শেষের পাতা
সিপিডির গবেষণা
উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৯ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান লাভ, এসডিজির লক্ষ্য অর্জন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে রাজস্ব আহরণের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব সংগ্রহ ও কর আহরণ কোনো ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়নি। উন্নয়নশীল দেশসমূহের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। গতকাল গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অনুঘটক: সংগ্রহ ও ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত গবেষণায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশররফ হোসেন ভূঁইয়া। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম, আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি র্যাগন্যার গুডমুন্ডসন, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১০ সালে মোট করদাতার মাত্র ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ আয়কর দিয়েছে। প্রকৃত করদাতার সংখ্যা দ্বিগুণ করলে আয়কর-জিডিপির অনুপাত এক দশমিক পাঁচ শতাংশ হতো। ৩২ শতাংশ সামর্থ্যবান ব্যক্তি ২০১৭ সালে আয়কর দিয়েছে। আর উচ্চ আয়ের ২৫ শতাংশের এক-তৃতীয়াংশ আয়কর প্রদান করেনি। ৭৫ শতাংশ ব্যক্তির ধারণা কর ব্যবস্থা ধনীদের পক্ষপাতদুষ্ট। আর ৫০ শতাংশ কর ব্যবস্থাকে জটিল বলে মনে করে। আর ৮৫ শতাংশ কর ব্যবস্থায় সরকারি সেবা ও গুণগত মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। আর ৬৫ শতাংশ বলেছে কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি বিদ্যামান। এছাড়া কর আদায় বৃদ্ধি করতে সিপিডি কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এগুলো মধ্যে কর অফিসের ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। কর অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করা ও কর ফাঁকি দেয়া ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া নিম্ন-আয়ের ব্যক্তিদের সহজতর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। স্কুল পর্যায় থেকেই কর ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়ার পাশাপাশি সরকারি সেবার মান বাড়াতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসন পরিপূরক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে সুশাসন জরুরি। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন নেই, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। অপরাধীদেরকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে, সেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে কর ছাড় দেয়া হয়। এছাড়া কেউ অপরাধ করেও শাস্তি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করে কর আদায়ে ন্যায় বিচারের কথা বলে কোনো লাভ নেই। দেশে বিদেশি সহায়তা নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বিদেশি অর্থ নেয়া হবে না এটি বলার সক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি। কারণ, দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতু করায় দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ স্থির হয়ে আছে। তিনি বলেন, দেশে বিদেশি সহায়তার বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে ভৌত অবকাঠামো খাতে। সে তুলনায় সামাজিক অবকাঠামো খাতে সহায়তার ব্যবহার একেবারে কমে গেছে। বিশেষ করে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি সহায়তার ব্যবহার কম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ট্যাক্স নেট বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ব্যবসা ও করবান্ধব রাজস্ব বোর্ড তৈরির চেষ্টা করছি। এখন আয়কর রিটার্ন দাতার সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে আয়কর ও জিডিপির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করের আওতা বাড়ানোর বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে ঢাকা শহরের ফ্ল্যাট ও বাড়িগুলোর জরিপ করা হচ্ছে। এই ফ্ল্যাট ও বাড়ির মধ্যে থাকা ভাড়াটে ও ফ্ল্যাটের মালিকদের সবাইকে রিটার্নের মাধ্যমে আগামী ৬ মাসের মধ্যে এনবিআরের কর জালের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। পাশাপাশি উপজেলার ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনকেও করের আওতায় আনা হবে। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সারা দেশে এখন ই-টিআইএনের সংখ্য?া ৩৫ লাখের বেশি। কিন্তু এর মধ্যে ২০ লাখ রিটার্ন দিচ্ছে না। অন্যতম কারণ কর নিয়ে একধরনের ভয় আছে। তাই করদাতাবান্ধব এনবিআর গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, এর মধ্যে ট্যাক্স কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করা এবং জনবল বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশ?া করি এর সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা আমাকে সহায়তা করছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর মেম্বারদেরকে একেবারে বের করে দেয়া সম্ভব নয়।
