শিক্ষাঙ্গন

বেরোবিতে চরম ভোগান্তির শিকার শিক্ষার্থীরা

বেরোবি প্রতিনিধি

৫ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ২:৫৩ পূর্বাহ্ন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার দশ বছর পার করলেও এখনো স্থাপন করা হয়নি স্থায়ী ব্যাংক শাখা। ফলে ফরম পূূরণ এবং ভর্তির অর্থসহ বিভিন্ন ফি প্রদানে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এক দশকেও স্থায়ী ব্যাংক না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি অবগত থাকলেও ১০ বছরেও কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অবকাঠামোগত যে পরিকল্পনা করা হয় সেটাতেও ব্যাংক স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপণের ব্যাপারে যেমন নীরব থেকেছে বিগত প্রশাসন। তেমনি এ ব্যাপারে বর্তমান প্রশাসনও তেমন সরব নয়। এতে দিনের পর দিন শিক্ষার্থীরা ফি প্রদান করতে বাড়ছে চরম ভোগান্তি।

জানা যায়, রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, লোক-প্রশাসন, বাংলা, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রায় ১০ টি ব্যাচের সেমিস্টার ফি, ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়ার তারিখ  ছিলো। একটি ছোট রুমে অস্থায়ী ব্যাংক বুথে প্রায় ৫শ শিক্ষার্থী তাদের বিভিন্ন ফি জমা দিতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ব্যাংক শাখা না থাকায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে টাকা জমা দিতে হয়েছে। সামনে পরীক্ষা আর আজ প্রায় ৪ ঘন্টা সময় নষ্ট হলো।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিকেম আলী ও আবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজকেই আমাদের ফরম পূরণের টাকা জমার শেষ তারিখ। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি এখন বাজে সাড়ে ১২ টা এখন পযর্ন্ত টাকা জমা দিতে পারিনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আখলাক বলেন, প্রায় ২ ঘন্টা ধরে ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়ার জন্য দাঁিড়য়ে আছি । বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন স্থায়ী ব্যাংক বুথ নেই তার উপর বিভাগগুলো হঠাৎ করে ভর্তি তারিখ নির্ধারণ করে। এতে করে একদিনে একাধিক বিভাগের ভর্তি -ফরম পূরণের তারিখ একই দিনে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়।

মুখতার ইলাহী হলের শিক্ষার্থী মাহবুল মন্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্লাস না করে হল ফি জমা দিতে এসেও জমা দিতে পারলাম না অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর লালবাগস্থ জনতা ব্যাংকের একটি অস্থায়ী ব্যাংক বুথের মাধ্যমে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি, হল ফি প্রদানসহ সকল অর্থ প্রদানের কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের একটি অস্থায়ী কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষার্থীদের এ অর্থ গ্রহণের কাজ। সপ্তাহে পাঁচদিন বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত চলে অর্থ জমা কার্যক্রম। সকল প্রকার অর্থ গ্রহণে দুই জন কর্মকর্তা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি শিক্ষার্থীদের সময় অপচয় হচ্ছে দ্বিগুণ হারে। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সৃষ্টি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকের স্থায়ী শাখা স্থাপনে নজর দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বেহাল দশায় চলছে অর্থ জমা প্রদানের কাজ। বিশেষ করে সেমিস্টার পরীক্ষার পূর্বে একই সাথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন  শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অস্থায়ী ব্যাংক বুথেই শিক্ষার্থীদের একই সাথে হল ভর্তি, একাডেমিক সেশনের ভর্তি, ফরম পূরণের অর্থ  , মেডিকেল ও লাইব্রেরি কার্ডের জন্য অর্থ , অনার্স ও মাস্টার্স এর সার্টিফিকেট উত্তোলনে অর্থ প্রদানসহ যাবতীয় অর্থ জমা দিতে হয়। একটি ভাড়া করা কক্ষে সেখানে এতগুলো কাজ সংক্ষিপ্ত সময়ে মাত্র দুইজন কর্মকর্তাকে কাজগুলো সামলাতে হয়। যার ফলে টাকা জমা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাড়িঁয়ে থাকছে ঘন্টার পর ঘন্টা। দিনদিন ভোগান্তির মাত্রা বেড়েই চলছে শিক্ষার্থীদের ।

জনতা ব্যাংক লালবাগ শাখার অফিসার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা শুধু অর্থ জমা রাখি। আর  বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা স্থাপনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মৌখিক আলোচনা হয়েছে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, আমি ঢাকায় আছি তাই আজকের সমস্যার বিষয়টি জানতে পারেনি। আর বলা আছে ব্যাংক বুথে টাকা জমা দেয়ার সময় শিক্ষার্থীদের ভীড় দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের জন্য আরেক জন কর্মকর্তা কাজ করবে। কিন্তুু আজকের সমস্যার বিষয়টি এখনো কেউ জানায়নি।

এই সমস্যার সমাধানের স্থায়ী পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি আলাদা ব্যাংক বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা আছে আমাদের। তবে কবে নাগাদ হবে এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সময় বলেননি তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status