শরীর ও মন

শিশু-কিশোরদের হাড় ক্ষয়

ডা. শাহজাদা সেলিম

২৪ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

হাড় ক্ষয় প্রধানত বেশি বয়সের রোগ হলেও শিশু-কিশোরদেরও কিছু কিছু সময় হাড় ক্ষয় রোগে ভুগতে দেখা যায়। যা শিশুর বৃদ্ধি, চলা ফেরার সামর্থ্যকে প্রকটভাবে ব্যহত করতে পারে। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের পড়ে যাওয়া ও হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে অভিভাবকদের সচেতনতা কম থাকায়, চিকিৎসাটি ব্যয়-বহুল হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অনেক সময় পাওয়া যায় না। শিশু-কিশোরদের হাড় ক্ষয় সরাসরি হাড়ের নিজস্ব সমস্যার জন্যই হতে পারে (প্রাইমারি), আবার অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা হাড় ক্ষয়ের কারণ হতে পারে (সেকেন্ডারি)। হাড় ক্ষয়ের প্রাইমারি কারণগুলোর মধ্যে জিনগত ত্রুটি প্রধান জায়গা দখল করে আছে। কোন জিনটি হাড় ক্ষয়ের কারণ ঘটাচ্ছে তার দ্বারা কোন বয়সে হাড় ক্ষয় হবে সেটি নিরূপিত হয়, হাড় ক্ষয়ের মাত্রাও এর দ্বারাই প্রভাবিত।
হাড় ক্ষয়ের কারণে দীর্ঘ তালিকা রয়েছে, যারা দু’টি দলভুক্ত হবে: ক) গ্লুকোকর্টিকয়েড ব্যবহার জনিত। খ) চলৎ ক্ষমতা সীমিত কারক কারণ সমূহ। শিশুদের হরমোন চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশি করে হাড় ক্ষয়ের রোগী শনাক্ত হচ্ছে। শিশুদের রক্তের ক্যান্সার, মাংশপেশী ও হাড়ের গাঠনিক জিনগত ত্রুটি হাড় ক্ষয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে। এগুলোর দীর্ঘকাল ব্যাপী প্রভাব থেকে যায়। শিশুদের রক্তের ক্যানসারের চিকিৎসাও (কেমোথ্যারাপি) অনেক সময় হাড়ের ঘনত্ব কমাবার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জন্মগত হাড় ও মাংশের রোগ এবং অন্যান্য ক্যানসারও শিশু-কিশোরদের হাড় ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। বেশির ভাগ শিশু-কিশোরই কোনো রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে শুরুতে নাও আসতে পারে। কিন্তু যারা গ্লুকোকর্টিকয়েডের চিকিৎসা পাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার শুরু থেকেই কি ডোজে এ ওষুধটি সেবন করছে, কতদিন ধরে চিকিৎসা চলছে, সেটি হিসাব করে হাড় ক্ষয়ের মাত্রার অনুমান করা যেতে পারে। যে সকল শিশু স্টেরয়েড চিকিৎসা পাচ্ছে, তাদের ৬ থেকে ১৬ শতাংশ প্রতি বছর হাড় ক্ষয়ে আক্রান্ত হতে পারে। একই সঙ্গে যদি অন্য কোনো কারণ উপস্থিত থাকে তাহলে এর মাত্রা বেড়ে যাবে। শিশু-কিশোরদের হাড় ক্ষয়ের অন্যতম প্রধান জায়গা হলো কশেরুকা। এরপরে আছে পাঁজরের হাড়, হাত ও পায়ের লম্বা হাড়গুলো এবং কোমরের হাড়। শিশু-কিশোরদের হাড় ক্ষয়ের অনেকগুলো তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘস্থায়ী ফলশ্রুতি থাকে। হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি যেমন বৃদ্ধি পাই, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সম্ভাবনা থেকে যায়। পায়ের হাড় ভেঙে গেলে চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। মেরুদণ্ডের হাড়, পাঁজরের হাড় এবং বুকের হাড় ভেঙে গেলে আকৃতিগত স্থায়ী অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। শিশুদের দৈহিক কাঠামো গতিশীলভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় যে কোনো হাড় ভেঙে গেলে, এ গতিকে তা মারাত্মকভাবে ব্যহত করে।
এ সকল কিছু বিবেচনায় নিয়ে যে সকল শিশু-কিশোর হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদেরকে নিয়মিত মনিটরিং এর আওতায় আনাটা প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের একটি দায়িত্ব হতে পারে। অধিকাংশ উন্নত দেশেই এ কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। এতে নির্দিষ্ট সময় পর পর হাড়ের ঘনত্ব মাপা (ইগউ), নির্দিষ্ট কিছু রক্তের পরীক্ষা করা ও শিশুটির দৈহিক বৃদ্ধির মাত্রা দেখা হয়।
রোগটি শনাক্ত হবার পরে শিশু বা কিশোরটির চিকিৎসার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এর অংশ হিসেবে শিশুটির দেহে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, আয়রন, ফ্লোরাইড, জিংক, এবং ভিটামিন এসি ও কে-এর মাত্রা নিরূপণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ কাজে ওষুধের চেয়ে জীবন-যাপন আদর্শকরণ ভিত্তিক উন্নতি বেশি ফলদায়ক। সে উদ্দেশে খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও শারীরিক শ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু-কিশোদের কমপক্ষে ১০০ওট ভিটামিন-ডি প্রতিদিন খাওয়া উচিত। কিন্তু যাদের ঘাটতি আছে, তাদের আরো বেশি লাগতে পারে। বাংলাদেশে খাবার থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি-পাবার তেমন কোনো সুযোগ নেই। তাই নিয়মিত রোদ পোহানোই সবচেয়ে সহায়ক পদ্ধতি হতে পারে। যে সব শিশুর দীর্ঘস্থায়ী রোগ আছে, তার পর্যাপ্ত চিকিৎসা করতে হবে। যে সব রোগের জন্য স্টেরয়েড সেবন প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে স্টেরয়েডটির ন্যূনতম প্রাত্যহিক মাত্রা নিরূপণ করে সেবন করতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই আদর্শ মানের মনিটরিং দরকার।
শিশুর হাড় ক্ষয়ের মাত্রা নিশ্চিত করার পরে ওষুধ বাছাই করার দরকার হবে। সেক্ষেত্রে ইনজেকশন ও মুখে খাবার ওষুধ দু’রকমই আছে। হরমোন বিশেষজ্ঞ শিশুর বয়স, হাড় ক্ষয়ের কারণ, হাড় ক্ষয়ের মাত্রা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বিবেচনা করে শিশু বা কিশোরটির জন্য আদর্শ ওষুধ ও এর মাত্রা ঠিক করবেন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status