শেষের পাতা

ঝিনাইদহে ৩৭৪ মামলায় আসামি ৪১ হাজার

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা

১৬ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

ঝিনাইদহে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপি ও ২০দলীয় ঐক্যজোটের শত শত নেতাকর্মী এখনো বাড়ি ছাড়া। গ্রেপ্তার আতঙ্ক ও একাধিক মামলা কাঁধে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী হাওয়া বইলেও এসব গায়েবি মামলার ক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা না পাওয়ায় কঠোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামিন পেয়েও ঘরে থাকতে পারছেন না এলাকার ভুক্তভোগীরা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতেই গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬ থানায় সর্বমোট ৩৭৪টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছেন ৪১ হাজার ৭৪২ জন। আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হলেও পুলিশি হয়রানি তাদের পিছু ছাড়েনি। ফলে অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরাও। ইতিমধ্যে অনেকের ক্ষেতের ধান পেকে গেছে। কিন্তু সেগুলো তুলে আনার কেউ নেই। ফলে মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কষ্টার্জিত এ ফসল। এ ছাড়া ভোটের দিন সম্ভাব্য পোলিং এজেন্ট হতে পারে এমন সব কর্মীদেরও তালিকা তৈরি করে বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর থানায় ১১২টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১২ হাজার ৫১৫ জন নেতাকর্মীকে। এ ছাড়া হরিণাকুণ্ডুতে ৮১ মামলায় ৯ হাজার ৫০০ জন, শৈলকুপায় ৫১টি মামলায় ৫ হাজার ৬০০ জন, কালীগঞ্জে ৪৯টি মামলায় ৪ হাজার ৫০০ জন, কোটচাঁদপুরে ৩২টি মামলায় ৪ হাজার ১১৫ জন এবং মহেশপুর উপজেলায় ৪১টি মামলায় ৫ হাজার ১১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মসিউর রহমানের বিরুদ্ধেই হয়েছে ২৫টি মামলা। এ ছাড়া জেলার  সাংগঠনিক সম্পাদক ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. আবদুল মজিদের বিরুদ্ধে হয়েছে আরো ২১টি। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন অবস্থায়ও ৪ মামলার আসামি হয়েছেন। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অ্যাড. আবদুল মজিদ জানান, গত ১০ বছরে বিএনপি ও তার শরিকরা কোনো মিছিল-মিটিং-সমাবেশ করতে না পারলেও একের পর এক নাশকতার পরিকল্পনা দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। নাশকতার পাশাপাশি অস্ত্র, মাদক ও বোমা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চালান দেয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির দেয়া তথ্যমতে গত দুই সপ্তাহ আগেও ঝিনাইদহ, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা ও কালীগঞ্জে নতুন করে আরো ৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪০০ জনকে। সব মিলিয়ে মোট মামলার সংখ্যা ৩৭৪টি।  

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান জানান, গত ১০-১১ বছরে পুলিশি হয়রানি ও হামলা-মামলায় নাজেহাল বিএনপির শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দীর্ঘ এই ১০ বছরে অনেকেই ঘরছাড়া হয়েছেন। অনেকেই গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। ভয়াবহ এসব ঘটনায় মামলা করারও সাহস পায়নি ভুক্তভোগীর পরিবার। উল্টো ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদেরকে আতঙ্কে রাখা হয়েছে। এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বেশির ভাগ নেতাকর্মী।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, যারা হয়রানির অভিযোগ করছেন, তারা কেউ ভালো মানুষ না। আমরা নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করছি না। যাদের বিরুদ্ধে নাশকতা, মাদক মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তাদেরকে ধরতেই অভিযান চালানো হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিকেও কীভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও অনেক সময় অপরাধ সংঘটিত করা যায়। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে ধরপাকড় বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, এমন কোনো বিষয় নেই। যারা নিয়মিত মামলার আসামি এবং সন্দেহভাজন নাশকতাকারীদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status