দেশ বিদেশ

মাহবুব তালুকদারের ছুটি নেয়া রহস্যজনক- রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার

২২ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ৯:০১ পূর্বাহ্ন

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের হঠাৎ ছুটি নেয়াকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। গতকাল রোববার সকালে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে আওয়ামী লীগ নেতারা যেভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন তা সন্ত্রাসী আচরণ এবং তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেন ছুটি নিয়েছেন, নাকি নিতে বাধ্য করা হয়েছে তাও রহস্যজনক। ইসিকে সর্বোচ্চ চাপে রেখে কাজ করাচ্ছে সরকার। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার ও কর্মকর্তারা নিজেরা যে আচরণবিধি তৈরি করছেন তা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি। কারণ এই কমিশনের কয়েকজন আধিকারিক কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে সরকারকে দিতে চান। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের সময় এমপিদের ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করতে আইন করতে চাচ্ছেন। রিজভী বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে চারদিকে নৈরাজ্যের ছবি। সরকার পুনরায় একতরফা নির্বাচন করার জন্য এখন এজিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে। ইইউ নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। অন্যান্য দাতা ও সাহায্য সংস্থা, বিদেশি মিশন থেকেও নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারি ইচ্ছাধীন চিকিৎসায় দেশনেত্রী যে সুচিকিৎসা পাবেন না সেই আশঙ্কাটি আমরা আগেই করেছিলাম। এ বিষয়ে বারবার আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করা হয়েছে। সর্বাধিক জনপ্রিয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে কষ্ট দেয়ার জন্যই যেন বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানে উন্নতমানের চিকিৎসার প্রশ্নই আসে না। বিএসএমএমইউতে শুধুমাত্র যে ফিজিও থেরাপি দেয়া হয় সেটিও পর্যাপ্ত নয়। তার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরকেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষায়িত হাসপাতালে দেশনেত্রীর চিকিৎসার দাবিকে সরকার তাচ্ছিল্যসহ অগ্রাহ্য করেছে রাষ্ট্রক্ষমতার আতিশয্যে। কারণ খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তো সরকার প্রধানের প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে না। সেই জন্যই আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে সজ্জিত বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসার সুযোগ থেকে দেশনেত্রীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের ধ্বজাধারী প্রধানমন্ত্রী দেশের একজন অগ্রগণ্য জাতীয় নেতাকে অনুন্নত চিকিৎসার সরঞ্জামাদির আওতায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, আমি আবারো দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য তার পছন্দমতো চিকিৎসক এবং হাসপাতালের ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এখন এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন করা।
কারণ খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া প্রহসনের নির্বাচন জনগণ নির্ভীক চিত্তে প্রতিহত করবে। আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ও দেশনেত্রীর মুক্তি। রিজভী বলেন, বেআইনিভাবে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৯শে অক্টোবর।
আমরা আগেই বলেছি বিবাদীর অনুপস্থিতিতে মামলার রায় নির্ধারণ পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। সরকার প্রধানের নির্দেশেই সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলকভাবে এ রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। সেজন্যই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রায়ের দিন ধার্য করে নিয়েছে। আরেকটি ফরমায়েশি রায় হতে যাচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য দেশবাসী প্রহর গুনছে। এ আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে কিনা সেই প্রশ্নও মানুষের মনে জেগে উঠছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্রমপ্রসারমান নৈরাজ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে। এরা যেন নিজ দেশেই পরবাসী। অবৈধ শাসকগোষ্ঠী ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত আক্রমণে সারা দেশটা আওয়ামী লীগের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। এদেশে আওয়ামী নেতাকর্মীরা ছাড়া ভিন্ন মত, পথ ও বিশ্বাসের মানুষের নিরাপদ সুস্থ জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। বিভাজনের নিকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় পরিচয়ের চেয়ে দলীয় গজকাঠিতেই পরিমাপ করা হচ্ছে মানুষের যোগ্যতা, দক্ষতা, চিকিৎসাসেবা ও মানবতা।
সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হামলা-মামলার তথ্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে হাইকোর্টের নিষেধ অমান্য করে পরপর তিনটি নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রচণ্ড অসুস্থ শিমুল বিশ্বাসকে চিকিৎসাও দেয়া হয়নি। বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা শুরু হতে না হতেই তড়িঘড়ি করে শুক্রবার বন্ধের দিন কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো যাবে না, হাইকোর্টের এমন আদেশ থাকা সত্ত্বেও নজির বিহীনভাবে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার নামে। হানাদারী সরকারের কাছে আইন আদালতের কোনো বালাই নেই। আমরা শিমুল বিশ্বাসের ওপর সরকারের অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ছাড়া, নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সায়েমের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের ১৫/১৬ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোতাহের হোসেন মানিকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ২০/২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় যুবদল কর্মী খোকন, বেলাল ও বিএনপি কর্মী মাহফুজসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। সিলেটে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সাখাওয়াত হোসেন জীবন আদালতে জামিন নিতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সিলেটে শনিবার সারারাত ধরে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। অশীতিপর বৃদ্ধ সিলেট মহানগর ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি সাইদুর রহমান বুদুইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগরের রমনা থানার ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল মোতালেব প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বাসায় ফেরার পথে মালিবাগ থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে রামপুরা থানায় নিয়ে যায়। জামিন হওয়ার পরও গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় জেলগেট থেকে তাকে পুনরায় আটক করে রমনা থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় নিয়ে চোখে কাপড় বেঁধে ব্যাপক মারধর করা হয়। শনিবার তাকে ফের রিমান্ডে দেয় আদালত। অন্যদিকে ছাত্রনেতা রবিউল ইসলাম নয়নকে আবারো দুইদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ঝালকাঠি জেলা বিএনপি’র কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান খান বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন পর্যন্ত গত ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৯শে অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ২১৩টি গায়েবি মামলা এবং এজাহারে জ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৯৫ হাজার ৬৩২ জনকে। এজাহারে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ১৪৬ জনকে। সর্বমোট জ্ঞাত ও অজ্ঞাত এজাহার নামীয় আসামি ৩ লাখ ৮২ হাজার ৭২৮ জন। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫০৬০ জনকে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বনির্ভর সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সহ-সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, দপ্তর সহ- সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status