শেষের পাতা

আদমজীতে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষ
হয়েছে। এ সময় ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও পুলিশের লাঠিচার্জে পুলিশসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। উত্তেজিত শ্রমিকরা বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে এবং একটি কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় ইপিজেডের ভেতর ও ইপিজেডের বাইরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

শ্রমিকরা ইপিজেডের সামনে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়ক অবরোধ এবং ইপিজেডের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে। এতে ওই সড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। ইপিজেডের ভেতর সোয়াদ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শ্রকিরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে  সোমবার সকালে আন্দোলন শুরু করলে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও বেপজার বিপুল সংখ্যক আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। পরে আগামী ১৫ই নভেম্বর বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। দুপুর পৌনে একটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যান চলাচল শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল ৬টার দিকে প্রথমে আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন সোয়াদ গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। পরে পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

সকাল ৭টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সেখান থেকে তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা। তবে শ্রমিকদের দাবি গাড়িতে তারা আগুন দেয়নি, অন্য কেউ দিয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, ২২শে সেপ্টেম্বর তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস দেয়ার কথা দিয়েছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ না করে শ্রমিকদের না জানিয়ে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেয় মালিক পক্ষ। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এ সময় তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে প্রায় ৫০ শ্রমিক আহত হন। সেই সঙ্গে ৪ শ্রমিককে আটক করা হয়। আহত শ্রমিকদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, সোয়াদ ফ্যাশনে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ৫-৬ মাস ধরে ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করছে না কারাখানা কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বোনাস, ছুটি ও রিজার্ভ ফান্ডের টাকাও দেয়া হয়নি। এই অবস্থায় পোশাক শ্রমিকরা বাসা ভাড়াসহ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা।

সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিক নুর জাহান বেগম বলেন, আমাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ কারাখানা বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। আমরা ঘর ভাড়া দেব কোথায় থেকে আর খাবার জোগাড় করবো কোথায় থেকে? আমরা এই মুহূর্তে কোথায় চাকরি পাব? আমাদের পরিবার নিয়ে হতাশায় আছি। আমরা আমাদের সব পাওনা চাই। আমাদের ৫ মাসের বেতনের দাবিতে বাধ্য হয়ে আজ রাস্তায় নেমেছি।

একই কারখানার শ্রমিক মো. সবুজ বলেন, আমরা বেপজার কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। এই সুযোগে আমাদের বেতন-বোনাস নিয়ে টালবাহানা শুরু করে মালিক পক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে বিক্ষোভে নেমেছি।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের এসপি জাহিদুর রহমান বলেন, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। এ সময় তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে তিন পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো শ্রমিককে আটক করা হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status