শেষের পাতা
আট ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান
বাবা আটক ছেলের লাশ উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টার
৬ ডিসেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন
নির্মম। নিষ্ঠুর। হৃদয়বিদারক। এক ছেলেকে হত্যা করে আরেক ছেলেকে জিম্মি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক বাবার ওপর। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে আট ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার পরে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বাবার কাছে জিম্মি থাকা ওই ছেলেকে। আটক করা হয় অভিযুক্ত বাবাকে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রাজধানীর বাংলামোটর লিংক রোডের একটি বাসায়। নিহত ওই শিশুর নাম সাফায়াত। আর জীবিত উদ্ধার হওয়া শিশুর নাম সুরায়েত। তারা দুজনই ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নুরুজ্জামান কাজলের সন্তান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত বলে দাবি করছেন তার স্বজনরা।
তবে কাজলের স্বজনরা ছেলে হত্যার দায় তার ওপর দিলেও পুলিশ এখনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর হত্যার কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আর অভিযুক্ত কাজল পুলিশকে জানান, বৈদ্যুতিক শকে তার ছেলে মারা গেছে।
গতকাল সকাল ৮টা। বাংলামোটরের লিংক রোডের ১৬ নম্বর বাসা ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মধ্য বয়সী নুরুজ্জামান কাজল। তার কোলে সাড়ে চার বছর বয়সী ছেলে সুরায়াত ও এক হাতে দা। বাসার ভেতরে পড়ে আছে কাফনের কাপড়ে জড়ানো শিশু সাফায়াতের মরদেহ।
দা হাতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কেউ ভেতরে প্রবেশের সাহস পাচ্ছিলেন না। ভেতরে প্রবেশ করলে কোলে থাকা শিশুকে হত্যা করবেন বলে হুমকি দিচ্ছিলেন কাজল। হুমকি পেয়ে বেকায়দায় পড়ে যান পুলিশের পাশপাশি মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ফায়ার সার্ভিস এন্ড ডিফেন্সের সদস্যরা। তারা কাজলকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। কাজল উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কাছে জানতে চান তারা কেন এখানে এসেছেন। কাউকে তার প্রয়োজন নাই। দুপুরে আজিমপুর কবরস্থানে তার ছেলের দাফন হবে। অনেকটা ব্যর্থ হয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরে একটি শিশুর মরদেহ আছে বলে নিশ্চিত হই। ভেতরে টুপি ও পাঞ্জাবি পরা আরেক ব্যক্তিকে দেখা যায়। তারপর আমরা আমাদের কাজ শুরু করি। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিশুটির বাবা খুবই ক্ষিপ্ত হন। কোলে থাকা সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তখন ভেতরে থাকা ওই পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তি ও কোলে থাকা শিশুটির নিরাপত্তার চিন্তা করে আমরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করি। ধৈর্য্য ধরে কোনো রকম অঘটন ছাড়া সবাইকে উদ্ধার করার চেষ্টা করি। আমরা কাজলকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তাকে বলি, মসজিদে নিহত শিশুর জানাজার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী জানাজার জন্য বাসার বাইরে অপেক্ষা করছেন। জানাজার কথা শুনে কাজল কিছুটা শান্ত হন। আমরা সেই সুযোগটুকু কাজে লাগাই। পরে কাজল দরজা খুলে বাইরে আসার চেষ্টা করেন। তখন কৌশলে কিছু পুলিশ সদস্যকে আশেপাশে লুকিয়ে রাখা হয়। দরজা খুলে কাজল বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করা হয় এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সুরায়েতকে। এদিকে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক চম্পক চক্রবর্তী গতকাল নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানিয়েছেন, সাফায়াতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার কপালের বাম পাশে দুটি কালো দাগ, থুতনির নিচে কালো জখম ও ঠোঁটে কালো জখম রয়েছে। আজ ঢামেকে তার ময়না তদন্ত হবে।
অভিযুক্ত নুরুজ্জামান কাজলের বোন রোকেয়া বেগম বলেন, আমাদের বাবা এলাকায় মনু মেম্বার নামে পরিচিত। বাবা মারা যাওয়ার আগে আমরা সাত ভাই ও সাত বোনকে তার সমস্ত সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে গেছেন। সে অনুযায়ী নুরুজ্জামান কাজল বাংলামোটরে থাকতেন। তিনি পাগলামি করে তিন মাস আগে তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এখন তার স্ত্রী অন্যত্র থাকেন। রোকেয়া বলেন, আমার ভাই তার সন্তানদের খুব আদর করতেন। পাগলামির কারণে কয়েকমাস আগে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ভাঙচুরের মামলা দেয়া হয়। সেই মামলায় তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। পরে আবার তার স্ত্রী তাকে জামিনে মুক্ত করে আনেন।
