প্রথম পাতা

সংবাদ সম্মেলনে এলিস ওয়েলস

অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বার্তা দিয়েছি

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

জনমতের প্রতিফলন ঘটে এমন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের দেয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখ্য উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস। মৌলিক অধিকার বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ব্যাপারেও সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছেন তিনি। তিন দিনের সফরের শেষ দিন সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মার্কিন মন্ত্রী। রেডিসন হোটেলে  আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাটও উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে এলিস ওয়েলস বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল আর তা অতি দ্রুত বেড়ে চলেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক কাঠামোগুলো জোরদার করা গেলে তা এদেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যকে এগিয়ে নেবে। আর এ কারণেই আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মৌলিক অধিকার বিশেষ করে বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং জনমতের প্রতিফলন ঘটে এমন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দেয়া অঙ্গীকার রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি। এখানে অংশ নেয়া বৈঠকগুলোতে আমি যুক্তরাষ্ট্রের এ বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা জানতে চান গণমাধ্যমকর্মীরা। সম্প্রতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে এমন ধারণা আছে এ ধরনের প্রশ্নে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ফ্রন্টকে সমর্থন করছি না। বরং, যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছে। পৃথক প্রশ্নের জবাবে তিনি এও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হোক।

সব রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে এবং স্বাধীনভাবে তার রাজনৈতিক ভিশন ও নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের সামনে প্রদর্শন করতে পারে। সরকার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত যারা তারা যেন এ সুযোগ নিশ্চিত করে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশের মানুষই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবে কোন দল বা জোট তার নেতৃত্ব দেবে। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে এমন একটা নির্বাচন হোক যার মধ্য দিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রকৃত বা সত্যিকার প্রতিফলন ঘটে। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে কিনা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে আছেন। এ অবস্থায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে আগের বক্তব্যের পুনরুল্লেখ করে বলেন, আমরা এমন একটা পরিবেশ দেখতে চাই যাতে সব রাজনৈতিক দল মুক্তভাবে তার দলের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটির ক্ষেত্রে সুরক্ষা জরুরি। একই সঙ্গে ভাবতে হবে এটা যেন মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন না করে।

এই আইনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সেটা তারা দেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করে এ উদ্বেগ নিরসনের জন্য সরকার এবং সিভিল সোসাইটির মধ্যে সংলাপ হওয়াটা জরুরি। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল চীনের আধিপত্য রোধ বিশেষ করে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ এর মোকাবিলায় পাল্টা কৌশল কিনা জবাবে তিনি বলেন, তাদের কৌশলটা হচ্ছে একটা বিস্তৃত এবং সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি। এর আওতায় ট্রিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। যে পরিকল্পনা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শেয়ার করেছে। তার এই সফরে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের ব্যাপারে কাছাকাছি অবস্থানে আছে।

সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অধীনে বাংলাদেশে ৪ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে এলিস ওয়েলস বলেন, বৈদেশিক সামরিক সহায়তা হিসেবে দেয়া এ অর্থে বাংলাদেশের উপকূলীয় রাডারের ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, টহল নৌযান বহরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ এবং সম্প্রসারিত সামুদ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ সবগুলোই আমাদের ‘বঙ্গোপসাগর উদ্যোগ’ এর অংশ। তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সন্ধিস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভারত-প্রশান্ত মহসাগরীয় কৌশলের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে এটা স্পষ্ট ছিল যে, একটি অবাধ, মুক্ত, বিধিসম্মত ও আন্তঃসংযুক্ত অঞ্চলের রূপকল্পের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই কাছাকাছি। সফরকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর নিজের অভিজ্ঞতার কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মাত্রা ও বিশালতা গভীরভাবে অনুভব করেছি আমি। এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় অব্যাহতভাবে সহৃদয়তা দেখানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও এদেশের জনগণকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি। সংকটের একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নতুন শরণার্থীদের গ্রহণ, খাবার বিতরণ এবং রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যুগিয়ে যাওয়াসহ অনেক দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘ ও অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনের কাজেও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বেহাল অবস্থায়ও রোহিঙ্গারা নিজেদের আত্মপরিচয় ও ঐক্য ধরে রাখায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এলিস ওয়েলস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজেদের শক্তি ও অদম্য চেতনা দেখেও আমি বিস্মিত। তারা নিজেরা মারাত্মক নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে বা প্রত্যক্ষ করেছে। এরপরও তারা আত্মপরিচয় ও ঐক্য ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যেতে পারে সেরকম অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানানো অব্যাহত রেখেছে বলে জানান মার্কিন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে আনান কমিশনের সুপারিশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশটির সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছি আমরা।

বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়া ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশগুলো। আর তা করতে আমরা সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়েছি। আমরা বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর যে সদস্যরা সহিংসতার জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনারও তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনের পরে মার্কিন মুখ্য উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ভোজ বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও তার পৃথক বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার বিকালে বাংলাদেশ সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখ্য উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস। সোমবার মধ্যরাতে তার ছেড়ে যাওয়ার কথা। এ সফরে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মার্কিন মন্ত্রী। এ ছাড়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পও পরিদর্শন করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status