রাগনার গুডমান্ডসন বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে বাংলাদেশে কর আদায় একেবারে কম। জিডিপির অনুপাতে মাত্র ৯ শতাংশ কর আদায় হয়। দক্ষিণ এশিয়াতে এটি সর্বনিম্ন। ফলে কর আদায় বাড়াতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার ৭.৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলছে। দেশের সম্পদ বাড়ছে। কিন্তু দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। আবার সম্পদের তুলনায় আয় কম দেখানো হচ্ছে। নেপালের মাথাপিছু আয় আমাদের অর্ধেক হলেও জিডিপির তুলনায় কর আদায় ২৪, শতাংশ যেখানে আমাদের দেশে মাত্র ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, আবার লেবার সার্ভে রিপোর্ট বলছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। ফলে সঙ্গে অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাবের মিল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, কর আদায়ে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষ করে কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। এ সময়ে করনীতি ও কাঠামোয় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে সিপিডি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, কর ব্যবস্থা নিয়ে ১ হাজার মানুষের মধ্যে জরিপ চালিয়েছে সিপিডি। এরমধ্যে ৩২ শতাংশ মানুষ আয় কর দিচ্ছে। জরিপে মতামত দেয়া ৬৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এনবিআরের কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি রয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করে এনবিআরের কর ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। উচ্চ আয়ের ২৫ শতাংশ মানুষের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর আয়কর দেয়নি। যারা দিয়েছেন, তারাও পুরোপুরি দেননি। কর ফাঁকি দিয়েছেন। জরিপে দেখানো হয়, ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কর ব্যবস্থায় ধনী-গরিবের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্ট। ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন এনবিআরের সেবা ও তার গুণগতমান বাড়ালে জনগণ কর দিতে উৎসাহিত হবে। সিপিডির সুপারিশে বল?া হয়, কর অফিসকে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ধনী অথচ কর ফাঁকি দেন এমন ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সমতাভিত্তিক কর ব্যবস্থা বিকশিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে অধিকতর ন্যায্য এবং আধুনিক সম্পত্তি ও সম্পদ কর চালু করতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশররফ হোসেন ভূঁইয়া। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম, আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি র্যাগন্যার গুডমুন্ডসন, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১০ সালে মোট করদাতার মাত্র ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ আয়কর দিয়েছে। প্রকৃত করদাতার সংখ্যা দ্বিগুণ করলে আয়কর-জিডিপির অনুপাত এক দশমিক পাঁচ শতাংশ হতো। ৩২ শতাংশ সামর্থ্যবান ব্যক্তি ২০১৭ সালে আয়কর দিয়েছে। আর উচ্চ আয়ের ২৫ শতাংশের এক-তৃতীয়াংশ আয়কর প্রদান করেনি। ৭৫ শতাংশ ব্যক্তির ধারণা কর ব্যবস্থা ধনীদের পক্ষপাতদুষ্ট। আর ৫০ শতাংশ কর ব্যবস্থাকে জটিল বলে মনে করে। আর ৮৫ শতাংশ কর ব্যবস্থায় সরকারি সেবা ও গুণগত মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। আর ৬৫ শতাংশ বলেছে কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি বিদ্যামান। এছাড়া কর আদায় বৃদ্ধি করতে সিপিডি কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এগুলো মধ্যে কর অফিসের ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। কর অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করা ও কর ফাঁকি দেয়া ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া নিম্ন-আয়ের ব্যক্তিদের সহজতর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। স্কুল পর্যায় থেকেই কর ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়ার পাশাপাশি সরকারি সেবার মান বাড়াতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসন পরিপূরক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে সুশাসন জরুরি। