দেশ বিদেশ

কর্ণফুলী পেপার মিল সচল রাখতে ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দের সুপারিশ

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

১৩ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ৮:২২ পূর্বাহ্ন

পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত এশিয়ার এতিহ্যবাহী বৃহত্তম কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল কেপিএমকে আধুনিকায়ন করা অথবা তদস্থলে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির নতুন পেপার মিল স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত মিলটি সচল রাখার পরামর্শ প্রদান করেছে পার্বত্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সম্প্রতি কেপিএম সরজমিন পরিদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কেপিএমকে আবারো সচল করতে এই জোরালো সুপারিশমালা পেশ করা হয়। ১০ই অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ হওয়া রেজুলেশনে এসব তথ্য জানা গেছে।

সুপারিশমালায় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমপি র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, কর্ণফূলী পেপার মিলের ক্ষতির পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি দেশের কাগজের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পুরনো পেপার মিলগুলো পিপিপি/জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি মিলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা, অবসরভোগীদের পেনশন অবসর-ভাতা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া বিল পরিশোধের লক্ষ্যে ভর্তুকি হিসেবে অতিরিক্ত আরো ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করেছে স্থায়ী কমিটি।

এছাড়া কেপিএমের কাঁচামালের চাহিদা পূরণের উদ্দেশে মিলের অনুকূলে লাইসেন্সকৃত জমিতে উচ্চ ফলনশীল বাঁশের চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বরাবরে পরামর্শ দেয়া হয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে।

গত ৩রা অক্টোবর রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কর্ণফুলী পেপার মিল কেপিএম সরজমিন পরিদর্শন পরবর্তী ৪ঠা অক্টোবর উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ৩৪তম বৈঠক শেষে প্রকাশিত রেজুলেশনে উপরি-উক্ত মতামত তুলে ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে রাঙ্গামাটির নির্বাচিত সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার জানিয়েছেন, পাহাড়ের অর্থনীতির অন্যতম ধারক-বাহক এই কেপিএমের দুরবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে আমি বেশ কয়েক বছর কেপিএমকে সচল করতে আমাদের সংসদীয় কমিটিসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে বারংবার ধরনা দিয়ে আসছি। যার ফলে ৩রা অক্টোবর কেপিএম সরজমিন পরিদর্শন করাসহ সেখানকার সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের মতামত গ্রহণ করে স্থায়ী কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিয়ে রাঙ্গামাটির উন্নয়ন বোর্ডে স্থায়ী কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ৩৪তম বৈঠকে বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে রেজুলেশনের মাধ্যমে উপরি-উক্ত সুপারিশমালা পেশ করা হয়।
এদিকে কেপিএম সংকট সমাধানে সর্বশেষ ভিজিট পর্যালোচনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বুধবার জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এমপি ঊষাতন তালুকদার। সাক্ষাৎ ও আলোচনা বিষয়ে এমপির একান্ত সহকারী জহির জানান, আগামী ২৩শে অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩৫তম এবং সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে পার্বত্যাঞ্চলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
কেপিএম-এর উন্নয়নে দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা পার্বত্য রাঙ্গামাটির এমপি ঊষাতন তালুকদারের একান্ত সহকারী এমআর হোসাইন জহির আরো জানান দশম জাতীয় সংসদের শুরু থেকে আমরা কেপিএম নিয়ে কাজ করে আসছি। ইতিমধ্যে ১৩৬ কোটি টাকা থেকে শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন এবং গ্র?্যাচুইটি বাবদ ম্যাক্সিমাম পরিশোধ হয়েছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে বকেয়া গ্র?্যাচুইটি সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হবে এবং পিএফ এরিয়ারসহ যাবতীয় পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি বেতন নিয়মিতভাবে পরিশোধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অনেক ঝড়-ঝাঁপটা মোকাবিলা করে প্রায় কয়েকবার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ার পরও মিল এখনো চালু আছে। কিছুদিন আগে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণের পর ঊষাতন তালুকদার নিজে বারংবার কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমসের এমডি এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে কেপিএমকে আবারো উৎপাদনের ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহোদয় কেপিএমের সমস্যাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে সশরীরে কেপিএম পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কেপিএম-এর জন্য আলাদাভাবে অতিরিক্ত ভর্তুকি হিসেবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করেছেন। আমি মনে করি কেপিএম তার সংকট কাটিয়ে আবারো গৌরবের পথে ফিরে আসছে। এই মুহূর্তে কেপিএমের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন জহির।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status