এক্সক্লুসিভ

চট্টগ্রাম-১১

লতিফের সম্পদ বেড়েছে কমেছে আমীর খসরুর

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

৫ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এমএ লতিফের হলফনামায় সমপদের পরিমাণ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে সম্পদের পরিমাণ কমেছে এ আসনে বিএনপি’র মনোনীত একক প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এবার এমএ লতিফের মোট সমপদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৯ টাকায়। দশম জাতীয় সংসদের তুলনায় এমএ লতিফের বার্ষিক আয়সহ ২ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৬ টাকার সমপদ বেড়েছে।
অন্যদিকে বেড়েছে এমএ লতিফের স্ত্রীর সমপদও। এমনকি গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জমা দেয়া হলফনামায় এমএ লতিফের ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না। এবার তাদের আয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩২ টাকা।

২০১৪ সালের নির্বাচনে এমএ লতিফ হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৪ টাকা। এবার ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৮২৪ টাকা কমে আয় দেখানো হয়েছে ৮২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯০ টাকা। অন্যদিকে গত নির্বাচনে ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত এবং সম্মানী ভাতাকে আয়ের উৎস দেখানো হলেও এবার শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে আয় ছিল না। তবে গাড়ি বিক্রি থেকে এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়। এছাড়া শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত খাতে নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৭ টাকা।

এমএ লতিফের কোনো ব্যাংকে ঋণ নেই উল্লেখ করে ইতিপূর্বে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের আগে দেয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
পেশায় ব্যবসায়ী লতিফের আয় কমলেও সমপদ বেড়েছে। নির্ভরশীলদেরও আয় এবং সমপদ দু’টোই বেড়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় স্ত্রীর সমপদ ছিল ৬ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার ২৮৯ টাকার। এবার তিন কোটি ১৮ লাখ ৭ হাজার ৬৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯০ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৭ টাকায়।

এরমধ্যে স্ত্রীর মালিকানাধীন একটি বাড়ির দাম দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ ২৯ হাজার ১৫৮ টাকা। ২০১৪ সালে একই বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৩৪৮ টাকা।
অপরদিকে দশম সংসদ নির্বাচনে এমএ লতিফের ওপর নির্ভরশীলদের সমপদ ছিল ৩২ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৬ টাকা। তবে এবার ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ টাকা দেখানো হয়েছে।

হলফনামার সমপদ বিবরণীতে দেখা যায়, দশম সংসদ নির্বাচনে এমএ লতিফের কাছে নগদ টাকা ছিল ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৬২৩ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, কোমপানির শেয়ারে ৯০ লাখ ৯৮ হাজার ৯২, বাস-ট্রাক, মোটরসাইকেল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ৪৫ হাজার টাকা এবং ৬ দশমিক ৮৭১ একর কৃষি জমির আর্থিক মূল্য ৯১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৪ টাকা। তবে এবার অস্থাবর সমপদ হিসেবে নগদ টাকা ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৬ হাজার ২৩৭ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র, কোমপানির শেয়ারে ৭৭ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ টাকা, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ৪৫ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ২ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ৩০৪ টাকার অকৃষি জমি স্থাবর সমপদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৪ সালে ৬ দশমিক ৮৭১ একর কৃষি জমি দেখানো হয়েছিল। অস্থাবর সমপত্তি হিসেবে বাস-ট্রাক, মোটর সাইকেল দেখানো হয়নি।

এদিকে হলফনামায় দেখা গেছে, এ আসনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সমপদের পরিমাণ কমেছে। একাদশ

সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় স্থাবর-অস্থাবর সমপদের মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৪ কোটি ৬১ লাখ ১৬ হাজার ২২৬ টাকা।

যা ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের হলফনামায় উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৪ টাকা কম। তবে এ সময়ের মধ্যে তার স্ত্রীর নামে স্থাবর-অস্থাবর সমপদের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪৩ টাকা বেড়ে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫১ হাজার ৯০১ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ২১৯ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাত থেকে ২৭ হাজার টাকা, ভাড়া বাবদ ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৫ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৮২৪ টাকা।

গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বার্ষিক আয় ছিল ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যার মধ্যে ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও পেশাজীবী হিসেবে আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার ২১৯ টাকা।

অন্যদিকে নবম সংসদ নির্বাচনে আমীর খসরুর ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না। তবে এবার ভাড়া বাবদ এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত খাতে নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ৯ লাখ ৬ হাজার ৪২৭ টাকা দেখিয়েছেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিজের নামে তাঁর স্থাবর সমপদ রয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ ১১ হাজার ৫০৯ টাকার।

তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ কমেছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৬ টাকার। তবে এ সময়ের মধ্যে স্ত্রীর ৪ কোটি ১৪ লাখ ২১ হাজার ৫৪৪ টাকা মূল্যের সমপদ বেড়েছে। এছাড়া অস্থাবর সমপদের মধ্যে আমীর খসরু নিজের নামে নগদ টাকা দেখিয়েছেন ১ কোটি ১১ লাখ ৭৪ লাখ ১৪৪ দশমিক ৮৭ টাকা। অপরদিকে স্ত্রীর নামে নগদ টাকা দেখিয়েছেন ৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯১২ দশমিক ৪৩ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১০ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৪ দশমিক ৫৮ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৯ দশমিক ৫৭ টাকা।

বন্ড, ঋণপত্র স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোমপানির শেয়ার নিজ নামে রয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৬ দশমিক ৫৫ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮২০ টাকার। এছাড়া পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে নিজের নামে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে রয়েছে ৯ লাখ টাকা। অপরদিকে হলফনামায় আমীর খসরুর নামে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি জিপ গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নিজের নামে স্বর্ণ ও অন্যান্য ধাতু রয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার। খসরুর নামে আসবাবপত্রে দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকার। এছাড়া স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় হলফনামায়। এদিকে স্থাবর সমপদের বিবরণীতে দেখা গেছে, আমীর খসরুর নামে ৪ হাজার ৫০০ টাকার দামের যৌথ মালিকানার জমির একটি অংশ রয়েছে। এছাড়া নিজের নামে অকৃষি জমির আর্থিক মূল্য উল্লেখ করা হয় ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৮ টাকা। স্থাবর সমপদের মধ্যে তিনটি দালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে দু’টি এপার্টমেন্টের দাম দেখিয়েছেন ৭৮ লাখ ৬২ হাজার ৮০০ টাকা।

আমীর খসরু উল্লেখ করেছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ১১টি মামলা বিচারাধীন এবং বাকি ৩টি তদন্তাধীন রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status