বিশ্বজমিন

গোয়েন্দাজাল-৩

মোসাদকান্ডে সুন্দরী যুবতীসহ বিছানায় ধরা পড়লেন জিয়াদ

মোহাম্মদ আবুল হোসেন

৩১ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

লেবাননের সুপরিচিত আর্টিস্ট, সাংবাদিক ও কাহিনীকার জিয়াদ আহমদ ইতানি। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, গোয়েন্দা সংস্থার সব গোপন খবর, এমন কি রাষ্ট্রের গোপন তথ্য বের করে নিতে তার পিছনে অতি সুন্দরী এক যুবতীকে লেলিয়ে দিলো ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ওই যুবতী মোসাদের একজন এজেন্ট হয়ে জিয়াদের  সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি একজন সুইডিশ নাগরিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। তার সঙ্গে আস্তে আস্তে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জিয়াদ সাংবাদিক হলেও বুঝতে পারেন নি ওই যুবতী মোসাদের এজেন্ট। তাদের প্রেম যখন পরিণত তখন তা শুধু মৌখিক কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না। সেই সম্পর্ক গড়ালো বিছানায়। উন্মাতাল প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে তারা যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন। একবার দু’বার নয়। অনেকবার এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওই যুবতীর সঙ্গে জিয়াদ যখন বিছানায় বেসামাল তখন সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিওতে ধারণ করে মোসাদের অন্য এজেন্টরা। ব্যাস, কেল্লাফতে! জিয়াদ আহমাদ ইতানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হলো মোসাদের পক্ষ থেকে। বলা হলো লেবাননের সব কিছুতে তাকে গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে তাকে। এতে অস্বীকৃতি জানান প্রথম দিকে জিয়াদ। কিন্তু তাকে চাপ দেয়া হয়। বলা হয়, ওই যুবতীর সঙ্গে তার যৌন সম্পর্কের ভিডিও আছে তাদের হাতে। তিনি যদি মোসাদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে ওই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়া হবে। এমন চাপে পড়ে জিয়াদ আহমাদ ইতানি রাজি হয়ে যান মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে। ঘটনাটি খুব বেশিদিন আগের নয়। ২০১৭ সালে এ ঘটনায় ইসরাইলের গুপ্তচর সন্দেহে এ বছরই ২৪ শে নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় জিয়াদ আহমাদ ইতানিকে। অভিযোগ আনা হয়, লেবাননের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছেন তিনি। এমন অভিযোগ নিয়ে কাজ করে সরকারি সংস্থা লেবানিজ স্টেটস সিকিউরিটি। তারা নিশ্চিত করে যে, ইসরাইলের মোসাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন জিয়াদ। এই ইসরাইল এবং লেবানন হলো পরস্পরের ঘোর বিরোধী রাষ্ট্র। এক পর্যায়ে বিবৃতি দেয়া হয়। বলা হয়, বৈরুতে জিয়াদের বাসায় অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। সেখানে এমন দাবির পক্ষে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, চারটি ল্যাপটপ, ৫টি মোবাইল ফোন। এতে করে গোপন সব ডাটা সংরক্ষণ করতেন তিনি। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জিয়াদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছে।
আরব অঞ্চলে গোয়েন্দাগিরি চালাতে গিয়ে মোসাদ এমনি উপায়ে অনেক এজেন্টকে ফাঁদে ফেলে তাদের দলে ভেড়ায়। সুন্দরীদের ব্যবহার করে এভাবে সদস্য সংগ্রহ করা বা শিকার ধরাকে বলা হয় হানি ট্রাপ। ১৯৫০ এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত মোসাদ আরব অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাত শ্রেণিকে এক্ষেত্রে টার্গেট করেছে। কিন্তু জিয়াদ আহমাদ ইতানির মতো একজন সাংবাদিককে ইসরাইলের গুপ্তচর বানানোর মতো বিষয় কমই ঘটেছে। দৈনিক আল আকবার পত্রিকার উপ সম্পাদক পিয়েরে আবি সাব বলেন, জিয়াদের ঘটনাটি বলে দেয় মোসাদ এ অঞ্চলে নতুন এক গোয়েন্দা যুদ্ধ শুরু করেছে। তারা আরব অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করে এমন একটি রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে যাতে তাদেরকে একটি স্বাভাবিক দেশ হিসেবে মেনে নেয় সবাই। ১৯৭৯ সালে ও ১৯৯৪ সালে যথাক্রমে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে ইসরাইল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। তার অনেক আগে থেকেই আরব ও ইউরোপিয় অঞ্চলে দায়মুক্তি পাচ্ছে মোসাদ। এসব দেশে তারা ইসরাইলের শত্রুদের হত্যা করছে। তাদের সদস্য বৃদ্ধি করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফিলিস্তিনের বিখ্যাত বোদ্ধা ও লেখক ঘাসান কানাফানিকে ১৯৭২ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হত্যা করে ইসরাইলের মোসাদ। তারা ১৯৮২ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আরো হত্যা করে মিশনের পারমাণবিক বিজ্ঞানী ইয়াহিয়া আল মাশাদকে। তবে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে তারা শান্তিচুক্তি করার পর দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যার দিকে মনোনিবেশ করে। বর্তমানে অনেক আরব দেশের রাজধানীতে কাজ করছে মোসাদের বহু মিত্র। কতগুলো দেশে সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status