শেষের পাতা

রামরুর গবেষণা

তিন বছরে রেমিটেন্স কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার

৩১ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

তিন বছরের ব্যবধানে অভিবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমেছে ব্যাপকহারে। পুরুষকর্মীদের ক্ষেত্রে কমেছে ২৬ শতাংশ এবং নারীকর্মীদের ক্ষেত্রে কমেছে ১৫ শতাংশ। তবে এই সময়ে অভিবাসন ব্যয় কমেছে। এ তথ্য দিয়েছে, অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। প্রতিষ্ঠানটি ৬১৪৩টি পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে । ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২০টি উচ্চ, মধ্য ও স্বল্প অভিবাসন অধ্যুষিত এলাকার ওই পরিবারগুলোর ওপর ২ বার জরিপ চালানো হয়। এসব জরিপে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। রামরুর চেয়ার অধ্যাপক ড. তাসনীম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে গতকাল মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিএস) এর সহযোগিতায় আয়োজিত ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য এবং প্রবৃদ্ধির ওপরে অভিবাসনের ফলাফল’ বিষয়ক একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। তাসনিম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন ড. অনন্ত নীলিম, ড. সি. রাশাদ শাবাব এবং মাহমুদুল হাসান।

দুই বার একই পরিবারের ওপর চালানো জরিপে দেখা যায়, গত তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অভিবাসন ব্যয় কমেছে। ২০১৪ সালে এসব পরিবার থেকে যেসব পুরুষ বিদেশ গেছেন তাদের গড়ে খরচ হয়েছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১ টাকা। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে যারা বিদেশ গেছেন তাদের খরচ হয়েছে গড়ে ৩ লাখ ৪২ হাজার ২৫৪ টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে টাকার অঙ্কে বাংলাদেশ থেকে পুরুষ আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ব্যয় কমেছে ১০ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি হিসেব করলে প্রকৃত অভিবাসন ব্যয় ২৫ শতাংশ কমে আসে। নারীর অভিবাসন ব্যয় কমেছে ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি হিসাব করলে নারী অভিবাসন কমেছে ২১ শতাংশ।
এদিকে ২০১৪ সালের তুলনায় পুরুষ কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স ব্যাপকভাবে কমে গেছে। টাকার অঙ্কে তাদের রেমিটেন্স কমেছে ১১ শতাংশ, কিন্তু মূল্যস্ফীতি হিসাবে আনলে প্রকৃত রেমিটেন্স কমেছে ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে টাকার অঙ্কে নারী কর্মীদের রেমিটেন্স ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও মূল্যস্ফীতি হিসেবে ১৫ শতাংশ কমে গেছে।

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৪ সালে যারা দরিদ্র ছিলেন তাদের অনেকেই দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে দরিদ্র ছিল না এমন কিছু পরিবার এবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। ২০১৪ সালের জরিপের সময় যেসব পরিবার দরিদ্র ছিল তাদের ৬৪ ভাগই আর আগের অবস্থানে নেই। তারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে চলে গেছে। অন্যদিকে ২০১৭ সালে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করেছেন তাদের ৫৭ ভাগই ২০১৪ সালের জরিপের সময় দারিদ্র্যসীমার ওপরে অবস্থান করতেন। এই বাস্তবতায় এ গবেষণা গ্রন্থে দুই ধরনের দারিদ্র্যের কথা তুলে ধরেছে। এর একটি দীর্ঘকাল স্থায়ী দারিদ্র্য আরেকটি অস্থায়ী দারিদ্র্য। যারা দুটি জরিপের সময়ই দরিদ্র ছিলেন, তারা দীর্ঘকাল স্থায়ী দারিদ্র্যের শিকার। আর যারা যেকোনো একটি জরিপে ছিলেন, অথচ অন্য জরিপের সময় দরিদ্র ছিলেন না তাদেরকে বলা হয়েছে অস্থায়ী দারিদ্র্যের শিকার। অর্থাৎ এই গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে যারা উচ্চ আয়ের আশায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাচ্ছেন তারা অনেকেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন না। বরং তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, বিনা বেতনে কাজ এবং অসময়ে ফিরে আসার মতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, জাতীয়ভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় রেমিটেন্স প্রেরণ বৃদ্ধি হয়েছে বলে যে দাবি করে থাকে, তা এই গবেষণা চ্যালেঞ্জ করছে। কারণ তৃণমূল পর্যায়ের ডাটা যা প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় প্রক্রিয়ায় রেমিটেন্স আহরণের তথ্য সংগ্রহ করেছে তা থেকে দেখা যাচ্ছে, রেমিটেন্স কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ড. ফয়সাল আহমেদ মনে করেন, ভোগ এবং দারিদ্র্য সম্পর্কে রামরুর গবেষণা প্রাপ্ত তথ্য বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুইস অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড মিস এলসেসর মনে করেন, পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক অভিবাসন ঋণ প্রাপ্তির সুযোগে যে ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ অভিবাসনের সামাজিক মূল্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ফিরে আসার পরে আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের যে সাময়িক বেকারত্ব হয়, তা তাদের অনেক সময় দারিদ্র্যসীমার নীচে নিয়ে যায়। এ অবস্থা নিরসনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এসডিসি এবং রামরুর প্যানেল ডাটায় আয় এবং ভোগের মধ্যে যে তারতম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সবসময়ই আয়কে কম তুলে ধরে, কিন্তু ব্যয়ের যে হিসাব তারা দেয় সেটি সঠিক। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি চিফ (পরিকল্পনা) শরিফুদ্দিন, আইওএম-এর চিফ অব মিশন, বাংলাদেশ এবং বিএমইটির পরিচালক ড. নুরুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, রামরু ৬ হাজার ১৪৩টি পরিবারের মধ্যে ২ হাজার ৯৭৬টি আন্তর্জাতিক, ১ হাজার ৪৩১টি অভ্যন্তরীণ এবং ১ হাজার ৭৩৬টি অন-অভিবাসী পরিবারের ওপর এই জরিপ চালিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status