এক্সক্লুসিভ

ঝগড়ার জেরে মায়ের আত্মহনন, প্রাণ গেল চারদিনের শিশুরও

মর্মান্তিক

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

২১ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরেই হাসপাতালের পাঁচ তলার ছাদ থেকে ৪ দিন বয়সী শিশুপুত্রকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেও লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন সীমা আক্তার (২৫)। ঝগড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীমার পাশের কক্ষে থাকা হাসপাতালের আরেক বাসিন্দা ফরিদা বেগম। তিনি জানান, ওইদিন রাতের বেশির ভাগ সময় সীমা মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে ঝগড়া করেন। এসময় বাচ্চাকে সে দুধ পান করানো থেকেও বিরত থাকে। এতে বাচ্চাটির কান্নাকাটি যায় বেড়ে। কান্না থামছে না বলে ফরিদা কয়েকবার তার কক্ষের দরজায় টোকা দেন। বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে বলেন। তখন সীমা তাকে বলে তোমার দুধ খাওয়া-ও। ফোনালাপে ফরিদা শুনতে পান সীমা বলছে- ‘সকালে ঘুরি লইয়া-অই আমি মরুম’। সীমার পরিবারের লোকজনেরও বক্তব্য স্বামীর অপমানের কারণেই মারা গেছে সে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে শহরের জেল রোড থেকে সীমা ও তার সন্তানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশু বাচ্চাটিকে সবার অলক্ষ্যেই ছাদ থেকে ফেলে দেয় সীমা। তার লাফিয়ে পড়ার সময় অনেকে প্রত্যক্ষ করেন। নিচ থেকে নিষেধও করতে থাকেন কেউ কেউ। কিন্তু কারো কথা শুনেননি সীমা। হাসপাতালের কক্ষ থেকে সন্তান কোলে সীমার বেড়িয়ে যাওয়া এবং ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। লাইফ কেয়ার হাসপাতালের ভেতর দিয়ে পার্শ্ববর্তী ল্যাব এইড হাসপাতালে যাওয়ার একটি সিঁড়ি রয়েছে। সেই সিঁড়ি বেয়ে ল্যাব এইড হাসপাতালের ৫ তলার ছাদে উঠে যান সীমা।

আখাউড়া উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের শ্যামায়ন মিয়ার কন্যা সীমা আক্তারকে গত ১৬ই অক্টোবর পরিবারের লোকজন বাচ্চা প্রসব করার জন্য শহরের জেল রোডের লাইফ কেয়ার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় তার পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এটিই তার প্রথম সন্তান। ১৯শে অক্টোবর হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো তার। তার আগেই ঘটে এঘটনা। সীমা সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ঘাটিয়ারা ফুলচং গ্রামের লেবানন প্রবাসী মনির হোসেনের স্ত্রী। গত বছরের অক্টোবরে পারিবারিকভাবে আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কল্যানপুর গ্রামের শ্যামায়ান মিয়ার মেয়ে সীমা আক্তারের সঙ্গে মনিরের বিয়ে হয়। প্রায় আট মাস আগে মনির লেবাননে যান।

নিহতের বাবা শ্যামায়ন মিয়া বলেন, পাবিবারিকভাবেই যৌতুক ছাড়াই সীমার বিয়ে হয়। অবশ্য ছেলে পক্ষও কোনো কিছু দাবি করেনি। আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল হওয়ায় বিয়ের সময় সীমাকে তেমন কিছু দিতে পারিনি। কিছু দিতে না পারার কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সীমাকে সব সময় বিভিন্ন ধরনের কটু কথা শোনাত, মানসিক নির্যাতন ও অপমান করত। তিনি জানান, ঘটনার আগের দিন রাতে বিয়ের সময় বাবার বাড়ি থেকে কিছু না নিয়ে আসার বিয়য়টি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সীমার ঝগড়া হয়। এসময় সম্ভবত মনির হাসপাতালের বিল দিতে পারবে না এবং শিশুটির পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এই জন্য সীমা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সীমার দাদী আমেনা খাতুন ওরফে ডিংরাজ বলেন, বাবার বাড়িতে আসতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আসার অনুমতি দিতে চাইত না। সীমার শ্বশুরবাড়ি ছিল ১২ সর্দারের ঘর। গরিব বইল্যা নাতিনডারে কইছিলাম কোনো মতে সংসারটা করতে। মরছে পরেও শ্বশুরবাড়ির কেউ একবার আইয়্যা দেখছে না। আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য সালমা বেগম বলেন, ছেলে পক্ষের যৌতুকের দাবি না থাকলেও কিছু দিতে না পারার কারণে মেয়েটাকে তাঁরা প্রায় অপমান করত।

হাসপাতালের বিল মেটাতে ব্যর্থ হয়ে বা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে সীমা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ঘটনার পর আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ অবশ্য এখনো এ ঘটনার কোন কারণ খুঁজে না পাওয়ার কথাই বলছে। সীমার কললিস্ট চেয়েছে পুলিশ। ঘটনার আগে তার কার কার সাথে কথা হয়েছিলো সেটি দেখবে পুলিশ। ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার শফিকুল ইসলাম বাবু জানান- তারা সীমার মোবাইলটি পেয়েছেন। তবে সেটি লক থাকায় কার কার সঙ্গে তার কথা হয়েছে তাৎক্ষণিক তারা সেটি নিশ্চিত হতে পারেননি। সীমার আত্বহত্যার ঘটনার বর্ননা দিয়ে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন খান ওইদিনই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিলের কারনে সীমা আত্মহত্যা করেনি দাবি করে বলেন আমার রিলিজ হয়ে যাওয়া রোগীর বিল দেই সকাল ১০টার পর। আর এই ঘটনা ঘটেছে সকাল সাড়ে ৮টায়। পুলিশ এ ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status