গতকাল সকালে আমাদের আরেক ভাই উজ্জলকে ফোন করে কাজল জানায় তার ছেলে সাফায়াত মারা গেছে। খবর পেয়ে সবাই ছুটে আসলে দা দিয়ে সে সবাইকে তাড়িয়ে দেয়। কাজলের বড় ভাই উজ্জল বলেন, আমরা সবাই কাজলকে শান্ত করে সুরায়াতকে উদ্ধারের চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি বলেন, কাজল মাদকাসক্ত। সে আমাদের চাচার সঙ্গেও মারামারি করেছে। তার বাসার আশেপাশে আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজনদের বাসা আছে। নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে তার সঙ্গে স্বজনদের কারো তেমন যোগাযোগ নাই। আমরা তার সবকিছু সহ্য করতাম শুধু ছোট ছোট দুটো বাচ্চার কথা চিন্তা করে। এখন সে বাচ্চাটাকেই মেরে ফেললো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল সকালে কাজল স্থানীয় এক মাদরাসায় গিয়ে জানান, তার ছোট ছেলে সাফায়েত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে। ছেলের মৃত্যু সংবাদ মাইকে ঘোষণা করতে তিনি অনুরোধ করেন আর কোরআন তেলাওয়াতের জন্য মাদরাসা থেকে কাউকে বাসায় পাঠাতে বলেন। তার কথায় মাদরাসা থেকে একজন বাসায় গিয়ে দুরুদ পড়েন। তখন পুরো এলাকায় কাজল তার সন্তানকে হত্যা করেছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরে সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা, আত্মীয়স্বজন, সংবাদকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে আসেন। সবার উপস্থিতি দেখে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন কাজল। তিনি বাসার দিকে কাউকে ভিড়তে দিচ্ছিলেন না। জীবিত ছেলেকে কোলে নিয়ে দা হাতে কলাপসিবল গেট আটকে দেন। জহির নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কাজল খুব নেশা করতো। তাই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে তার তেমন সম্পর্ক ছিল না। এ ছাড়া সে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো। এজন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও তার বাসায় আসতেন না।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২) উপ-পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য আমরা বাড়ির ভেতরে যাই। সেখানে দরজার ফাঁক দিয়ে টেবিলের উপর কাফনের কাপড়ে মোড়ানো একটি মরদেহ দেখতে পাই। তার পাশে একজন হুজুর বসেছিলেন। আর নুরুজ্জামান কাজল তার আরেক ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন।
আমরা কাজলকে আমাদের কোনো সাহায্য লাগবে কিনা প্রশ্ন করি। তখন সে বলে কোনো সাহায্য লাগবে না। বেলা ১টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে তার ছেলেকে দাফন করবে বলে সে জানায়। তিনি বলেন, জানাজার কথা বলে কৌশলে তাকে বাইরে নিয়ে আসি। শাহবাগ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, আমরা জীবিত ও নিরাপদে উদ্ধারের চিন্তা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করি। হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে কৌশলী হই। কারণ কাজল বলছিল কেউ ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার ছেলেকে হত্যা করে ফেলবে। তাই আমরা একটু সময় নিয়ে অভিযান চালাই। তিনি বলেন, কাজল মাদকাসক্ত। এর আগেও তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
তবে কাজলের স্বজনরা ছেলে হত্যার দায় তার ওপর দিলেও পুলিশ এখনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর হত্যার কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আর অভিযুক্ত কাজল পুলিশকে জানান, বৈদ্যুতিক শকে তার ছেলে মারা গেছে।
গতকাল সকাল ৮টা। বাংলামোটরের লিংক রোডের ১৬ নম্বর বাসা ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মধ্য বয়সী নুরুজ্জামান কাজল। তার কোলে সাড়ে চার বছর বয়সী ছেলে সুরায়াত ও এক হাতে দা। বাসার ভেতরে পড়ে আছে কাফনের কাপড়ে জড়ানো শিশু সাফায়াতের মরদেহ।
দা হাতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কেউ ভেতরে প্রবেশের সাহস পাচ্ছিলেন না। ভেতরে প্রবেশ করলে কোলে থাকা শিশুকে হত্যা করবেন বলে হুমকি দিচ্ছিলেন কাজল। হুমকি পেয়ে বেকায়দায় পড়ে যান পুলিশের পাশপাশি মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ফায়ার সার্ভিস এন্ড ডিফেন্সের সদস্যরা। তারা কাজলকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। কাজল উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কাছে জানতে চান তারা কেন এখানে এসেছেন। কাউকে তার প্রয়োজন নাই। দুপুরে আজিমপুর কবরস্থানে তার ছেলের দাফন হবে। অনেকটা ব্যর্থ হয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরে একটি শিশুর মরদেহ আছে বলে নিশ্চিত হই। ভেতরে টুপি ও পাঞ্জাবি পরা আরেক ব্যক্তিকে দেখা যায়। তারপর আমরা আমাদের কাজ শুরু করি। