এক্সক্লুসিভ

হাসপাতালেও নিরাপত্তাহীন সুবর্ণা

স্টাফ রিপোর্টার

২১ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ৮:৩০ পূর্বাহ্ন

ফরিদপুরের কেশবনগরের তারক চন্দ্র সাহার পাঁচ মেয়ের মধ্যে চতুর্থ সুবর্ণা সাহা। বয়সের কারণে কর্মক্ষমতা নেই বাবা তারক চন্দ্রের। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি জামাকাপড় সেলাইয়ের কাজ করে সংসারের ব্যয় বহন করতেন সুবর্ণা। তুচ্ছ এক ঘটনায় তছনছ হয়ে গেছে তার সবকিছু। দুর্বৃত্তদের নির্যাতনে শরীরের নিচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ২২ বছর বয়সী সুবর্ণার। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু সেই মামলা তুলে নিতে হাসপাতালে শয্যাশায়ী সুবর্ণাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পরিবারের ক্ষতি করার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। সুবর্ণার পরিবারের ভাষ্য, কাকাতো ভাই ও প্রতিবেশী সুবোধ চন্দ্র সাহা (৪৫) আগে বেশ কিছুদিন যাবৎ সুবর্ণাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছিলেন। ৭ই জুলাই সকালে ফরিদপুরের কেশবনগরের নিজ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে নাস্তা করছিলেন সুবর্ণা। এসময় পাশের বাড়ির কিছু শিশু তার কাছে জাম্বুরা পেড়ে দিতে আবদার করে। জাম্বুরা গাছটি সুবোধ চন্দ্র সাহার জমিতে হওয়ায় সুবর্ণা শিশুদের বলেন, ওই বাসায় গেলে জাম্বুরা পাওয়া যাবে। বিষয়টি শিশুদের কাছে শুনে সুবোধ ক্ষিপ্ত হন। লাঠিসোটাসহ পরিবারের আরো কয়েক সদস্যকে নিয়ে তিনি সুবর্ণাদের বাসায় প্রবেশ করেন। এক পর্যায়ে সুবর্ণার ওপর চড়াও হন সুবোধ চন্দ্র। তার হাত, পা, মেরুদণ্ডসহ পুরো শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। সুবর্ণার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হলেও তাদের মারধর করেন সুবোধ। তাৎক্ষণিক অবস্থায় আহত সুবর্ণাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ঢাকায় বেসরকারি কয়েকটি ক্লিনিকে চিকিৎসার পর ৩১শে আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। ১লা সেপ্টেম্বর তারক চন্দ্র সাহা মেয়ের ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। সুবর্ণার বড় বোন তপতী রানী সাহা জানান, হাসপাতালেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সুবর্ণা। গত ১লা অক্টোবর মামলার আসামি সুবোধ চন্দ্রের এক আত্মীয় নিখিল চন্দ্র লোকজন নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে এসে সুবর্ণাকে হুমকি দেয়। তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বলা হয়। এক পর্যায়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। সুবর্ণা রাজি না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা তাকে শাসিয়ে যায়। তার কলেজপড়ুয়া ছোটবোনের ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনার পর আতঙ্কে আছে সুবর্ণা ও তার পরিবার। তপতী জানান, সুবর্ণার ওপর হামলার পর মামলা করার সাহস পাচ্ছিল না তার পরিবার। ঢাকায় আনার পর তারা মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মামলার পর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এসআই অখিল কুমার বিশ্বাস জানান, একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বাকি দুইজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তারা সবাই জামিনে আছে। হুমকির পর ঢাকায় বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) শরণাপন্ন হয়েছিলেন তপতী রানী সাহা। সংস্থাটির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা শিখা বলেন, মামলায় যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো দুর্বল। যার কারণে আসামিরা হুমকি দেয়ার সাহস পাচ্ছে। বিএমবিএস স্থানীয়ভাবে মামলার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি। এদিকে ঢামেকের নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি সুবর্ণা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তার চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বোর্ড গঠন করেছে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত সুবর্ণা পুরোপুরি সুস্থ হবে কিনা সে বিষয়েও সন্দিহান চিকিৎসকরা। সুবর্ণা জানান, বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রিতে পড়ছেন তিনি। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করবেন। জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাবেন। কিন্তু নির্মম নির্যাতনের কারণে সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পড়ালেখা শেষ করাও সম্ভব হবে না তার। এখন নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান সুবর্ণা। হাসপাতালেও আতঙ্কে দিন কাটছে তার। নির্যাতনকারীদের শাস্তি ও নিজেরসহ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দাবি করেন তিনি। সুবর্ণার শরীরের যে অবস্থা এতে করে আগের মতো সেলাইয়ের কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। সুস্থ হওয়ার পর জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প কিছু করতে চান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status