শেষের পাতা

হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে মনিরকে হত্যা

৪ জনের ফাঁসি ও ১ জনের যাবজ্জীবন

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে আলোচিত কলেজছাত্র মনির হোসেন হত্যা মামলার চার জনের ফাঁসি ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। খালাস পেয়েছে বাকি তিন আসামি। গতকাল সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শহিদুল আলম ঝিনুক আলোচিত এই রায় প্রদান করেছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাদশা মিয়া, সিংগাইর উপজেলার ভাটিরচর গ্রামের লাল মিয়া, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার কোশলা গ্রামের আজগর চৌধুরী ও দিনাজপুরের আওলিয়াপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন। এদের সবাইকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেছে আদালত। এছাড়া রায়ে সাভারের কথিত যুবলীগ নেতা আক্তার হোসেন জামাল ওরফে কামালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। মামলার বাকি তিন আসামি মাসুদ, আলম ও শুকুর আলীকে বেকুসুর খালাস দিয়েছে। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন নিহত কলেজ ছাত্র মুনির হোসের পিতা পরশ আলী , মা মালেকা বেগম ও তর সহপাঠীরা।

পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, এই মামলা মোট ৮ জন আসামির মধ্যে ৫ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি তিন জন পলাতক রয়েছে। রায়ে ৪ জনের ফাসি ও একজনের যাবত জীবন কারাদন্ড ও ৩ জনকে বেখসুর খালাস দেয়া হয়েছে। আমারা রাষ্ট্র পক্ষ এই রায়ে খুশি। আশা করি দ্রুত রায় কার্যকর হবে।

রায়ে অন্তোষ প্রকাশ করে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিপ্রা সাহা জানান, এই রায়ে কোনো ন্যায়বিচার হয়নি। তাই উচ্চ আদালতে যাবেন তারা।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মানিকগঞ্জ খান বাহবাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু বলেন, আমরা চাই দ্রুত এই কায় কার্যকর করা হোক।

এদিকে গতকাল সোমবার রায়ের দিন তারিখ ধার্য করায় সকাল থেকেই আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা জোর করা হয়। রায় শোনার জন্য উৎসুক জনতা সকাল থেকেই কোর্ট চত্বরের বারান্দায় ভিড় জমায়।  মামলার বাদী নিহত মুনীর হোসেনের মা মালেকা বেগম ও বাবা পরোশ আলীসহ পরিবারের লোকজন সকাল ১০টার আদালাত চত্বরে হাজির হন। এসময় মুনিরের মা চোখ গড়ি পানি ঝরছিল। পুলিশ তাদের আদালতে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে আদালতের কামরায় বসিয়ে রাখেন। বেলা সাড়ে ১১টার পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শহিদুল আলম ঝিনুক রায় পড়ে শোনান। রায় শোনার পর আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত মুনির হোসেনের মা-বাবা। বাবা পরোশ আলী কান্না তারিত কণ্ঠে বলেন,আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার পেয়েছি । এই বিচাররের মাধ্যমে অপরাধীরা বুঝুক অপরাধ করলে ক্ষমা নেই। আমি চাই আমার মতো আর কোনো বাবা সন্তানহারা না হয়। এ কষ্ট আমাদের পরিবার সারা জীবন বহন করে বেড়াবে। এই রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক করার দাবি জানান পুত্রহারা অসহায় এই বাবা।

মামলার বিবরণীতে জানাগেছে, ২০১৫ সালের ৯ই সেপ্টম্বর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বিদেশ প্রবাসী পরোশ আলীর একমাত্র পুত্র মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মনির হোসেনকে একই এলাকার বাদশা মিয়া সেনাবাহীনিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে সভার নিয়ে যায়। এর পর বাদশার সঙ্গে সেখানে যোগ হয় মো. আক্তার হোসেন জামাল ওরফে কামাল, মো. আজগর চৌধুরী, মো. শুকুর আলী, মো. লাল মিয়া, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. মাসুদ  ও মো. আলম। তাদের সবার উদ্দেশ্য ছিল মনিরকে হত্যা করবে এবং তার পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবিও করবে। সাভার নিয়েই ওই দিন রাতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সকলে মিলে মনিরের হাত-পা, চোখ-মুখ ও কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি নৌকায় উঠায়। পরে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের পাথর দিয়ে মনিরকে বাঁধা হয়। এর পর মোবাইলে মনিরের মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে হত্যাকারীরা। এর আগেই মোবাইলে রেকর্ড করা হয় মনিরের কথা ও কান্নার শব্দ।

ফোনে মনিরকে নির্যাতনের আওয়াজ শোনার পর মনিরের মা মালেকা বেগম দিশাহারা হয়ে পড়েন। মুক্তিপণের টাকা দিতেও রাজি হন। কিন্তু তার  আগেই সর্বনাশ হয়ে যায়। রাতের কোনো এক সময় নৌকায় করে সাভারের নামাবাজার থেকে হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়কের শহীদ রফিক সেতুর কাছে নিয়ে জীবন্ত মনিরকে নদীতে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। আটককৃতরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে মনির হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। এ মামলায় মোট ৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, দণ্ডপ্রাপ্তরা মনিরকে হত্যার আগে একইভাবে হত্যা করা হয় সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র মো. মুনসের আলী মুন্নাকে। ঢাকা জজকোর্টে ওই মামলাটি চলমান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status