শেষের পাতা

চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেয়াল ধসে নিহত ৪

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১৫ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

শত প্রচেষ্টার পরও চট্টগ্রামে ঠেকানো গেল না পাহাড় ধস। দিন ও রাতে কখনো মাঝারি, কখনো ভারি বর্ষণে ঘটে গেছে পাহাড় ও দেয়াল ধসের ঘটনা। এতে একই পরিবারের মা-মেয়েসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ জন। গতকাল সকালে 
পাহাড় ও দেয়াল চাপা থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন। তিনি জানান, শনিবার রাত দুটার পর পৃথক এই ঘটনা দুটি ঘটে। এরমধ্যে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে নগরীর আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায়। দেয়াল ধসের ঘটনাটি ঘটে নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ এলাকায়।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে শনিবার দিনভর কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ও আশেপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা টানা বর্ষণে রূপ নেয়। এর মধ্যে রাত সোয়া ২টার দিকে আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ের পাদদেশে একটি বসতির উপর মাটির বড় খণ্ড ধসে পড়ে।

এতে নূরজাহান বেগম (৪৫) ও তার আড়াই বছর বয়সী মেয়ে ফয়জুন্নেছা আক্তার ওরফে নূর আয়েশা এবং তার মা বিবি জোহরা (৭০) নিচে চাপা পড়ে নিহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা কাজ চালিয়ে মাটির নিচে চাপা পাড়া অবস্থা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নূরজাহানের স্বামী নূর মোহাম্মদ জানান, বিবি জোহরা তার শাশুড়ি। শুক্রবার লক্ষ্মীপুর থেকে বেড়াতে আসেন তিনি। রাতে পাহাড়ের উপর থেকে দুই দফায় মাটির বড় খণ্ড ভেঙে বসতির আশেপাশে পড়তে দেখে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে যান। সেখান থেকে ফেরার পর দেখতে পান তার ঘরের উপর মাটিচাপা পড়েছে।
নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। নূরভানু সবার ছোট। তার বয়স আড়াই বছর। সবার বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ছেলেমেয়েকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে এসে শাশুড়ি, স্ত্রী ও মেয়েকেও নিয়ে যাবো বলে ভেবেছি। এর মধ্যে ঘরের উপর মাটি এসে পড়বে বুঝতে পারিনি।

স্থানীয়রা জানান, ফিরোজ শাহ কলোনির পাহাড়টি কনকর্ড গ্রুপের। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারাও দিনের বেলায় চেষ্টা করেছেন লোকজনকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু অনেকেই ঘর ছেড়ে যেতে চাননি। তবে পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি স্থাপন করার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর জহিরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম এ দায় অস্বীকার করেছেন।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ফয়’স লেকের দক্ষিণে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়টি লিজ নিয়েছে কনকর্ড গ্রুপ। সেখানে পাহাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার আছে। গত ৬ দিন ধরে আমরা সেখানে মাইকিং করেছি। বুঝিয়েছি, উচ্ছেদও করেছি। যে পরিবারটি অনাকাঙিক্ষত ঘটনার শিকার হয়েছে তাদেরও সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি কম দেখে শুক্রবার বিকালে তারা আবার ফিরে আসে। এর মধ্যে রাতে পাহাড় ধসের ঘটনাটি ঘটলো।

এদিকে শনিবার রাত ২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ এলাকার পাহাড়েও একটি ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে। এতে ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন ঘরে বসবাসকারী নূর আলম নান্টু (৩৫)।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ওই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে বলে জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন।

পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. তালেব জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে গিয়েছিল। রাতে ভারি বৃষ্টিপাতের সময় হিলভিউ আবাসিকের রহমান নগরের পাহাড়ে গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনায় একটি ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। এতে নান্টু গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া দেয়াল ধসের ঘটনায় আরো পাঁচজন আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধসের পূর্বাভাস পাওয়ায় আমরা গত কয়েকদিন ধরেই পাহাড় থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করি। লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, পোড়াপাহাড়, বায়েজীদের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অন্তত ৭ হাজার লোককে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু কেউ কেউ জোর করে থেকে যাওয়ায় পাহাড় ও দেয়াল ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঠেকানো সম্ভব হলো না।

তিনি বলেন, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এ ঘটনায় নিহত প্রত্যেককে দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। আর পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনের জন্য দায়ী এলাকার প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status