ষোলো আনা

অসুস্থ বিড়ালের আশ্রয়স্থল

সাদ ইসলাম শামস ও কামরুল ইসলাম

২ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

‘এই পাশা, একদম মারামারি করবি না।’ ‘স্বর্ণ লেজে ময়লা লাগিয়েছিস কীভাবে?’ ঠিক এভাবেই বিড়ালগুলোকে আদরের সুরে ধমকাচ্ছিল আদি। বিড়ালগুলোও আদির কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। এ যেন এক মধুর সম্পর্ক আদি ও তার বিড়ালগুলোর মাঝে।

আদি ‘আদি দ্য গুরু’ নামেই পরিচিত। মহল্লার অনেকে আদিকে ডাক্তার সাব বলেও ডাকে। ‘Cat Centre and cat Rescue’ এর একজন পরিচালক আদি। নিজের পশুপ্রেমী সত্তার কারণেই গড়ে তুলেছেন দুইটি পশু শেল্টার হোম। একটি ঢাকায় যেটির পরিচালনা করেন আদি। আরেকটি রয়েছে চট্টগ্রামের কাজির দেউরিতে যেটির পরিচালনায় আছেন আদির বন্ধু ফারহানা।

অসুস্থ, আঘাতপ্রাপ্ত, প্যারালাইজড ও অন্ধ বিড়ালের স্থান হয় তার শেল্টার হোমে। এটাই তার উদ্দেশ্য। আদির ঢাকার শেল্টারে পুরোটাজুড়েই রয়েছে বিড়াল। যে বিড়ালগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে আনা। বিড়ালগুলোর সেবাযত্ন করাই আদির মূল লক্ষ্য। বর্তমানে শেল্টারে বিড়াল আছে ২৯টি। বিড়ালগুলোর রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। পাশা, মিনি, স্বর্ণ,  টুনি ও আরো নানা নাম। নাম ধরে ডাকতেই বিড়ালগুলো ছুটে আসে। শুধু ডাকলেই নয়, আদিকে দেখলেই ছুটে আসে তার কাছে। ছুটে আসে আদর ও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। আদিও নিরাশ করে না বিড়ালগুলোকে। এ যেন এক সোনার সংসার একপাল বিড়ালকে নিয়ে।
বিড়ালের সেবাযত্নের কাজে আসার কারণ সম্পর্কে আদি জানান, জীবজন্তু, পশুপাখির ওপর ছোটবেলা থেকেই দুর্বলতা ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে প্রথম পশুপাখি রেসকিউ করা শুরু করেন। তার একটি কালো বিড়াল ছিল। বিড়ালটিকে কেউ আঘাত করে মেরে ফেলে। এর পর থেকেই তিনি এ কাজে জড়িয়ে যান। ২০১৭ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখ চালু করেন এই 'Cat centre and Cat rescue' সংগঠন। কোনো আঘাতপ্রাপ্ত বিড়াল দেখলেই তিনি নিয়ে আসেন শেল্টারে। অথবা কেউ ফোন করে অসুস্থ বিড়ালের কথা জানালেও নিয়ে আসেন এই শেল্টারে।

আদি বলেন, এ বিড়ালগুলো দেখাশোনা করার জন্য আমাকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। তাতে আমার কোনো আফসোস নাই।

আদি রায়ের বাজারে থাকেন তিন রুমের একটি ফ্ল্যাটে। এই ভাড়া বাড়িটিই তার শেল্টার হোম। ফ্ল্যাটে নেই কোনো আসবাবপত্র। তিন রুমজুড়েই আধিপত্য বিড়ালগুলোর। ঠিক এক কোনায় আদির ঘুমায় চাদর বিছিয়ে। আর তার আশেপাশেই ঘুরঘুর করে বিড়ালগুলো। তার বেড়ে ওঠা রাজধানীর হাজারীবাগে। এখন থাকেন একলা। বিড়ালগুলোকে প্রতিদিন ক্যাটফুড, মাছ, দুধ খাওয়ান তিনি। এর পাশাপাশি ঝিগাতলায় রাস্তার অনেক কুকুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন।

এই সেন্টারে অর্থায়ন কীভাবে হয়? আদি বলেন, আমাদের একটি পেটফুডের দোকান আছে। যার ৬৫ শতাংশ লভ্যাংশ আসে সেন্টারে। তাছাড়া মাঝে মাঝে ফ্রিল্যান্সিং করি। আর টাকার বিনিময়ে  অনেকে তার বিড়ালকে শেল্টারে কিছুদিনের জন্য রেখে যায়। সেখান থেকে কিছু টাকা আসে। তবে, আমি টাকার বিনিময়ে আমার বিড়াল বিক্রি করি না। অনেকে বিড়াল দত্তক নিয়ে থাকেন। তবে, দত্তক বিড়ালের জন্য কোনো টাকা নেয়া হয় না।

আদিকে শেল্টার পরিবর্তন করতে হয়েছে বেশ ক’বার। কারণ অনেকে এই বিড়াল শেল্টারটি পছন্দ করে না। তবে, আদি জানায় বর্তমানের শেল্টারটি একটি সুবিধামতো জায়গায় আছে। আশেপাশের কোনো প্রতিবেশী এ শেল্টার নিয়ে কোনো অভিযোগ দেয়নি।

এই সেন্টার নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? আদি বলেন, এইতো নভেম্বরের ৩ তারিখে এই সেন্টারের প্রথম বর্ষপূর্তি। খুব ধূমধাম করে পালন করবো। আর আশা আছে এই সেন্টারটিকে অনেক বড় করবো। যেখানে সব পশুপাখির শেল্টারের ব্যবস্থা হবে। থাকবে বিড়াল,  কুকুর ও পাখিসহ আরো জীবজন্তুর আলাদা আলাদা শেল্টার। লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের শেল্টার দেখতে আসবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status