ইলেকশন কর্নার

নি র্বা চ নী হা ল চা ল, কুড়িগ্রাম ৩

জাপার দুর্গ ভাঙতে মরিয়া বিএনপি ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ

আবু সাঈদ সরকার, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) থেকে

১০ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৮:০০ পূর্বাহ্ন


একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চলছে ভোটের আলোচনা। পছন্দের দল ও প্রার্থীকে জেতাতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররা। তবে জোট-মহাজোটে হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে সে সম্ভাবনা। আওয়ামী লীগের হাফ-ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রচারণায় থাকলেও কারো কারো ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন আছে ভোটারদের মাঝে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সম্প্রতি উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে এখন অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে। অল্প সময়ে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতিসহ উপজেলায় আধুনিক সেবা দেয়ার ঘোষণায় আবারো চমক দেখাতে পারেন তিনি। এদিকে, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অনেকটা শক্তিশালী এ উপজেলায়। তারাও ছাড় দিতে নারাজ। বর্তমানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিতাস গ্যাসের সাবেক মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হকও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় জামায়াত ও বাম দলগুলোর সমর্থনও অনেকটা নির্ভর করবে ভোটে জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশে। উপজেলা শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারসহ রাস্তা-ঘাটের গাছে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের বিলবোর্ড ও পোস্টার। দলীয়কর্মী সমর্থকদের নিয়ে চলছে উঠান বৈঠক, কর্মিসভা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত কুড়িগ্রাম-৩ আসনটি দখলে নিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে, ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টিও। ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর থেকে এই আসনটি বিএনপির দখলে চলে যায়। এরপর রাজনীতির পালাবদলে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর জাতীয় পার্টির দখলে আসে এ আসনটি। দীর্ঘদিন পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে  তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দীর্ঘসময় এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো সংসদ সদস্য না থাকায় আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী অবস্থান তৈরি হয়। এর প্রভাব পড়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দুইটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করলেও বাকি ইউনিয়নগুলোতে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের মূল কারণ ছিল দলীয় কোন্দল। সব মিলিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ’৯৬ সালের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ নির্বাচিত হয়ে আসন ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে তার ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালু নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জাপা প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মতিয়ার রহমান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী একেএম মাঈদুল ইসলাম বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে মহাজোট প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে মাঈদুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। মাঈদুল ইসলামের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হলে ২০১৮ সালের ২৫শে জুলাই উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার বিজয়ী হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সবচেয়ে বেশি। ২৫শে জুলাইয়ের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মতিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজাদুর রহমান তালুকদার সাজু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম ভূঁইয়া। শাসকদলের এসব মনোনয়ন প্রত্যাশী গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি তাসভীর-উল ইসলাম। তিনিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে সারা ফেলেছেন তিনি। তবে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল খালেকও গণসংযোগ করছেন। সম্প্রতি প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক জাতীয় পার্টি (জেপি)তে যোগদান করে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। কুড়িগ্রাম-৩ আসনটি উলিপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার তিনলাখ ৩ হাজার ৫৬৭, পুরুষ ভোটার একলাখ ৪৭ হাজার ৭০৩ জন ও মহিলা ভোটার একলাখ ৫৬ হাজার ৬৪ জন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status