অনলাইন

কানাডার ক্যাথরিন এখন

২১ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ৫:০২ পূর্বাহ্ন

একেই বোধহয় বলে যোগাযোগ! কোথায় কানাডাক কুইবেক আর কোথায় বর্ধমানের কালনা আশ্রম পাড়়া। তবে এই সাত সাগরের দূরত্ব আদৌ বাধা হল না টিঙ্কু আর ক্যাথরিনের চার হাত এক করতে। মাঝখানে অনুঘটকের কাজ করল যোগ শিক্ষা।

ষষ্ঠীর দিন, পরনে লাল পাড় শাড়ি, হাতে শাঁখা-পলা, সিঁথিতে সিঁদুর— খাঁটি হিন্দু-বাঙালি রীতি মেনে আশ্রমপাড়ায় টিঙ্কুর বাড়ির উঠোনে বিয়ে হল ‘মেম’ ক্যাথরিনের।
যে কোনও বলিউড ছবির চিত্রনাট্যকে ফিকে করে দিতে পারে ক্যাথরিন আর টিঙ্কুর কাহিনী। কালনার আশ্রম পাড়ায় ছোটখাট ব্যবসা শিবানন্দ রায়ের। করোগেটেড টিনের ছাউনি দেওয়া, কিছুটা মাটি, বাকিটা দরমার বেড়া দেওয়া বাড়িতেই চার ছেলেকে নিয়ে বসবাস শিবানন্দ এবং দীপ্তির।


বড় দুই ছেলের সে রকম পড়াশোনা না হলেও, বেশ কষ্টেসৃষ্টে সেজ ছেলে টিঙ্কুকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়িয়েছিলেন শিবানন্দ। ২০১১ সালে দুবাইয়ের একটি হোটেলে চাকরিও পান টিঙ্কু। কিন্তু কয়েক মাস পরেই সেই চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। তাঁর কথায়, “হোটেলের কাজ আমার জন্য নয়। আমি তাই ছেড়ে চলে আসি।” তার পর স্থানীয় কলেজে যোগের পাঠ শেষ করে, কলকাতায় শুরু হয় যোগের শিক্ষকতা। সেই সূত্র ধরেই ২০১৬ সালে ভাগ্যান্বেষণে পৌঁছে যান ঋষিকেশে।


রবিবার কালনার বাড়িতে বসেই ফোনে কথা বলছিলেন বছর তিরিশের টিঙ্কু। তিনি বলেন, “ঋষিকেশে চন্দ্রা যোগ স্কুলে যোগ শিক্ষার জন্য কুইবেক থেকে এসেছিলেন ক্যাথরিন আওলেট এবং তাঁর বোন ভ্যালেরি। সময়টা অক্টোবর ২০১৭। ওই প্রতিষ্ঠানে আমি যোগ শেখাতাম। সেই সূত্র ধরেই ক্যাথরিনের সঙ্গে আলাপ।”


কথা বলার সময় টিঙ্কুর পাশেই ছিলেন ক্যাথরিন। ফোনে ভাঙা ইংরেজিতে তিনি বলেন, “সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে আমাদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তার পরই আমি টিঙ্কুকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।” কিন্তু সমাজ, দেশ, সংস্কৃতি এমনকি অর্থনৈতিক দিক থেকেও দু’জনের বিস্তর অমিল। তাই প্রশ্ন করেছিলাম নব বিবাহিত দম্পতিকে— কী আপনাদের কাছাকাছি আনল? দু’জনের জবাব একটাই— “আমরা দু’জনের মধ্যে নিজেদের শান্তি খুঁজে পেয়েছি। আর সেই খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করেছে।”


যোগ শিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন ক্যাথরিন। কিন্তু টিঙ্কুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর একই ছোঁয়া রেখে গিয়েছিলেন টিঙ্কুর মনেও। ঋষিকেশে বসেও তাই সর্বক্ষণই দু’জনের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এর পর এ বছর এপ্রিল মাসে ক্যাথরিনের দাবি মেনে কানাডা পাড়ি দেন টিঙ্কু। সেখানে ক্যাথরিনের বাবা জিলেফ এবং মা হেলেনার সঙ্গে আলাপ হয়। কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ছিলেন এঁরা দু’জন।। এখন অবসর প্রাপ্ত। ক্যাথরিন বাবা-মাকে জানা, তিনি বিয়ে করতে চান টিঙ্কুকে। মেয়ের ইচ্ছেতে বিশেষ অমত করেননি তাঁর বাবা-মা। তবে প্রথমে ছেলের এই মেম বিয়ে করায় সায় ছিল না শিবানন্দর।


শেষ পর্যন্ত হবু শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করতে টিঙ্কুকে নিয়ে সটান আশ্রম পাড়ায় এ মাসের ১ তারিখ হাজির হন ক্যাথরিন। তার পর সবাইকে চমকে দিয়ে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে, মাথায় মুকুট পরে বিয়ের পিড়িতে হাজির মেম। বিয়ের পর এখনও ওই বাড়িতেই রয়েছেন ক্যাখরিন। তাঁর একটাই কথা, “এটা এখন আমারও পরিবার। আমি গোটা পরিবেশ, সবাইকে খুব উপভোগ করছি। আমার খুব ভাল লাগছে।”


তবে বড্ড বিপদ হয়েছে শিবানন্দ এবং দীপ্তির। বৌমার পাল্লায় পড়ে এখন যে ইংরেজি শিখতে হচ্ছে দু’জনকেই!

সূত্র- আনন্দবাজার 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status