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিশুটির বাবা খুবই ক্ষিপ্ত হন। কোলে থাকা সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তখন ভেতরে থাকা ওই পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তি ও কোলে থাকা শিশুটির নিরাপত্তার চিন্তা করে আমরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করি। ধৈর্য্য ধরে কোনো রকম অঘটন ছাড়া সবাইকে উদ্ধার করার চেষ্টা করি। আমরা কাজলকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তাকে বলি, মসজিদে নিহত শিশুর জানাজার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী জানাজার জন্য বাসার বাইরে অপেক্ষা করছেন। জানাজার কথা শুনে কাজল কিছুটা শান্ত হন। আমরা সেই সুযোগটুকু কাজে লাগাই। পরে কাজল দরজা খুলে বাইরে আসার চেষ্টা করেন। তখন কৌশলে কিছু পুলিশ সদস্যকে আশেপাশে লুকিয়ে রাখা হয়। দরজা খুলে কাজল বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করা হয় এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সুরায়েতকে। এদিকে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক চম্পক চক্রবর্তী গতকাল নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানিয়েছেন, সাফায়াতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার কপালের বাম পাশে দুটি কালো দাগ, থুতনির নিচে কালো জখম ও ঠোঁটে কালো জখম রয়েছে। আজ ঢামেকে তার ময়না তদন্ত হবে।
অভিযুক্ত নুরুজ্জামান কাজলের বোন রোকেয়া বেগম বলেন, আমাদের বাবা এলাকায় মনু মেম্বার নামে পরিচিত। বাবা মারা যাওয়ার আগে আমরা সাত ভাই ও সাত বোনকে তার সমস্ত সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে গেছেন। সে অনুযায়ী নুরুজ্জামান কাজল বাংলামোটরে থাকতেন। তিনি পাগলামি করে তিন মাস আগে তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এখন তার স্ত্রী অন্যত্র থাকেন। রোকেয়া বলেন, আমার ভাই তার সন্তানদের খুব আদর করতেন। পাগলামির কারণে কয়েকমাস আগে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ভাঙচুরের মামলা দেয়া হয়। সেই মামলায় তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। পরে আবার তার স্ত্রী তাকে জামিনে মুক্ত করে আনেন।
গতকাল সকালে আমাদের আরেক ভাই উজ্জলকে ফোন করে কাজল জানায় তার ছেলে সাফায়াত মারা গেছে। খবর পেয়ে সবাই ছুটে আসলে দা দিয়ে সে সবাইকে তাড়িয়ে দেয়। কাজলের বড় ভাই উজ্জল বলেন, আমরা সবাই কাজলকে শান্ত করে সুরায়াতকে উদ্ধারের চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি বলেন, কাজল মাদকাসক্ত। সে আমাদের চাচার সঙ্গেও মারামারি করেছে। তার বাসার আশেপাশে আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজনদের বাসা আছে। নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে তার সঙ্গে স্বজনদের কারো তেমন যোগাযোগ নাই। আমরা তার সবকিছু সহ্য করতাম শুধু ছোট ছোট দুটো বাচ্চার কথা চিন্তা করে। এখন সে বাচ্চাটাকেই মেরে ফেললো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল সকালে কাজল স্থানীয় এক মাদরাসায় গিয়ে জানান, তার ছোট ছেলে সাফায়েত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে। ছেলের মৃত্যু সংবাদ মাইকে ঘোষণা করতে তিনি অনুরোধ করেন আর কোরআন তেলাওয়াতের জন্য মাদরাসা থেকে কাউকে বাসায় পাঠাতে বলেন। তার কথায় মাদরাসা থেকে একজন বাসায় গিয়ে দুরুদ পড়েন। তখন পুরো এলাকায় কাজল তার সন্তানকে হত্যা করেছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরে সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা, আত্মীয়স্বজন, সংবাদকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে আসেন। সবার উপস্থিতি দেখে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন কাজল। তিনি বাসার দিকে কাউকে ভিড়তে দিচ্ছিলেন না। জীবিত ছেলেকে কোলে নিয়ে দা হাতে কলাপসিবল গেট আটকে দেন। জহির নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কাজল খুব নেশা করতো। তাই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে তার তেমন সম্পর্ক ছিল না। এ ছাড়া সে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো। এজন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও তার বাসায় আসতেন না।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২) উপ-পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য আমরা বাড়ির ভেতরে যাই। সেখানে দরজার ফাঁক দিয়ে টেবিলের উপর কাফনের কাপড়ে মোড়ানো একটি মরদেহ দেখতে পাই। তার পাশে একজন হুজুর বসেছিলেন। আর নুরুজ্জামান কাজল তার আরেক ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন।
আমরা কাজলকে আমাদের কোনো সাহায্য লাগবে কিনা প্রশ্ন করি। তখন সে বলে কোনো সাহায্য লাগবে না। বেলা ১টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে তার ছেলেকে দাফন করবে বলে সে জানায়। তিনি বলেন, জানাজার কথা বলে কৌশলে তাকে বাইরে নিয়ে আসি। শাহবাগ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, আমরা জীবিত ও নিরাপদে উদ্ধারের চিন্তা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করি। হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে কৌশলী হই। কারণ কাজল বলছিল কেউ ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার ছেলেকে হত্যা করে ফেলবে। তাই আমরা একটু সময় নিয়ে অভিযান চালাই। তিনি বলেন, কাজল মাদকাসক্ত। এর আগেও তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।