এক্সক্লুসিভ

দেশে ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছে

ফরিদউদ্দিন আহমেদ

২০ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ৯:০২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি লোক থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা আক্রান্ত। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার শিশু এই ঘাতক ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দিন দিন এই রোগের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু এই রোগে ভুগছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়ার বাহক সংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এমন  তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতাল এবং ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও রোগে আক্রান্ত হবার কারণে থ্যালাসেমিয়া শিশুরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। তবে ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ রোগীকে কিউর বা নিরাময় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীকে সাত বছরের মধ্যে ট্রান্সপ্লান্ট করে দেয়া উচিত। যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততোই ভালো বলে এই বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেন। থ্যালাসেমিয়া একটি রক্তস্বল্পতাজনিত বংশগত রোগ। বাবা-মা উভয়েই এই রোগের বাহক হলে সন্তান এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই ঘাতক ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া দুটি প্রধান ধরনের হতে পারে। আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া। সাধারণত আলফা থ্যালাসেমিয়া বিটা থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়া বিশিষ্ট রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি হয় অপরদিকে বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি। এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমতো চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশ্বে বিটা থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। এ রোগের কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুর্বলতা, অবসাদ অনুভব, অস্বস্তি, মুখ-মণ্ডল ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া, ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), মুখের হাড়ের বিকৃতি, পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া, ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, অতিরিক্ত আয়রন, সংক্রমণ, অস্বাভাবিক অস্থি। এসব লক্ষণসমূহ কারো মধ্যে দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের পরীক্ষা যেমন কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট এবং পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্‌থ করতে হবে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস করে থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় সম্ভব। মৃদু থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণ ও উপসর্গ খুবই অল্প থাকায় ব্লাড ট্রান্সফিউশন লাগে না। বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন কোন অপারেশন হলে বা প্রসবের পর অথবা কোনো সংক্রমণ হলে প্রয়োজনবোধে রক্ত গ্রহণ করতে হয়।
চিকিৎসকরা বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়। প্রয়োজনবোধে ওষুধ এবং রক্ত গ্রহণ করতে হয়। তাই এই রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয় বহুল। এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হয়। এই রোগের স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছে ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন’ যা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। এতে বাংলাদেশে খরচ পড়বে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।
থ্যালাসেমিয়া রোগটির প্রতিকার করা সম্ভব একমাত্র জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। এই রোগ সম্পর্কে মানুষের বিস্তারিত ধারণা থাকলে এর পরিপূর্ণ প্রতিকার সম্ভব হবে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে যে যে বিষয়গুলো প্রথমে জানতে হবে তা হলো-বিয়ের আগে বর ও কনের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে তারা কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা রোগী কিনা। যদি দুজনেই বাহক বা একজন বাহক অন্যজন রোগী হয় তাহলে তাদের সন্তান-সন্ততিও এই ঘাতক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই তাদের না বিয়ে করাই উত্তম। চিকিৎসকরা আরো পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, আয়রন জাতীয় ওষুধ না খেতে। অধিক আয়রন জনিত জটিলতা এড়ানোর জন্য ৩ থেকে ৬ মাস পরপর রক্তরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে। বাব-মা উভয়েই বাহক হলে প্রিনেটাল ডায়াগনসিস-করাতে হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এমএ খান বলেন, এই রোগের রি-এজেন্ট হাসপাতালে পর্যাপ্ত থাকে না। এ ধরনের রোগীদের শরীরে আয়রন জমে যায়, তা বের করার দেয়ার জন্য ওষুধ দরকার হয়। তা সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ হয় না। ব্লাড দিয়ে স্ক্যানিং করা খরচও ২ হাজার টাকার উপরে। প্রতি বছরে এক লাখ টাকার উপরে খরচ হয়। যা গরিব রোগীর পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই এসব গরিব রোগীদের জন্য সুলভমূল্যে বা বিনা খরচে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই বিশেষঞ্জ চিকিৎসক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status