দেশ বিদেশ

সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণে দৃষ্টান্ত

স্টাফ রিপোর্টার

১১ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে দুই কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করে সেখানে সাব রেজিস্ট্রার অফিস নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রামদিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের দখলে ছিল। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় ওই সম্পত্তি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে সেখানে সাব রেজিস্ট্রার অফিস গড়ে তোলা হয়েছে। এতে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজার সেবা প্রত্যাশী মানুষের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন মহাপরিদর্শক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এই সম্পত্তিতে সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস করার জন্য ঘোষণা করেন। কিন্তু ওই সম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সাব রেজিস্ট্রার অফিস নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। অবশেষে ২০১৩ সালে অক্টোবরে কাশিয়ানী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করে প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। তিনি কিছুদিন পর জানতে পারেন উপজেলার রামদিয়ায় সাব রেজিস্ট্রার অফিস নির্মাণের জন্য ৪৭ শতাংশ সরকারি জায়গা রয়েছে। তিনি প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ওই সরকারি সম্পত্তিকে আগে অবৈধ দখলমুক্ত করেন। পরে সেখানে বালু-মাটি ভরাট করে স্থানীয় প্রবাসী ও সরকারি বরাদ্দে এক হাজার ৫০ বর্গফুটের একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করেন। সেখানেই শুরু করেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম। নবনির্মিত সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ-ফলদ গাছের চারা রোপণ করেছেন সাব রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী জনগণের দেয়া ট্যাক্স থেকে আমার বেতন হয়। জনগণের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে অফিস নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক ঝুঁকি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এবং হুমকিধমকি শুনতে হয়েছে। তবে স্থানীয় কিছু লোকের সহযোগিতায় এ কাজ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমি একজন মাধ্যমিক স্কুলের বিএসসি শিক্ষকের সন্তান। আমার বাবা প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস যে মানের ছাত্র ছিলেন ইচ্ছে করলে তখন বড় আমলা হতে পারতেন। ১৯৬১ সালে তিনি মেট্রিকুলেশনে ১ম বিভাগে পাস করেন, যা শুধু আমার নিজ উপজেলা টুঙ্গিপাড়াই নয় আশপাশের জেলাগুলোতেও বিরল। শুনেছি বাবাকে ওই সময়ে আশপাশের অনেক এলাকা থেকে দেখতে এসেছিল। আমি জিটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (টুঙ্গীপাড়া) এর ফার্স্ট বয় ছিলাম। ৮০ ভাগ নম্বর পেয়ে এসএসসি পাস করেছি। আমার একমাত্র ছোট ভাই স্বপন কুমার বিশ্বাস, সে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সহকারী পরিচালক।
 সেও মানবিক বিভাগ হতে ৭৮৬ নম্বর পেয়ে গোপালগঞ্জের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। আমাদের দুই ভাইকে তো কেউ দেখতে আসেনি। আমার বাবা বিএসসিতেও প্রথম শ্রেণিতে পাস করেন। কিন্তু সম্পদের প্রতি তার কোনো মোহ ছিল না। আমাদের গ্রামের ছাত্রদের তিনি বিনা পয়সায় পড়াতেন। এমন কি তার অবসরে যাবার পরও আমাদের বাড়ির পাশে নবনির্মিত শেখ আবু নাসের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনা পয়সায় গণিত, পদার্থ ও রসায়ন পড়াতেন। তিনি সে স্কুলের বিদ্যুৎসাহীও ছিলেন। সংসদে চাকরি হওয়ার আগে আমার ছোটভাই গোপালগঞ্জে এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিল। পরে ৩০তম বিসিএস দিয়ে সংসদ সচিবালয়ে আছে। শিক্ষক থাকাকালীন সেও এই স্কুলে অনেক শ্রম দিছে। মানুষের ভালো করার ইচ্ছা থাকলেই করা সম্ভব। জনগণ ভোগান্তি কমানোর জন্য কি পরিকল্পনা রয়েছে প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে মূল দলিল ফেরত পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হতো, এখন মাত্র ৩-৫ মাসের মধ্যে তাদের মূল দলিল পাচ্ছেন। তাছাড়া ৫২ ধারার রসিদে জেলা রেজিস্ট্রারের অনুমতি নিয়ে এক সিল ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেখানে অফিসের একটা মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে জনগণ তাদের প্রয়োজনে কথা বলতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status