শেষের পাতা

নি র্বা চ নী হা ল চা ল (নারায়ণগঞ্জ-১)

আওয়ামী লীগের ৩২ প্রার্থী মামলা জালে বিএনপি

জয়নাল আবেদীন জয়, রূপগঞ্জ থেকে

১৩ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনে দেশের রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী হয়েছেন। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন ৩২ প্রার্থী। সকল দলের প্রার্থীসংখ্যা চল্লিশের অধিক। তবে উপজেলাব্যাপী গ্রহণযোগ্য রয়েছে মাত্র ৫-৬ জন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোন্দল বর্তমানে সাংঘর্ষিক আর হামলা-মামলায় রূপ নিচ্ছে। দলীয় এমপিকে প্রত্যাখ্যান করে উপজেলা আওয়ামী লীগ দাবি তুলছেন এলাকার সন্তানকে মনোনয়ন দেবার। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপি তিনভাগে বিভক্ত থাকলেও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের লড়াইয়ে প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। যদিও সাম্প্রতিক পুলিশের গায়েবি মামলায় সকল প্রার্থীই আসামি হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন তবুও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে তাদের। নিজস্ব বলয়ে কাজও করছেন তারা। মাঠের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সকল ধরনের প্রচেষ্টা আছে তাদের। এককভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন জাপা। মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি দাবি করবেন বলে মাঠে গুঞ্জন রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, চমক দেখাতে এরশাদ নিজেই এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন।

জানা যায়, সাড়ে ৩ লাখ ভোটার অধ্যুষিত এই আসনটি ভৌগোলিক কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানীর পূর্ব প্রবেশ দ্বার এই উপজেলা আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ঢাকা বাইপাসে অবস্থান নিলে অচল হয়ে পড়ে দেশের ২৬ জেলা। এ ছাড়া রাজধানীর সীমান্তবর্তী হওয়ায় সকল জাতীয় কর্মসূচিতে রূপগঞ্জের রাজনৈতিক কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে। কথিত রয়েছে এই আসনে নির্বাচিত দল সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সকল জাতীয় নির্বাচনে এই ব্যত্যয় ঘটেনি। বর্তমানে সমান ভোটার রয়েছে বড় দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের। গণভোটের হিসাবে এখানকার শিল্পাঞ্চলে কর্মরত ৪০ হাজার ভাসমান ভোটার মূল জয়-পরাজয়ে ভূমিকা পালন করে। এরশাদ সরকারের শাসনামলে সুলতান ভূঁইয়া দুইবার এমপি নির্বাচিত হলেও পরবর্তিতে আর এখানে দাঁড়াতে পারেনি জাপা। আসনের নিয়ন্ত্রক হয় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরী। পরে সাবেক সেনাপ্রধান কেএম সফিউল্লাহ সর্বপ্রথম এই আসনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়ে আসনটি আওয়ামী লীগকে উপহার দেন। সফিউল্লাহর সঙ্গে থানা আওয়ামী লীগের বিরোধীদের জেরে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার শিল্পপতি গোলাম দস্তগীর গাজী ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও গাজীই দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য হন এই আসনে।

আওয়ামী লীগ: বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদ সদস্যদের সাপেনেউলে সম্পর্ক। গত পৌর নির্বাচনে সংসদ সদস্যের স্ত্রী হাসিনা গাজীকে মেয়র বানানো নিয়ে কোন্দলের সূচনা হয়। দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে থানা থেকে ওয়ার্ড ইউনিট পর্যায় অবধি। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকলে এখন দুইধারায় বিভক্ত। আওয়ামী লীগের দাবি সংসদ সদস্য অন্তত উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৭শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৩ শতাধিক মামলা দিয়েছেন। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আগামীতে রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। এরই ধারাবাহিকতায় দাবি উঠে জন্মসূত্রে রূপগঞ্জের সন্তানকে মনোনয়ন দেবার। বর্তমান সংসদ সদস্যের বাইরে আরো ৩১ প্রার্থী দলের মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। তাদের মধ্যে সাধারণ ভোটারদের আস্থার জায়গায় রয়েছেন তরুণ শিল্পপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ভুঁইয়া ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও  উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শাজাহান ভুঁইয়া। এ চারজনের যে কেউ পেতে পারেন দলের চূড়ান্ত টিকিট। তবে কোন্দল নিরসন করা না গেলে এবং প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে আগামী নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটতে পারে বলে সাধারণ ভোটারদের আশঙ্কা।

বিএনপি: নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক পুলিশ কর্তৃক দায়ের করা ১০ মামলায় উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অনেকটা কোণঠাসা আর আত্মগোপনে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারপরও বিএনপি নির্বাচনে যাবার ঘোষণায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে রয়েছে এক ধরনের গোপনীয় প্রস্তুতি। তারা আত্মগোপন আর অন্তরালে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন। স্থানীয়ভাবে কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে রয়েছে তাদের সরব উপস্থিতি। গতকাল ৫ নেতা দলের মনোনয়ন ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। রূপগঞ্জ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও তার আইনজীবী  এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ন, তারাব পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিনসহ আরো একাধিক ব্যক্তি। তবে মূলত তৈমুর, দীপু আর কাজী মনিরকে ঘিরেই উপজেলার বিএনপির রাজনীতি সক্রিয়।

এদের মধ্যে তৈমুর আলম পরিপক্ব ও নির্যাতিত রাজনৈতিক নেতা হলেও বিভিন্ন সময় একাধিকস্থানে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় রূপগঞ্জে তুলনামূলক কম কর্মী-সমর্থক তার বলয়ে। অন্যদিকে গতবারের দলের মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান আর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও গাউছিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপুর রয়েছে উপজেলা বিএনপিতে দাপুটে গ্রহণযোগ্যতা। সাম্প্রতিক সময়ে দলের কারাবন্দি ও মামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে দিপু ভূইয়া নিজের জন্য উপজেলা বিএনপিতে আস্থার জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। সুদর্শন আর মিষ্টভাষী দীপু ভুঁইয়ার রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী। বিগত কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচিতে তার কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি দলের উচ্চ মহলের নজর কাড়েন দীপু ভুঁইয়া। এই নেতাই আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হচ্ছেন বলে রূপগঞ্জ জুড়ে আলোচনা হচ্ছে। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে জয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে বহুগুণ।

অন্যদিকে মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টি এবার নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনটি দাবি করছে বলে বলা হচ্ছে। একক নির্বাচনের প্রস্তুতি রেখে উপজেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও জাতীয় যুব সংহতির উপজেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামকে প্রার্থী করেছেন তারা। দলের ক্ষমতা হারানোর পরবর্তী যে কোনো সময়ের চেয়ে রূপগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টি সাইফুলের কর্মকৌশলে ভালো অবস্থানে রয়েছেন বর্তমানে। মহাজোটের শরিক জাপাকে যদি এই আসনটি ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সাইফুল ইসলামই দলের প্রার্থী বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তবে চমক দেখানোর জন্য এরশাদ নিজেও এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে উপজেলা জাপার নেতারা আলোচনা করছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status