ষোলো আনা

বাদশাহর বিয়ে এবং ছাই চাওয়ার গল্প

ইমরান আলী

১২ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

দরদাম করে এককেজি টাকি মাছ কিনেছি ৩শ’ টাকা দিয়ে। আধাঘণ্টায় মাছ বিক্রেতা দাম কমিয়েছে পাঁচ টাকা। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিক্রেতার বুঝি মায়া লাগলো। আরো পাঁচ টাকা কমালো। কারণ মুখটা করুণ করে রেখেছিলাম। নানান পন্থায় দাম কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলাম।

মাছ কাটতে চাইলো আরো একশো টাকা। মাথা চক্কর দিলো। বলে কি!

কাটালাম না। পাশের গলিতে বাকরখানি তৈরি করে কয়েকজন। তাদের দোকানে বসলাম।

সবাইকে চা খাওয়ালাম। দেশ রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলাপ শুরু করলাম। চা বিস্কিটের বিল দিলাম মোট ৪৫ টাকা।

আরো আধাঘণ্টা আলাপ চালালাম। দেশ বিষয়ক আলাপ শেষে বহির্বিশ্বের আলাপ শুরু করলাম। বাকরখানির দোকানি বেচারা বাদশাহদেরকে চরম অপছন্দ করে বুঝলাম।

এইতো সুযোগ। দোকানিকে আমার বশে আনতে হবে। নইলে মাছ কাটার ছাই চাইবো কি করে! এদিকে, মাছও নরম হয়ে যাচ্ছে।

টাকি মাছগুলো ব্যাগের ভেতর এতক্ষণ লাফাচ্ছিল, লাফানো বন্ধ হয়ে গেছে। ছাই চাওয়ার আগে দোকানি যাতে খুশি হয় তাই  সেসব বাদশাহকে আরো খারাপ বানাতে হবে গল্পে। বললাম, আরে মামা বইলেন না, ব্যাটা তুই বাদশা মানুষ, ভালো মানুষ।  তুই ক্যান এতগুলো বিয়া করবি?

দোকানির চোখ বড় করে জিজ্ঞাসা করলো, আবার বিয়া করছে বেত্তমিজ? বললাম, হ বাদশাহ না কি গত মাসে তিনটা বিয়া করছে।

দোকানি খুব তৃপ্তি পেলো এই  ভেবে, বাদশাহকে এবার আরো গালি দেয়া যাবে। বললো, বাদশাহরে যদি কাছে পাইতাম, মাথা টাক করে বুড়ি গঙ্গার পানি খাওয়াইতাম বেত্তমিজরে। বলেই উদাস ভঙ্গিতে আবার বললো, জানেন মামা এর আগেও সে ছয়টা বিয়া করছে।

আমি চুপ করে বসে আছি। বাদশাহর তিন বিয়ের গল্প বানিয়ে বলেছি এখনতো দেখছি সে বাদশাহর আরো ছয় বিয়ে দিয়ে দিলো নিজেই!

নাহ্‌ আলাপ আর বাড়ানো যাবে না। ছাই চাইতে হবে। যেই আমি বলতে যাব অমনি সে বললো, আপনার ব্যাগে পচা মাছ না কি! গন্ধ আসতাছে। জলদি মাছ কাটনিওলাদের কাছে নিয়া যান। আমার দোকানের ছাই দিয়া মাছ কাটতে দেই না। জলদি যান।

এ শহরে ছাইও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ছাই পেতেও তদবির চালাতে হয়। গল্পে বাদশাহর তিন বিয়ে দিয়েও ছাই চাওয়ার সাহস পেলাম না।

পচা মাছ নিয়ে ফের হাঁটা ধরলাম মাছ বাজারে। মাছ কেটে বাসায় ফিরলাম। তখনই নিচ থেকে আওয়াজ পেলাম- এই ছাই লাগবো ছাই? মহিলা চমৎকার সুরে ছাই বিক্রি করছে। যে ছাইকে আমরা মূল্যহীন জ্ঞান করি সেই ছাই বিক্রি করেও কারো কারো রুটি রুজির  জোগাড় হয়। জগৎ বিচিত্র।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status