এক্সক্লুসিভ

ঢাকা-২

দু’লেই হেভিওয়েট প্রার্থী

নূর মোহাম্মদ

১৪ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে ঢাকা-২ আসনে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে এ আসনে। তবে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া প্রচারণা। নির্বাচনী বিধি ভেঙে দিন-রাত মিটিং-মিছিল করছে তারা। অন্যদিকে প্রচারণা দূরে থাক এখনো এলাকা ছাড়া বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তাদের আশা, দ্রুত এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। তারাও মাঠের প্রচারণায় নামবেন। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত ঢাকা-২ নির্বাচনী এলাকা। প্রতিটি দেয়াল বা ফাঁকা জায়গায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে বিএনপি’র পোস্টারও চোখে পড়েছে সেটি নিবার্চনী নয়, বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের মুক্তির পোস্টার। ঢাকার পাশের উপজেলা কেরানীগঞ্জের কিছু অংশ, সাভার উপজেলার আমিনবাজার ইউনিয়ন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসন হিসেবে এ আসন। ২০০৮ সালের পর থেকেই এ আসনটি বিএনপি’র হাতছাড়া। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ আসন থেকে। এরপর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান চারবারের এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করলে এ আসনটি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ছেড়ে দেয়ার কথা শুনা যাচ্ছে। তবে বিএনপি ও গণফোরামের কোনো প্রচারণা এখনও চোখে পড়েনি। এ ব্যাপারে বিএনপি প্রার্থী আমান উল্লাহ আমান মানবজমিনকে বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এলাকায় প্রচারণা এখনও শুরু হয়নি। তবে আমরা কৌশলে নির্বাচনী মাঠে। খুব দ্রুত সময় আমরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবো।
সরজমিন এ নির্বাচনী আসন ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীরা নৌকায় ভোট চেয়ে মিছিল মিটিং করছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে এ ধরনের প্রচারণা নির্বাচনী আচরণ-বিধি লঙ্ঘন হলেও রাস্তা বন্ধ করে এসব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে বিএনপি’র অভিযোগ, হামলা, মামলা গ্রেপ্তারের কারণে প্রচারণা করা তো দূরের কথা নিজের বাসায় ঘুমাতে পারছেন না নেতা-কর্মীরা। তবে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের আশা, খুব দ্রুত প্রকাশ্য প্রচারণায় নামছেন তারা। কামরাঙ্গীরচর এলাকার মুদি দোকানদার মনিরুল ইসলাম বলেন, আরও ১৫ দিন আগে থেকে কামরুল ইসলামের সমর্থকরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় লোহার ব্রিজ থেকে রাস্তায় যানবাহন আটকিয়ে মিছিল শোডাউন করে। এলাকায় রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় সব সময় প্রচণ্ড জ্যাম লেগে থেকে। এখন প্রতিদিন রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করায় জ্যাম আরও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। শুক্র, শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মিটিং-মিছিল। একই অবস্থা কেরানীগঞ্জে। শাহীন আহমদের সমর্থকরা বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তায় মিছিল-মিটিং করছে। এ ব্যাপারে শাহীন আহমেদ বলেন, আমি নেতা-কর্মীদের রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ না করার জন্য বলেছি। কেউ করে থাকলে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।  

এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও মনোনয়ন নিয়ে লড়াই হচ্ছে মূলত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমদের মধ্যে। হেভিওয়েট প্রার্থী হওয়ার পরও শাহীন আহমদকে নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন কামরুল ইসলাম। কেরানীগঞ্জ অংশে শাহীন আহমদের একক আধিপত্য। অন্যদিকে কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ অংশে কামরুল ইসলামের একক আধিপত্য। কেরানীগঞ্জ কামরুল ইসলামের আর কামরাঙ্গীরচরে শাহীন আহমদের পোস্টার চোখে পড়েনি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে কেরানীগঞ্জ বাজারের রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, কামরাঙ্গীরচরে শাহীনকে যেমন কোনো সভা-সমাবেশ পোস্টার লাগাতে দেয়নি তেমনি কেরানীগঞ্জে কামরুল ইসলামের সভা-সমাবেশ করতে দেয় না শাহীন। এ নিয়ে দুই এলাকায় একাধিকবার দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, টানা দুইবার সংসদ সদস্য থাকায় কামরুল ইসলাম এলাকার উন্নয়নের কথা বলে ভোট চাইবেন। আর শাহীন তৃণমূলের কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় মনোনয়ন চেয়ে হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মামলা সংক্রান্ত ঝামেলা থাকায় বিএনপি’র প্রার্থী হতে পারেননি আমান উল্লাহ আমান। প্রার্থী হন মতিউর রহমান। তাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে করে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কামরুল ইসলাম। আর ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে পান খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব।
তবে এলাকাবাসীর দাবি, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি। দলে তার একমাত্র ভরসা ওয়ান-ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন। অন্যদিকে কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমদে ২০১২ ও ২০১৬ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টিতে আসেন। যদিও তিনি দাবি করছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের অনুরোধে তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু এবার মনোনয়নের ব্যাপারে তৃণমূলের ব্যাপক ছাপ রয়েছে। এ ব্যাপারে শাহীন আহমেদ বলেন, শুধু দলের নেতা-কর্মী নয়, সর্ব সাধারণের সুখে-দুঃখে সব সময় আমাকে পেয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি এলাকায় দুঃশাসন, জমি দখলসহ নানা অনিয়ম কারণে সাধারণ মানুষ তার ওপর ক্ষুব্ধ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status