এক্সক্লুসিভ

এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা দরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৬ ডিসেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের বিষয় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছেন দেশের উন্নয়নকর্মীরা। এ সম্পর্কে এখনো দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার তীব্র অভাব রয়েছে। এ ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে তোলাসহ আইন ও নীতিমালায় সংস্কার আনা জরুরি। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম এ আলোচনার আয়োজন করে। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি এতে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অক্সফাম ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দেশের পিছিয়ে থাকা ১৩ জেলা নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী-পুরুষের সমতা ও কর্মসংস্থান খাতে ঘাটতির পাশাপাশি দারিদ্র্যতার মতো বিষয়গুলো উঠে আসে। বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম ও তৃণমূল পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া জেলা নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন অক্সফামের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার মালা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাঠপর্যায়ে যে স্থানীয় সরকার কাজ করছে তাতে পদে পদে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর প্রতি গুরুত্ব না দিলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, এসডিজি সম্পর্কে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মাত্র ২.৮ শতাংশ মানুষ এসডিজি সম্পর্কে ধারণা রাখেন। অন্যদিকে, স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৩৪ শতাংশ ব্যক্তি এসডিজি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ বা কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। জনপ্রশাসনে এর হার আরো কম, মাত্র ২.২ শতাংশ কর্মচারী এসডিজি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সামগ্রিকভাবে এসডিজি নিয়ে সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগের এই অভাবের কারণেই পিছিয়ে আছে এসডিজি বাস্তবায়ন। ফলে এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে তোলাসহ আইন ও নীতিমালায় সংস্কার আনা জরুরি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে সকল মন্ত্রণালয়ে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী অর্জিত হলে এসডিজি অর্জিত হবে। তবে এসডিজি বাস্তবায়নে জনসচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। গণমাধ্যমের ৭০ ভাগই রাজনৈতিক খবর, সেখানে উন্নয়ন আলোচনা খুবই কম হয়। গণমাধ্যম সচেতনতা তৈরি না করলে তা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারকে আরো কার্যকর করতে হবে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেশি হওয়ায় বেসরকারিভাবেই বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। সরকার কিছু করছে না, এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এসডিজি অর্জনে তেমন কোনো সফলতা নেই উল্লেখ করে ডা. শামসুল বলেন, এসডিজির ক্ষেত্রে কথা বেশি কিন্তু কাজ কম। তাই আগামী তিন বছরে কোনো একটি প্রজেক্ট ওয়ার্ক করে দেখান।
মাহফুজা আক্তার মালা বলেন, তিন বছর পার হয়ে গেলেও স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি নিয়ে কোনো জনসচেতনতা গড়ে ওঠেনি। প্রান্তিক পর্যায়ের মাত্র ২.৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী এসডিজি সম্পর্কে ধারণা রাখেন।

হাওর ও উপকূলসহ পিছিয়ে থাকা ১৩টি জেলার তথ্য তুলে ধরে সিপিডির তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যখন কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে চিন্তা করি, তখন তারা তাদের স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চায়। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে কীভাবে গতিশীল করা যায়, তা নিয়ে তাদের চিন্তা রয়েছে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, কৃষি পণ্য ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তেলা, অর্থায়ন-শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনা রয়েছে তাদের। এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, উন্নয়নকে এখন আর উন্নয়ন বললে চলবে না, উন্নয়ন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। তাই স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। গ্রামীণ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status