শেষের পাতা

নি র্বা চ নী হা ল চা ল ঢাকা ২০

কোন্দলই কাল হবে বড় দুই দলের

আজাহারুল ইসলাম রাজু, ধামরাই (ঢাকা) থেকে

১০ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা-২০ ধামরাই আসন থেকে আওয়ামী লীগ পৃষ্ঠা ও বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। যদিও বড় দুই দলেই দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে রয়েছে। তারপরও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারা পথসভা, উঠান বৈঠক, জনসভা ও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। দু’দল থেকে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগ থেকে চারজন এবং বিএনপি থেকে চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। বিএনপির প্রার্থীরা প্রকাশ্যে প্রচারণা না চালালেও গোপনে এগিয়েছে অনেক দূর। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মালেক, সাবেক এমপি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ও বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমদ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌরমেয়র গোলাম কবির, আওয়ামী লীগের লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক মনোয়ার হোসেন।

আর বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমান ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা আহম্মেদ।

২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল রহস্যজনক কারণে সাবেক এমপি বেনজীর আহমদকে মনোনয়ন না দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মালেককে মনোনয়ন  দেন। এতে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় কোন্দল ভুলে এমপি এমএ মালেক সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ এক মঞ্চে ওঠেন। এ ভাবেই চলতে থাকে বছর দেড়েক। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বান ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে সাবেক এমপি বেনজীর আহমদের প্রার্থী দাঁড় করানোর অভিযোগ তোলেন এমপি এমএ মালেক। এরপর থেকে শুরু হয় কোন্দল। সেই কোন্দল এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এখন সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ ও বর্তমান এমপি এমএ মালেক পাল্টাপাল্টি সমাবেশে একে-অপরেব বিরুদ্ধে বক্তব্যও দিয়ে থাকেন। এখন কেউ কারো মুখ পর্যন্তও দেখছেন না।

 সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ বলয়ের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সাকু জানান, সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ একজন শান্তিপ্রিয় লোক। তিনি এলাকায় কোনো অশান্তি চান না। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। তিনি মনোনয়ন পেলে জয় নিশিচত।

ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ধামরাই আসন থেকে জোরালো মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি এমএ মালেক। তার পক্ষে আমরা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নিয়মিত নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছি এবং গণসংযোগ করছি। এতে আমরা এলাকাবাসীর কাছে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। কর্মিবান্ধব ও গরিব দুঃখী মানুষের নেতা হিসেবে এমএ মালেককে ফের ধামরাইবাসী এমপি হিসেবে দেখতে চান। এ সময় তিনি সরকারের মাধ্যমে বর্তমান এমপি ব্যাপক উন্নয়ন করেছে এমন কথা তুলে ধরেন।

 ধামরাই পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার জানান, দিন পরিবর্তন হয়েছে। দেশ উন্নয়নের মহসড়কে। সব কিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে। আমরাও চাই ধামরাইয়ে পরিবর্তন। তাই ঢাকা-২০ আসনে কোনো নতুন মুখ এমপি হিসেবে আসলে ধামরাইবাসী তা সাদরে গ্রহণ করবে এবং ধামরাইয়ে আরো উন্নয়ন হবে। এ সময় তিনি নতুন তরুণ মেধাবী পরিছন্ন ত্যাগী নেতা হিসেবে ধামরাই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌরমেয়র গোলাম কবিরের কথা তুলে ধরে বলেন, তিনি ধামরাইয়ের পৌর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারী। বিএনপির জ্বালাও পোড়াও হরতালের সময় তার নেতৃত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। লগি-বৈঠা নিয়ে তিনি ছিলেন রাজপথে। এ ছাড়াও পারিবারিক অবস্থান থেকে তিনি আওয়ামী পরিবারের লোক। তিনি পৌরমেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ধামরাই পৌরসভায়। তাই আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাকেই আমরা এমপি হিসেবে দেখতে চাই।

আওয়ামী লীগের লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক মনোয়ার প্রতিদিন তার কর্মী-সমর্থক নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে পথসভা করছেন। এ সময় তিনি তুলে ধরছেন তার নিজের যোগ্যতা। তিনি পথসভায় জানান, প্রধানমন্ত্রীর দুঃসময়ে তিনি তার পাশে থেকেছেন। ওই সময় তিনি হামলা মামলা জেল জুলুম ও বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ সব পথসভায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করেন।

ধামরাই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র গোলাম কবির জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নৌকার পক্ষে গণসংযোগ উঠান বৈঠক ও সরকারের ১০ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নের লিফলেট বিতরণ করছি। আশা করি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আর ঢাকা-২০ আসনে তিনিও একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানান।

এমপি এমএ মালেক বলেন, ব্যক্তির থেকে দল বড় আর দলের থেকে দেশ বড়। তাই নিজের স্বার্থ নয় দেশ দল ও ধামরাইবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করছি।

সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ জানান, আমার সময়েও ধামরাইয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনে আমি জয়ী হব।

এদিকে, হারানো আসন ফিরে পেতে ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ হামলা মামলা ও পুলিশের গ্রেপ্তার ভয় মাথায় নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করছেন। নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি ও  সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের কাছে হারানো আসন উদ্ধার করে বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে পারবেন তিনি।

সুতিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান যুবদল নেতা রমিজুর রহমান চৌধুরী রুমা মানবজমিনকে জানান, প্রার্থী দুর্বলের কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয় ও শক্তিশালী মেধাবী তরুণ প্রার্থী ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। কারণ তার নেতৃত্বেই ধামরাই এখন চাঙ্গা। এ ছাড়াও কর্মী-সমর্থকদের জন্য তার চিন্তা-ভাবনাটাও ভিন্ন। তিনি নিজের জন্য নয় তার নেতাকর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই তাদের পাশে দাঁড়াতে চান। সুখ দুঃখের অংশীদার হতে চান।

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে রায় বাতিল করতে হবে। এরপর নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং নির্ভয়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বিএনপির জয় ঠেকাতে পারবে না কেউ। তিনি এ আসনের জোরালো মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি জানান, তার বাড়ি ধামরাইয়ের মেইন পয়েন্ট শিল্প এলাকার কালামপুরে। তার বাবা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ও সেই সময় উপজেলা শিক্ষক কমিটির ২৫ বছর সভাপতি ছিলেন। তার গ্রহণযোগ্যতা ও আমার জনপ্রিয়তা জয়ের পথ সুগম করবে বলে তিনি আশাবাদী। এ ছাড়াও তিনি বলেন, আমাকে নাশকতাসহ ২৫টি রাজনৈতিক মামলা দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি পিছু হটতে শিখিনি। মামলা হামলা গ্রেপ্তারের ভয়ে ভীত না হয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাব আমি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status