বিশ্বজমিন

ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে মুসলিম নেতার নির্বাচন বাতিল

মানবজমিন ডেস্ক

১০ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনী প্রচারণায় ‘ধর্মীয় ঘৃণা’ ছড়ানোর অভিযোগে একজন মুসলিম নেতার নির্বাচন বাতিল করেছে ভারতের কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট। তিনি ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দলের বিধায়ক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তার নির্বাচনকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ওই রাজনীতিকের নাম কে এম শাজি। তবে তিনি নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
এতে আরো বলা হয়, কে এম শাজির নির্বাচন শুধু বাতিল করা হয়েছে এমন নয়। একই সঙ্গে তিনি ছয় বছরের জন্য কোনও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। ফলে তার আসনে নতুন করে ভোট করার আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কে এম শাজির বিরোধী প্রার্থী মামলায় অভিযোগ করেছিলেন যে, মি. শাজির কর্মীরা প্রচার চালিয়েছে যে ‘তিনি মুসলমান বলেই তাকে ভোট দেয়া উচিত।’ কিছু প্রচারপত্রও বিলি করা হয়েছিল, যেখানে ‘ইসলামে অবিশ্বাসীদের ভোট না দিতে’ আহ্বান জানানো হয়েছিল।
তবে কে এম শাজি বিবিসিকে বলেন, ‘পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনওদিন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করি নি আমি। তাই যদি করতাম, তাহলে মৌলবাদীদের হুমকির মুখে পড়তাম না আমি। ওই হুমকির কারণে সরকার আমাকে পুলিশী নিরাপত্তা দিয়েছিল। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করলে নিশ্চয়ই মৌলবাদীরা আমার ওপরে চটে যেত না!’ তার কথায়, তার রাজনৈতিক জীবনে এটা একটা বড় ধাক্কা, তবে তিনি উচ্চতর বেঞ্চে এবং শেষমেশ সুপ্রীম কোর্টে যাবেন এই রায়ের বিরুদ্ধে।
ভারতের আইনে ভোটে ধর্মকে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই দোষী ব্যক্তিকে ছয় বছর কোনও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে দেওয়ারও বিধান রয়েছে। তবে ভারতের নির্বাচনী রাজনীতির ওপরে দীর্ঘদিন ধরে নজর রাখে যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি, সেই অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফমর্স বা এডিআর বলছে- ধর্মকে ব্যবহার করা এবং সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোর বহু ঘটনা ঘটলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সচরাচর নেওয়া হয় না।
নির্বাচনের সময়ে যে হলফনামা প্রার্থীরা জমা দেন, সেগুলি বিশ্লেষণ করে এডিআর বলছে, ১৫ জন সংসদ সদস্য এবং ৪৩ জন বিভিন্ন রাজ্য বিধানসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে পুলিশ। ১৫ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১০জনই বিজেপির এবং বাকিদের মধ্যে যেমন রয়েছেন আসামের মুসলিম প্রধান দল এআইইউডিএফ বা দক্ষিণের এমআইএম, তেমনই আছেন হিন্দুত্ববাদী শিবসেনার সংসদ সদস্যও।
এডিআরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জগদীপ ছোকান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই বাস্তব যে ঘৃণামূলক ভাষণ দেওয়াটা একটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ আর মনেই করে না যে এটা ভুল, বেআইনী। হয়তো পত্রপত্রিকায় ছাপা হয় ওই ঘৃণামূলক ভাষণের কথা, কিন্তু কেউ আর সেটার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহ দেখায় না।’
এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবার দায়িত্বটা মূলত নির্বাচন কমিশনের ওপরে, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে অধ্যাপক জগদীপ ছোকার বলছিলেন, ‘তাদের মূল লক্ষ্যটা থাকে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনটা পার করিয়ে দেয়ার। তাই কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক করা ছাড়া বিশেষ কিছু করা হয় না।’
তিনি বলেন, কমিশনের লোকবলও তেমন নয় যাতে তারা দীর্ঘদিন ধরে এই আইনী প্রক্রিয়াগুলো চালাতে পারেন।’
ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলীম লীগের কাজকর্ম মূলত দক্ষিণ ভারতের কেরালা পাশ্ববর্তী তামিলনাডু রাজ্যের কিছু অঞ্চলে বিস্তৃত। দলটি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের অংশীদার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status