প্রথম পাতা

মায়ের কোলে থাকা এক বছরের শিশু পিকআপের ধাক্কায় নিহত

কী মর্মান্তিক!

শুভ্র দেব

২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

নির্মম। নিষ্ঠুর। মর্মান্তিক। হৃদয় বিদারক। কোনো ভাষা দিয়েই এই শোকের গভীরতা পরিমাপ করা যাবে না। একবছর বয়সী নাবিলা। এইতো কিছুদিন হলো  মায়ের হাত ধরে হাঁটতে শিখেছিল। আর মুখে সবসময় লেগে থাকত মা আর বাবা ডাক। হাসি-আনন্দে মাতিয়ে রাখত ঘর। তাকে ঘিরেই যেন পরিবারের সদস্যদের সব ব্যস্ততা ছিল। এখন আর নেই কোনো ব্যস্ততা। গত রোববার রাতে বেপরোয়া পিকআপের ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে নাবিলা চলে গেছে না ফেরার দেশে। প্রিয় সন্তান হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার। কান্না আর আহাজারি থামছে না তার মায়ের। কাঁদতে কাঁদতে নাবিলার মায়ের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। মর্মান্তিক এই মৃত্যু শুধু নাবিলার পরিবার নয় মর্মাহত করেছে আরো অনেককে।

রোববার সন্ধ্যা ৬টা। মা, ভাই, বোন ও মামার সঙ্গে নাবিলা গিয়েছিল রাজধানীর নিউমার্কেটে। কাজ সেরে সেখান থেকে রিকশা করে তার পরিবার আদাবরের বাসায় ফিরছিলেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে তাদেরকে বহনকারী রিকশাটি মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালের সামনে পৌঁছায়। ঠিক তখনই বেপরোয়া গতির একটি পিকআপ ভ্যান তাদের রিকশাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেয়ার সঙ্গে রিকশার স্কেল ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে নাবিলা। সঙ্গে তার মাও ছিটকে পড়েন মাটিতে। তার মা হাত-পায়ে আঘাত পেয়ে আহত হলেও নাবিলা আর বাঁচতে পারেনি। ওই রিকশার চাকা চলে যায় আবার নাবিলার মাথার ওপর দিয়ে। এতে করে মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয় ছোট্ট নাবিলা। প্রত্যক্ষদর্শী নাবিলার মামা রাসেল মানবজমিনকে বলেন, আমার বোন ও নাবিলা একটি রিকশায় ছিলেন। আরেকটি রিকশায় আমি, আমার আরেক ভাগ্নি ও ভাগ্নে ছিল।

আমাদের রিকশা থেকে কয়েক হাত সামনে ছিল নাবিলাদের রিকশা। তখন হঠাৎ করেই এই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, মাথায় আঘাত পাওয়াতে নাবিলার মগজ বের হয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাসেল বলেন, আমার আদরের ভাগ্নির সঙ্গে কেন এমনটা হলো। সবেমাত্র একটু কথা ও হাঁটাহাঁটি শিখছিল। সে পরিবারের সবার অনেক আদরের ছিল। তাকে হারিয়ে তার বাবা-মা স্তব্ধ হয়ে গেছেন। আমার বোন কাঁদতে কাঁদতে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আমরা ওই চালকের কঠিন শাস্তি চাই।

নিহত নাবিলার বাবার নাম ইমরান হোসেন ও মা নাজমা বেগম। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের রুস্তমপুর উপজেলার ফরিদগঞ্জে। জীবিকার সন্ধানে অনেক বছর ধরে ইমরান হোসেন রাজধানীর শ্যামলীর মনসুরাবাদে থাকতেন। নাবিলা ছাড়াও তাদের আরো দুই ছেলে নাহিদ, নাবিল ও এক মেয়ে নুশরাত রয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাবিলার মা নাজমা বেগম বলেন, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমাকে এখন আর মা বলে ডাকবে না। আমার হাত ধরে সে আর হাঁটবে না। এখন আমি কি নিয়ে থাকব। তার স্মৃতিগুলো আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে। চোখের সামনে আমার নাবিলার মৃত্যু আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আদরের সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু আমাকে সারা জীবন কাঁদাবে। এদিকে, নাবিলাকে মৃত ঘোষণার পর তার মরদেহ ঢামেক মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। সেখানেই তাদের পারিবারিক কবরে তার দাফন করা হবে।

মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ মানবজমিনকে বলেন, ওই ঘটনার পরপরই আমরা অভিযান চালিয়ে ওই চালককে গ্রেপ্তার এবং পিকআপ ভ্যানটি থানা হেফাজতে এনেছি। সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করে তাকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল কি না এমন প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের সময় তার মোবাইল ও মানিব্যাগ হারিয়ে যায়। সে বলেছে মানিব্যাগের ভেতরেই তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল। মামলার তদন্ত করছেন আমাদের এক কর্মকর্তা। তদন্ত করলে লাইসেন্স ছিল কি না বলা যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status