প্রথম পাতা

ছাত্রদল নেতার পরিবারের আর্তি

মারুফ কিবরিয়া

২০ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

দুইদিন পেরিয়ে গেল। ছেলে শাহজাহানপুর থানার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ভূইয়ার খোঁজ নেই। তাকে না পেয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা ওজিফা বেগম। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাজধানীর শনির আখড়ায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে রোববার সকালে সোহাগকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

সেই থেকে এখনো তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। নেয়ার সময় বলা হয়েছিল সোহাগ নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর মামলার আসামি। তার মা ওজিফা বেগম বলেন, আমার ছেলে কোনোদিন কিছু করেনি। সে অপরাধ করলে তাকে শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু লুকিয়ে রাখবে কেন? দুদিন পরও ছেলের কোনো খোঁজ না পেয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ওজিফা বেগম। তিনি বলেন, ডিবি তুলে আটক করে নিয়ে গেছে বলে শুনে, মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে গেলাম। সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলাম। সারাদিনেও সোহাগকে খুঁজে পেলাম না। সোহাগের বাবা সেলিম ভূঁইয়াও ছেলের খোঁজ না পেয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন।

তিনি বলেন, রোববার সোহাগকে ধরে নিয়ে গেছে। যারা নিয়েছে তারা পরিচয় দিয়েছে ডিবি পুলিশ। কিন্তু আজ দুদিন হয়ে গেল। তার খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা থানা, ডিবি কার্যালয় সব জায়গায় খুঁজছি। কোথাও সোহাগকে পাইনি। আজ (গতকাল) বিএনপি থেকে শুনেছি তাকে কোর্টে নেয়া হবে। সেখানেও নেই। আমাদের ছেলে কোনো অন্যায় করলে তাকে কোর্টে নিয়ে বিচার করুক। কিন্তু লুকোচুরি কেন করছে? তিনি আরো বলেন, আমার ছেলের খোঁজ দেয়ার জন্য আমাকে অনেক হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছিল।

সোহাগের পরিবারের অভিযোগ, তাকে ধরতে প্রথমে বোন সেলিনা আক্তারের কুমিল্লায় শ্বশুর বাড়িতে হানা দেয় ডিবি পুলিশ। সেখান থেকে তাকে ওই রাতেই নেয়া হয় নাঙ্গলকোট থানায়। তারপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সোহাগের খোঁজ দিতে বলে পুলিশ। সেলিনা আক্তার বলেন, রাত ২টার তারা আমার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আমাকে সোহাগের খোঁজ দিতে বলে। কিন্তু আমি যখন বললাম আমি জানি না সে কোথায় আছে। এটা বলার পর তারা আমাকে বিভিন্ন ধমকা-ধমকি করতে থাকে। সেই সঙ্গে তার খোঁজ না দিলে আমার বাবা-মা ও শ্বশুর শাশুড়ীকে জেলে দেবে এবং আমাকেও কোলের শিশুসহ সাতবছর জেল খাটতে হবে বলে ভয় দেখায়। এ অবস্থায় আমাকে জোর করে নাঙ্গলকোট থানায় নিয়ে যায় তারা। সেখানে প্রায় একঘণ্টা নানান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে রাত ৩টার দিকে আমাকে তাদের গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর সকালে এসে শনির আখড়ার আমার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের বাসা থেকে ভাইকে তাদের হাতে তুলে দিই। তারপর থেকে আর ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। যাই করুক, আমার ভাইটাকে যেন গুম না করে। সোহাগের বাবা বলেন, এটা কেমন কথা। কাউকে না পেলে তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হবে!

তিনি আরো জানান, সোহাগকে নিয়ে যাওয়ার পর বাসায় লোক পাঠিয়ে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনার দিন পরা জামা কাপড়গুলো নিয়ে গেছে। এদিকে, ছাত্রদল নেতা সোহাগ ভুঁইয়ার আটকের ব্যাপারে কিছুই জানে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেও পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী তাকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

এ বিষয়ে গতকাল  ডিবির (পূর্ব) উপ-কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে আগেও কথা হয়েছে। সোহাগকে আটকের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি কিছু জানি না। জানলে তো অবশ্যই মিডিয়ার সঙ্গে বলতাম। ডিবি পরিচয় দিয়ে আটকের অভিযোগের ব্যাপারে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনিও একই সুরে বলেন (এই প্রতিবেদন লেখার সময়), আমার কাছে এখন পর্যন্ত এই নামে (সোহাগ ভূঁইয়া) কাউকে আটকের তথ্য নেই। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মিশু বিশ্বাস রোববার রাতে মানবজমিনকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা নয়াপল্টনের ঘটনার দিন হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। এর মধ্যে সোহাগ অন্যতম। ঘটনার দিন সোহাগ গ্যাবাডিন প্যান্ট ও পাতা কালারের শার্টের বোতাম খোলা অবস্থায় লাঠি হাতে হামলা ও ভাঙচুরে অংশ নেয়। এরপর থেকে পুলিশ তাকে খুঁজছিল।

তবে, আটকের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এখন পর্যন্ত আমার কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। এদিকে, গতকাল সকালে ঢাকার সিএমএম কোর্টে গিয়ে খোঁজ করলে, কোর্টের জিআর শাখা নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার কোনো আসামি বিকাল পর্যন্ত তোলা হয়নি বলে জানিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status