস্থার সতর্ক নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং এতে বিজিবিকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন হবে। কারণ, এতে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সিইসি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নজরদারি রাখবেন। নারী ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আলাদাভাবে খেয়াল রাখবেন।

যাতে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।  প্রত্যেক এলাকার মস্তান ও গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের তালিকা তৈরি করতে হবে। যেটা আপনারা সবসময় করে থাকেন। সেটা এখন থেকেই তৈরি করতে হবে। ভোটের ভাগ্য সন্ত্রাসীদের হাতে দেয়া যাবে না। সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে তাদের আটক করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সিইসি আরো বলেন, ২০১৪ সালের সহিংস অবস্থার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তার ছক তৈরি করতে হবে। বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। কারো বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা যাবে না।

সংঘবদ্ধভাবে প্রজাতন্ত্রের সব বিভাগ নির্বাচনের দায়িত্বে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সংবিধান ও আরপিও’র বলে- এখন সব দায়িত্ব আপনাদের কাছে। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশের নাগরিক তাদেরকেও সম্পৃক্ত থাকার জন্য অনুরোধ করবো। সকলকেই সঙ্গে নিয়েই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি। এরই মধ্যে প্রস্তুতির ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ব্যালট পেপার ছাপানো সংক্রান্ত কিছু কাজ বাকি আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status