এক্সক্লুসিভ

নি র্বা চ নী হা ল চা ল, মুন্সীগঞ্জ ৩

বিভক্তি আর কোন্দল বড় দুই দলেই

মোজাম্মেল হোসেন সজল, মুন্সীগঞ্জ থেকে

১১ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে টেনশন ও উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। সমর্থকরা টেনশনে নিজ পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে। এ আসনে বিএনপির তেমন জোরালো প্রচারণা না থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। তবে প্রার্থী ও জেলার শীর্ষ নেতাদের বিভাজনে কর্মীরা বিভক্ত।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৭টি। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৪১৬ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৩১ জন।
আওয়ামী লীগ: আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব এম ইদ্রিস আলী। এ তালিকায় আরও আছেন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আনিস-উজ্জামান আনিস, মিরকাদিম পৌরসভার দুই মেয়াদের মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীন।
প্রার্থীদের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পদবঞ্চিত ও অবমূল্যায়ণের শিকার হওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের আস্থাভাজন নেতা হয়ে উঠেছেন ইতিমধ্যে। বন্ধুসুলভ আচরণও তার জনপ্রিয়তার একটি অংশ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সাবেক সচিব এম ইদ্রিস আলী বিএনপির সরকারের তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামকে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দেন। এম ইদ্রিস আলী পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে দল মত নির্বিশেষে সবার গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। বিশেষ করে চর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা সহিংসতার অবসান ঘটাতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। তিনি সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় না দিয়ে জনগণের কাছে প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠেন। অবশ্য এসব কারণে দলের অনেকের চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ইদ্রিস আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মাঠে নেমেছেন। তার সঙ্গে আছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। আছেন, তার ছেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব।
সম্ভাব্য প্রার্থী আনিস-উজ্জামান আনিসেরও রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে তৃণমূলের রাজনীতিতে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের আপন ভাই। মো. আনিস উজ্জামান আনিস মহান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ-এর মুন্সীগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) প্রধান ছিলেন। আনিস উজ্জামান গত দুই মেয়াদে মুন্সীগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের নির্বাচিত কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন গত দুই টার্ম ধরে। আনিস উজ্জামান আনিস মুন্সীগঞ্জ হড়গঙ্গা কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ও ভিপি ছিলেন। দুবার ছিলেন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান। ছিলেন জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
শহিদুল ইসলাম শাহীন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভায় পরপর দুবার নির্বাচিত মেয়র। তিনি প্রথমবার মেয়র হয়েই দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভাটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। তরুণদের কাছে তিনি প্রিয়ভাজন। মিরকাদিম পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এবং তারুণ্যতায় তিনি আলোচনায় আছেন।
সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ক্রীড়াসহ জনজীবনের বিভিন্ন বিষয়াবলী নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এর পরও আমি মনে করি মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়া অবহেলিত এলাকা। এই এলাকায় আরো অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে এবং আমার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করি।
সাবেক সংসদ সদস্য এম ইদ্রিস আলী মনোনয়ন প্রাপ্তিতে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার অতীতের পারফরমেন্স এবং আমার ইমেজ কি পার্টি জানেন। জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই আমার সঙ্গে আছেন। সাধারণ মানুষও আমাকে চায়। যাদের আমি চিনি না, তারাও ফোন করে আমাকে চায়।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আনিস-উজ্জামান আনিস বলেন, ১৯৬২ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। ২০০৮ সালে নেত্রীর নির্দেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করি বহু ভোটের ব্যবধানে। নেত্রী তখন আমাকে নমিনেশন দেননি। এবারও নেত্রী যে নির্দেশনা দেবেন সে নির্দেশনা অবশ্যই পালন করবো। আমি আশাবাদী যদি নেত্রী তৃণমূল পর্যায়ে আবারও যাচাইবাছাই করেন, সেক্ষেত্রে ইন্‌্‌শাআল্লাহ আমি কামিয়াব হবো।
মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, আমি দুই-দুবার বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত মেয়র হিসেবে কাজ করে আসছি। এটা আমার জন্য খুব বেশি চাওয়া না। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচন করবো। আর যদি কোনো কারণে না দেন, যাকে দেবেন আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগের স্বপক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মনোনীত প্রার্থীকে সবাই মিলে জয়যুক্ত করবো।
বিএনপি: এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই। মুন্সীগঞ্জ সদর আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য আবদুল হাই এবারও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া, এই আসনে মনোনয়নে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দলের কেন্দ্রী সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন। এই দুই শীর্ষ নেতাকে ঘিরে এই নির্বাচনী আসনের নেতাকর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত।
আব্দুল হাই মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়া আসনে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে তাকে এ আসনে প্রার্থী না করে ঢাকার শ্যামপুরে (ঢাকা-৪) দেয়া হয়েছিল। একসময় তার তুমুল জনপ্রিয়তার কাছে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া আসনে আওয়ামী লীগ দাঁড়াতেই পারেনি। কিন্তু নানা কারণে সে ইমেজ ধরে রাখতে পারেননি। বিগত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী জয়ে আলোর মুখ দেখতে পায়নি। বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এদিকে, কামরুজ্জামান রতন গত বছরের ১৭ই ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জে সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গেলে আবদুল হাই ও তার লোকজন তাকে অপমান-অপদস্থ করার কারণে সেদিন থেকেই মুন্সীগঞ্জে বিএনপির কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত রয়েছেন। এই ঘটনা কেন্দ্রের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কান পর্যন্ত পৌঁছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন বলেন, অনেক কিছু বিবেচনা করার জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারিনি- এটা সত্য। কিন্তু এটা কোনো অন্তঃকোন্দল নয়। এখানে অনেক বড় ও অনেক যোগ্য প্রার্থী আছে- তাদের সবাইকে একত্রিত করে সমঝোতার কাছাকাছি চলে এসেছি। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কি না- চূড়ান্ত বিষয়টি দল এখনো জানায়নি। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে দল বা ঐক্যফ্রন্টের বিবেচনায় যোগ্য হলে এবং আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। দল আমাকে মনোনয়ন না দিলে গণতন্ত্রের স্বার্থে ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেবো। জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই বলেছেন, বিগত উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে অযোগ্য কোনো প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়নি। আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন ও দখলবাজির ঘটনায় প্রার্থীরা ভালো করতে পারেনি। নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তিসহ সাত দফা দাবি মেনে নেয়ার দাবি চলছে। নিজের ভোট দিতে পারবেন কি না সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে দল যাকেই মনোনয়ন দেয় তার পক্ষেই থাকবেন এবং দলীয় কোন্দলও মিটে যাবে।
ওদিকে জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাতেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এএফএম আরিফউজ্জামান দিদারের নাম শোনা যাচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status