বাংলারজমিন

ঘাটাইলে উচ্ছেদ অভিযান ভূমিহীনদের কান্না

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

৮ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

ভালোই চলছিল বিধবা কুবজান বেওয়ার (৬৫)-র সংসার। কয়েক বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর পুত্র সন্তানহীন তিন মেয়ে, কলেজ পড়ুয়া নাতনি আর মেয়ের জামাই নিয়ে তার সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই বিধিবহির্ভূতভাবে ভূমি অবমুক্ত করার নামে বিনা নোটিশে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো কুপজান বেওয়ার। নেই কোনো নিজস্ব এক খণ্ড জমি। বংশ পরমপরায় সরকারের পেরিফেরি ভুক্ত জায়গায় প্রায় শত বছর ধরে তাদের বাস। কষ্টের অনুভূতির কথা বলছিলেন কুপজান, যেদিন উচ্ছেদ অভিযানে ঘর বাড়ি ভাঙা হলো মনে হয়েছিল বুকের পাঁজরের হাড়গুলো ভাঙা হচ্ছে। কোথায় থাকবো, কি করবো, মাথা গোঁজার ঠাঁই যে আমার নাই। আমার সহায় সম্বল আর কিছুই নাই, ঘর ভেঙে ফেলায় কলেজ পড়ুয়া নাতনিসহ অন্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছি। কথাগুলো বলছিলেন আর চামড়ায় কুঁচ ধরা গাল বেয়ে বাঁধ ভাঙা চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি সরকারের কাছে দাবি করেন লিজ যদি দিতেই হয় তবে আমাদের দেয়া হোক। বসতঘর উচ্ছেদ করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা ২৬টি পরিবার তাদের ভিটে এখনো আঁকড়ে ধরে আছে। সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী বাজারে (চৌরাস্তার মোড়ে) সরকারের পেরিফেরি ভুক্ত জায়গা রয়েছে কমপক্ষে ২৬ একর। আর এর পুরোটাই রয়েছে বেদখলে। গত ২৬শে সেপ্টেম্বর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া সুলতানার নেতৃত্বে এ বাজারে একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় গত ৭ই অক্টোবর পুলিশ নিয়ে ফের দ্বিতীয় দফা উচ্ছেদ অভিযানে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ। এ সময় স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা তার ওপর চড়াও হয়ে ধাওয়া করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গাড়িতে ওঠে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন তিনি। পরে এ ঘটনায় ধলাপাড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগে ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন কোনো প্রকার আদালতের অনুমতি ছাড়াই বিনা নোটিশে উচ্ছেদের নামে ভূমি অবমুক্ত করার অভিযান পরিচালনা করে। কথা হয় লিজ গ্রহীতা আকবর আলী ও আঃ ছামাদের সঙ্গে তারা বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই লিজ নেয়া হয়েছে এখানে অর্থের কোনো লেনদেন হয়নি। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ বলেন, ওখানে কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালাইনি এমনকি কোনো ঘটনাও ঘটেনি। তাহলে মামলা করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মামলা করিনি। মামলা করেছে তহশিলদার। এ নিয়ে কোনো প্রকার লেখালেখি করলে প্রতিবেদককে মামলা করার ভয় দেখান। উচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী ও টাঙ্গাইল জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট এস আকবর খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে কোনো উচ্ছেদ অভিযানে আদালতের অনুমতি লাগবে। আর যাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে তাদের আগেই নোটিশ করতে হবে কোনো স্থাপনা থাকলে তা সরিয়ে নেয়ার জন্য। এ ঘটনায় কুবজান বেওয়া বাদী হয়ে  ঘাটাইল আমলি আদালতে একটি স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status