বাংলারজমিন

লেবু ও মাল্টা চাষে স্বপ্নবাজ মোসলেমের ভাগ্যবদল

মো. আলীম মাহমুদ, সখীপুর (টাঙ্গাইল) থেকে

২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

 সখীপুর উপজেলায় লেবু ও মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এক সময়ের দিনমজুর স্বপ্নবাজ মোসলেম উদ্দিন। অন্যের জমিতে কাজ করে সাত সদস্যের দরিদ্র পরিবারের খরচ মেটানো ছিল দুর্বিষহ। কোনোভাবেই যেন চলছিল না তার দিনকাল। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে পথে পথে বাদাম ও ভাঙারি ফেরি করে ঘুরেছেন। কিন্তু তাতেও ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি মোসলেমের। কিভাবে চলবে সংসার! এ ভাবনায় দিশাহারা তিনি। বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি লেবু গাছে প্রচুর লেবু ঝুলছিল। একদিন বিকালে আঙিনার গাছগুলো দেখে সে বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষের স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নই আজ তার হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে। গাছে গাছে ঝুলছে থোকাথোকা সিডলেস লেবু ও বারি-১ জাতের মাল্টা। চারদিকে সবুজের সমারোহ। সখীপুরের গজারিয়া ও কীর্তনখোলার ভাবনগর গ্রাম যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে রূপ নিয়েছে। তিনি আজ সফল লেবু ও মাল্টা চাষি। পেয়েছেন অর্থ, সুনাম আর দেশজুড়ে খ্যাতি। এভাবেই সফলতার গল্প বলছিলেন উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের স্বপ্নবাজ এক চাষি মোসলেম উদ্দিন। মোসলেম উদ্দিন মানব জমিনের এ প্রতিবেদককে জানান, দুই ছেলে এক মেয়ে বাবা-মা ও স্ত্রীসহ সাত সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতে পেরে উঠছিলাম না। বাড়ির আঙিনায় লাগানো গাছের লেবু বিক্রি করে কিছু টাকা পাই। তা থেকেই আমি বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষের স্বপ্ন দেখা শুরু করি। হাতে কিছু জমানো টাকা ছিল। ধারদেনা করেও কিছু টাকা সংগ্রহ করি। সব মিলিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে একদিকে বাড়ির গাছগুলোতে কলম দেই; অন্যদিকে গাজীপুর, ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচা বাজারের আড়ৎগুলোতে ব্যবসায়ীদের কাছে লেবুর বাজারজাত সম্পর্কে জানতে থাকি এবং চাষের জন্য জমি খোঁজতে শুরু করি। একপর্যায়ে উপজেলার গজারিয়া উত্তরপাড়া গ্রামে ছয় একর জমি বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ১০ বছরের জন্য লিজ নিই। ২০১৩ সালে প্রথম দিকে ওই জমির ওপর আমার গাছের কলম এবং নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের লাউহাটি থেকে আনা সিডলেস ও এলাচি জাতের ৫ হাজার ২০০ চারা কলম লাগাই। একই সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ওই জমিতে দুই হাজার পেঁপের চারা লাগানো হয়। এ সময় ব্যাংক থেকেও কিছু টাকা ঋণ নিই। মোসলেম উদ্দিন বলেন, প্রথম ছয় মাসেই পেঁপে বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা আয় হয়। চারা লাগানোর সাত মাসের মধ্যেই লেবু আসা শুরু হয়। লেবু থেকেও বেশ কিছু টাকা পাই। ফলন আসার প্রথম বছরেই প্রায় সাতলক্ষ টাকার লেবু বিক্রি হয়। এছাড়া লেবুর কলম বিক্রি করেও বেশ কিছু টাকা পেয়েছেন বলে তিনি জানান।  
ধীরে ধীরে আসতে থাকে লেবু বাগানের আয় ও সফলতা। স্থানীয় কৃষি অফিসও পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। পরে ২০১৫ সালে উপজেলার কীর্ত্তণখোলা ভাবনগর এলাকায় বছরে একলক্ষ ২৫ হাজার টাকায় আরো পাঁচ একর জমি ১২ বছরের জন্যে লিজ নেন মোসলেম। ওই জমিতে ‘সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ -এর আওতায় ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বারী-১ জাতের ৯০০ মাল্টার চারা লাগান তিনি। সাথী ফসল হিসেবে লাগান ৯০০ টক বড়ইয়ের চারা ও মাশকলাই। রোপনের আড়াই বছর পর সেই স্বপ্নের মাল্টাগাছে ব্যাপক ফলন দিচ্ছে। পাঁচ একর জমির গাছেগাছে ঝুলছে সবুজ ও হলুদ রঙের মাল্টা। স্বপ্ন যেনো ধরা দিয়েছে মোসলেমের হাতের মুঠোতে। এ বছর তিনি তিন টন মাল্টা বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মাল্টা ও লেবুর বাগান দেখতে আসছেন উৎসুক জনতা। মোসলেম উদ্দিন আরও জানান, অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। এক সময় আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করেছি, ফেরি করে বাদাম বিক্রি করেছি। এখন আমার বাগানেই আট থেকে বারো জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই আসে। তাঁদেরকেও আমি লেবু ও মাল্টা চাষ করতে উৎসাহ দিই। ছেলেমেয়ে ও মা-বাবা নিয়ে আমার সংসার এখন ভালোই চলছে। প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, মানুষ পরিশ্রম করলে সফল হতে পারে লেবুচাষি মোসলেম তা প্রমাণ করেছেন। তাকে দেখে অনেকেই লেবু ও মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, মোসলেমের লেবু বাগানের কথা কে না জানে! এবার তিনি মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন। বারী-১ জাতের মাল্টা বাজারে পাওয়া মাল্টার মতই মিষ্টি হয়। এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা ও লেবু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। মোসলেম উদ্দিনের বাগান দেখে অনেকেই মাল্টা ও লেবু চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। আমরা লেবুচাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও বাগান পরিদর্শন করছি।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status