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন নেই, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। অপরাধীদেরকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে, সেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে কর ছাড় দেয়া হয়। এছাড়া কেউ অপরাধ করেও শাস্তি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করে কর আদায়ে ন্যায় বিচারের কথা বলে কোনো লাভ নেই। দেশে বিদেশি সহায়তা নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বিদেশি অর্থ নেয়া হবে না এটি বলার সক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি। কারণ, দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতু করায় দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ স্থির হয়ে আছে। তিনি বলেন, দেশে বিদেশি সহায়তার বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে ভৌত অবকাঠামো খাতে। সে তুলনায় সামাজিক অবকাঠামো খাতে সহায়তার ব্যবহার একেবারে কমে গেছে। বিশেষ করে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি সহায়তার ব্যবহার কম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ট্যাক্স নেট বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ব্যবসা ও করবান্ধব রাজস্ব বোর্ড তৈরির চেষ্টা করছি। এখন আয়কর রিটার্ন দাতার সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে আয়কর ও জিডিপির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করের আওতা বাড়ানোর বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে ঢাকা শহরের ফ্ল্যাট ও বাড়িগুলোর জরিপ করা হচ্ছে। এই ফ্ল্যাট ও বাড়ির মধ্যে থাকা ভাড়াটে ও ফ্ল্যাটের মালিকদের সবাইকে রিটার্নের মাধ্যমে আগামী ৬ মাসের মধ্যে এনবিআরের কর জালের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। পাশাপাশি উপজেলার ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনকেও করের আওতায় আনা হবে। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সারা দেশে এখন ই-টিআইএনের সংখ্য?া ৩৫ লাখের বেশি। কিন্তু এর মধ্যে ২০ লাখ রিটার্ন দিচ্ছে না। অন্যতম কারণ কর নিয়ে একধরনের ভয় আছে। তাই করদাতাবান্ধব এনবিআর গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, এর মধ্যে ট্যাক্স কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করা এবং জনবল বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশ?া করি এর সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা আমাকে সহায়তা করছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর মেম্বারদেরকে একেবারে বের করে দেয়া সম্ভব নয়।
রাগনার গুডমান্ডসন বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে বাংলাদেশে কর আদায় একেবারে কম। জিডিপির অনুপাতে মাত্র ৯ শতাংশ কর আদায় হয়। দক্ষিণ এশিয়াতে এটি সর্বনিম্ন। ফলে কর আদায় বাড়াতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার ৭.৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলছে। দেশের সম্পদ বাড়ছে। কিন্তু দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। আবার সম্পদের তুলনায় আয় কম দেখানো হচ্ছে। নেপালের মাথাপিছু আয় আমাদের অর্ধেক হলেও জিডিপির তুলনায় কর আদায় ২৪, শতাংশ যেখানে আমাদের দেশে মাত্র ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, আবার লেবার সার্ভে রিপোর্ট বলছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। ফলে সঙ্গে অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাবের মিল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, কর আদায়ে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষ করে কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। এ সময়ে করনীতি ও কাঠামোয় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে সিপিডি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, কর ব্যবস্থা নিয়ে ১ হাজার মানুষের মধ্যে জরিপ চালিয়েছে সিপিডি। এরমধ্যে ৩২ শতাংশ মানুষ আয় কর দিচ্ছে। জরিপে মতামত দেয়া ৬৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এনবিআরের কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি রয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করে এনবিআরের কর ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। উচ্চ আয়ের ২৫ শতাংশ মানুষের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর আয়কর দেয়নি। যারা দিয়েছেন, তারাও পুরোপুরি দেননি। কর ফাঁকি দিয়েছেন। জরিপে দেখানো হয়, ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কর ব্যবস্থায় ধনী-গরিবের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্ট। ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন এনবিআরের সেবা ও তার গুণগতমান বাড়ালে জনগণ কর দিতে উৎসাহিত হবে। সিপিডির সুপারিশে বল?া হয়, কর অফিসকে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ধনী অথচ কর ফাঁকি দেন এমন ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সমতাভিত্তিক কর ব্যবস্থা বিকশিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে অধিকতর ন্যায্য এবং আধুনিক সম্পত্তি ও সম্পদ কর চালু করতে হবে।