দেশ বিদেশ
আন্তর্জাতিক জনগণের স্বাস্থ্য সম্মেলনে দলিত মানবাধিকার কর্মী
চা বাগানে সকল ধরনের অসুখের জন্য একই ওষুধ দেয়া হয়
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের দলিত মানবাধিকার কর্মী তামান্না সিং বাড়াইক বলেছেন, রাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিষয়টি থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। চা বাগানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হতদরিদ্রদের তুলনায়ও খারাপ। প্রতিটি বাগানে কোম্পানি কর্তৃক হাসপাতাল থাকলেও তাতে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। সকল ধরনের অসুখের জন্য একই ওষুধ প্রদান করা হয়ে থাকে। আবার দৈনিক ৮৫ টাকা বেতনের একজন চা-কর্মীর পক্ষে বাগানের বাইরে বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা করানোর সুযোগ নেই। গতকাল সাভার ব্র্যাক-সিডিএম সেন্টারে ৪র্থ আন্তর্জাতিক জনগণের স্বাস্থ্য সম্মেলনে শ্রেণি, বর্ণ এবং জাতপাতভিত্তিক সংখ্যালঘুদের স্বার্থে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন বিষয়ক উপ-অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে তামান্না সিং বাড়াইক এসব কথা বলেন। মূল অধিবেশনের বিষয় ছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস বা বিকশিত করার সামাজিক ও ভৌত শর্তসমূহ। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পিএইচএম-এর সাবেক গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর ড. রবি নারায়ণ। বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী সাথাহ ওদেহ, অধ্যাপক ফ্রান বাউম, ফ্লাইন্ডারস বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া এবং মানবাধিকার কর্মী শিরীন হক। অধিবেশনে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অবনয়নের পেছনে সামাজিক ও ভৌত অবস্থার প্রভাব সম্পর্কে বক্তারা আলোকপাত করেন। ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্বল অভিগম্যতার উদাহরণ দিয়ে সাথাহ ওদেহ বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ভূমিকা ৪০ শতাংশ, বায়োলজিক্যাল ভূমিকা ১০ শতাংশ, ক্লিনিক্যাল প্রভাব ১০ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতার ভূমিকা ৩০ শতাংশ। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্ব এবং অধিকৃত অঞ্চলে দেয়াল তুলে ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ করে রাখায় তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। তিনি বলেন, ৪০ শতাংশেরও বেশি ফিলিস্তিনি রোগী ইজরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নিরাপত্তা পারমিট না পাওয়ায় উন্নত চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। শ্রেণি, বর্ণ এবং জাতপাতভিত্তিক সংখ্যালঘুদের স্বার্থে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন বিষয়ক উপ-অধিবেশনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের স্বাস্থ্য আন্দোলন সংগঠন ‘জনস্বাস্থ্য অভিযান’-এর কো-অর্ডিনেটর এনবি সরোজিনি, বেনিন-এর স্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী প্যাকোম টোমেটিসি এবং বাংলাদেশের দলিত মানবাধিকার কর্মী তামান্না সিং বাড়াইক। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। অধিবেশনে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী দ্রুত উন্নয়নের মডেলে সংখ্যালঘু, আদিবাসীদের স্বার্থ একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনায় এসব জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিষয়টি বাদ পড়ে যাচ্ছে। ‘জেন্ডার অ্যান্ড হেলথ’-শীর্ষক উপ-অধিবেশনে লাডা ভেইগান্ড ক্রোশিয়ার নারী প্রজনন স্বাস্থ্যের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ক্রোশিয়ায় গাইনোক্লোজিক্যাল চিকিৎসার ব্যাপক বেসরকারিকরণের ফলে সন্তান প্রসব ব্যবস্থা খুবই ব্যয়বহুল। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক কর্মকর্তাদের রোগীদের অবস্থাকে প্রাধান্য না দেয়া এবং উদাসীনতার কারণে প্রসবকালীন সময়ে নারীরা যথাযথ চিকিৎসা পান না।