শেষের পাতা

ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ

আড়াইহাজারে গুলিবিদ্ধ ৪ লাশের পরিচয় মিলেছে

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

আড়াইহাজারে উদ্ধার হওয়া গুলিবিদ্ধ চার যুবকের লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। নিহতদের নাম লুৎফর রহমান মোল্লা, সবুজ সরদার, ফারুক প্রামাণিক ও জহিরুল। তাদের  মধ্যে সবুজ সরদার, ফারুক প্রামাণিক ও জহিরুল পাবনার আতাইকুলা থানাধীন পুষ্পপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আর লুৎফর রহমান মোল্লা ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার উত্তর আকনবাড়িয়া কালীবাড়ী এলাকার। তবে লুৎফর মোল্লার পরিচয় রোববার বিকালে শনাক্ত হলেও বাকি তিনজনের লাশ শনাক্ত হয় সোমবার সকালে।

সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে এসে নিহত সবুজ সরদার ও ফারুক প্রামাণিকের লাশ শনাক্ত করেন তাদের পিতা খাইরুল সরদার ও জামাল প্রামাণিক। নিহত জহিরুলের লাশ তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম শনাক্ত করেন। এর আগে  (রোববার) নিহত লুৎফর মোল্লার লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী রেশমা আক্তার।

নিহত লুৎফর মোল্লার স্ত্রী রেশমা আক্তার বলেন, তার স্বামী গাড়িচালক। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। রাত ১টায় স্বামীর সঙ্গে তার শেষবারের মতো কথা হয়। এরপর থেকে স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ পান। রোববার সকালে টেলিভিশনে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে ছুটে আসেন তিনি।

রেশমা আরো জানান, লুৎফর রাজধানীর রামপুরা থানার বাগিচারটেক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকত। লুৎফর মোল্লার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার উত্তর আকনবাড়িয়া কালীবাড়ী এলাকায়। তার পিতার নাম মুনসুর মোল্লা।

নিহত ফারুকের পিতা জামাল প্রামাণিক বলেন, ১৫ বছর ধরে রূপগঞ্জের গাউছিয়ায় বাস চালাতো। গত ১৫ই অক্টোবর ডিবি পরিচয়ে ঢাকার গাউছিয়া থেকে একই গ্রামের ৪ জনকে ধরে নিয়ে যায়। যার মধ্যে ৩ জনের লাশ আড়াইহাজারে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতদের মধ্যে পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সবুজ সরদার, ফারুক প্রামাণিক ও জহিরুল।

এদিকে সবুজ সরদারের স্বজনরা জানান, খাইরুল সর্দার পেশায় অটোরিকশা চালক। স্বজনরা জানান, সবুজ ঢাকায় বেকারিতে চাকরি নেয়ার কথা বলে ২ সপ্তাহ আগে গ্রাম ছাড়ে।

নিহত জহিরুলের শ্বশুর নজরুল বলেন, জহিরুল বেকারিতে কাজ করতো। জহিরুলকে বেকারিতে কাজ করার জন্য গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছিল ফারুক। ফারুক ছিনতাইতারী চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে শুনেছি। ফারুকই গ্রাম থেকে তিনজনকে শহরে নিয়ে এসেছে কাজ করানোর কথা বলে।

এদিকে উদ্ধার হওয়া গুলিবিদ্ধ ৪ যুবকের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ৪টি লাশের মধ্যে তিনজনের মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে চারজনেই মাথার পেছন থেকে আঘাত করা হয়েছে। এবং ভারী কোনো বস্তু দিয়ে মাথা ও মুখমণ্ডল থেঁতলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শনিবার রাতের কোনো এক সময়ে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে গুলিবিদ্ধ চার যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুইটি মামলা করেছেন। এরমধ্যে একটি অস্ত্র আইনে অপরটি হত্যা মামলা। তবে দুইটি মামলায় নিহত চার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে তাদের আসামি করা হয়েছে। থানার এসআই রফিউদ্দৌলা বাদী হয়ে রোববার (২১শে অক্টোবর) রাতে মামলাগুলো করেন। নিহতদের মধ্যে রাতেই লুৎফর মোল্লা নামে একজনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আড়াইহাজার ওসি মুহাম্মদ আবদুল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর নারায়ণগঞ্জ মর্গ থেকে সোমবার আরও তিনজনের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছ হস্তান্তর করা হয়েছে। এরা হলেন- পাবনা জেলার সদর আতাইকুলা থানাধীন ধর্মগ্রাম এলাকার লোকমানের ছেলে জহিরুল (৩০), খাইরুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (১৭) একই এলাকার জামালউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে ফারুক প্রামাণিক (৩৫)। এর আগে রোববার রাতে লুৎফর মোল্লা (৩০) নামে একজনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। নিহতের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা সকাল থেকে লাশ গ্রহণ করতে মর্গে ভিড় করেছেন। তবে মামলার তদন্তাকারী কর্মকতা এসআই রফিউদ্দৌলা বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয় দিতে না পারায় লাশ হস্তান্তরে জটিলতা দেখা দিয়েছে।  

মামলার বিবরণ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, আসামিরা হলেন- (১) অজ্ঞাত (৩৫) তার পরণে ছিল খয়েরি রঙের গেঞ্জি ও ব্লু রঙের ফুল প্যান্ট। (২) অজ্ঞাত (৩৮), পরণে ছিল বেগুনি রঙয়ের গেঞ্জি ও সাদা গ্রিন রঙয়ের চেক লুঙ্গি, অজ্ঞাত (৩৭) পরনে ছিল হাফহাতা গেঞ্জি ও ব্লু রঙের জিন্স ফুল প্যান্ট, অজ্ঞাত (৩৫) পরনে ছিল কমলা ও সাদা রঙয়ের হাফহাতা গেঞ্জি ও নীল রঙের ফুল প্যান্ট।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচরুখী ফকিরবাড়ীর সামনে দুইদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোলাগুলি করছে। এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। মামলা নং-২৩, ২৪(১০)১৮ইং।

এদিকে ঘটনার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলের বাসিন্দারা প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। সবার মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাঁচরুখী ফকিরবাড়ীর পাশে চার ব্যক্তির ক্ষত-বিক্ষত লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। রোববার সকালে পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে কে বা কারা কেন তাদের হত্যা করেছে তা কেউ বলতে পারছে না। তবে স্থানটি নির্জন হওয়ায় কেউ হত্যার পর লাশগুলো এখানে ফেলে রেখেছে।

প্রসঙ্গত. রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী ফকিরবাড়ী নামক স্থানে চার ব্যক্তির লাশ পড়ে ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখমণ্ডল থেঁতলানো ছিল। অনেকের মাথার মগজ বের হয়ে পড়েছিল। চারজনের মাথায় গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দুইটি পিস্তল, এক রাউন্ড তাজা গুলি ও  ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-০৫০১ নম্বরের একটি সিলভার রঙের নোয়াহ গাড়ি উদ্ধার করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status