প্রথম পাতা

ইতিহাসে রেকর্ড

কাজী সোহাগ, ঢাকা ও আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা) থ

১৩ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

দলীয় মনোনয়নপত্র কিনে রেকর্ড গড়লেন বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এ আসন থেকে সর্বোচ্চ ৫১ জন দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, দলীয় মনোনয়ন  নেয়ার ক্ষেত্রে এটি রেকর্ড। এর আগে এক আসন থেকে এত বেশি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কেনার তথ্য নেই। বরগুনা-২ আসন থেকেও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ৩২ জন। এ ছাড়া ২০ থেকে ৩০ জন পর্যন্ত প্রার্থী হতে চাইছেন এমন আসন আছে অনেক।

সোমবার দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ শেষ হয়েছে। আগামীকাল দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সামনে আসছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলীয় সূত্র জানায়, প্রত্যেক আসনে অধিক সংখ্যক প্রার্থী হতে চাওয়ায় দলের ওপর চাপ বেড়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলীয় হাইকমান্ডকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হবে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। কেউ বিদ্রোহ করলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এদিকে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি আসনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বেশি মনোনয়ন ফরম কেনার চারটি কারণ জানা যায়। ওইসব নেতারা জানান, প্রথমত. মূল কয়েক নেতা ছাড়া বেশির ভাগ মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ডামি প্রার্থী হিসেবে। তারা মনোনয়ন বোর্ডের সামনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থন দিতে ফরম কিনেছেন। দ্বিতীয়ত. ভবিষ্যতে মনোনয়ন চাওয়ার পথ তৈরি করতে অনেকে এবার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

তৃতীয়ত. আবারো দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে কেউ কেউ তৎপর হয়েছেন। চতুর্থত. মনোনয়ন বোর্ডে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ নিতেও অনেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এসব প্রসঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ গতকাল মানবজমিনকে বলেন, এটা দলের ভেতরকার গণতান্ত্রিক চর্চা বলে মনে করি। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু অনেকে এটাকে দলীয় কোন্দল বলে মনে করছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। তবে অনেকে হয়তো ডামি হিসেবে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আমাদের কাছে এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য নেই। আর যারা ৩০ হাজার টাকা খরচ করে দলীয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলার জন্য ফরম কিনেছেন তারা তো আসলে সময় পাবেন না। মনোনয়ন বোর্ডের সামনে ৫ মিনিটের বেশি কোনো আসনের নেতারা সময় পাবেন না। কারণ এত বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী যে তাদের সবার সঙ্গে কথা বলতে গেলে কয়েক দিন লেগে যাবে।

মনোনয়ন নিয়ে কিছুটা চাপ তো রয়েছেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে আগামীকাল থেকে। ধানমণ্ডিতে সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎকার-পর্বে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, বুধবার সকাল ১১টা থেকে এই সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সোমবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমা দেয়ার শেষ দিন। নির্বাচন কমিশন সময় বাড়ালেও আমাদের সময় আর বাড়বে না। বুধবার থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নেবেন। হবিগঞ্জ-২ আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন সদ্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নওশেদ উদ্দিন সুজন। মনোনয়নপত্র নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দলের কর্মী হিসেবে মনোনয়নপত্র নিয়েছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবো।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফ?রমে প্রার্থীর বিবরণীর একটি ঘরে ‘২০০৭ সালের ১লা জানুয়ারি পরবর্তী সম?য়ের ভূমিকা’ লিখতে বলা হয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, জরুরি অবস্থার মধ্যে দলের দুঃসময়েও যারা সক্রিয় ছিলেন, তাদের মূল্যায়নের জন্যই ফরমে ওই ঘর রাখা হয়েছে এবার। তারা জানান, সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমে এ ধরনের কোনো ঘর ছিল না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা জানান, প্রত্যেক দলেরই কিছু কিছু বিশেষ সময় থাকে, দুর্দিন থাকে। তেমনি আওয়ামী লী?গেরও দুর্দিন বা বি?শেষ মুহূর্ত ছিল ১/১১। ওই সময় যারা দল থেকে দূরে ছিল তাদের মনোনয়ন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ১/১১ তে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য এই অংশটুকু যুক্ত করা হয়েছে। এদিকে দলীয় নেতাদের বাইরেও শরিকদের নিয়ে মনোনয়ন চাপে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

এক আসনে-৫১ প্রার্থী: বরগুনা-১ আমতলী-তালতলী বরগুনা সদর আসন থেকে মোট ৫১ জন ব্যক্তি মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন,  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাহাঙ্গীর কবির, সভাপতি হুমায়ুন কবির ও গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন মন্টু, অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ ও মোতালেব মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরওয়ার টুকু ও  রইসুল আলম রিপন, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক মশিউর রহমান শিহাব, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা খলিলুর রহমান, আমতলীর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সরওয়ার ফোরকান, আমতলী মেয়র মতিয়ার রহমান, তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান  মনিরুজ্জামান মিন্টু, আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম দেলোয়ার, তালতলীর আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক জোমাদ্দার, সাবেক সংসদ সদস্য  নিজাম তালুকদারের স্ত্রী জাকিয়া এলিচ ও সাবেক সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা সোহেলী পারভিন মনি। এ ছাড়াও বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মাদ ওলি উল্লাহ ওলি এবং জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মনিরুজ্জামান নসা উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়াও ঢাকায় বসবাসরত সাবেক ছাত্রলীগ ও যুব নেতাদের মধ্যে মিজানুর রহমান মিজান, আবদুস সোবাহান খান, আবদুস সোবাহান লিটন, বরগুনা জেলার সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান হোসেন রাসেল ফরায়েজী, মজিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে মামুদুর রহমান নিরু আমতলী উপজেলা, আওয়ামী লীগ নেতা  আব্দুস সোবহান লিটন, উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান, মজিবুর রহমান, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মাকসুদা আক্তার জোসনা,  ইউপি চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা, শহিদুল ইসলাম মৃধা, আখতারুজ্জামান বাদল খান, হারুন অর রশিদ, বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার, উপজেলা যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সোবহান লিটন, তালতলীর নিশান বাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল ফরাজী। মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যরা ঢাকায় বসবাসরত ও বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status