শেষের পাতা

নি র্বা চ নী হা ল চা ল টাঙ্গাইল ২

আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান

কামাল হোসেন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে

১১ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

গোপালপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও ভুঞাপূর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা নিয়ে টাঙ্গাইল-২ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার, বিএনপি ৪ বার, জাতীয় পার্টি ও জাসদ একবার করে জয়ী হয়েছে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন হাতেম আলী খান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে বদিউজ্জামান খান এবং জাতীয় সংসদের সদস্য হন হাতেম আলী তালুকদার।  ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদার। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আফাজ উদ্দিন ফকির বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে শামছুল হক তালুকদার ছানু এবং ১৯৮৮ সালে জাসদের আব্দুল মতিন হিরু নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদারকে পরাজিত করে প্রথম বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ১২ই জুনে বাংলাদেশের প্রথম অর্থসচিব খন্দকার আসাদুজ্জামান আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার আসাদুজ্জামানকে পরাজিত করে তৃতীয় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন আব্দুস সালাম পিন্টু। আব্দুস সালাম পিন্টু পান ১ লাখ ৫ হাজার ২৭৩ ভোট এবং খন্দকার আসাদুজ্জামান পান ১ লাখ ২ হাজার ৯৯৯ ভোট।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন খন্দকার আসাদুজ্জামান। আব্দুস সালাম পিন্টু ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার কারণে কারাগারে থাকায় তার ছোট ভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। নির্বাচনে খন্দকার আসাদুজ্জামান (আওয়ামী লীগ) পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭১০ ভোট, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু (বিএনপি) পান ১ লাখ ৩ হাজার ৫০৯ ভোট। এ ছাড়াও খালেদা হাবিব (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ) ২হাজার ৩৩ ভোট, মনিরুল ইসলাম (বিকল্প ধারা) ৫৫২ভোট এবং এনামুল হক মঞ্জু (জাকের পার্টি) পান ৪১০ ভোট। এ আসনে না ভোট পড়ে ৯১০টি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার আসাদুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) আব্দুল আজিজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন খন্দকার আসাদুজ্জামান। এতে খন্দকার আসাদুজ্জামান পান ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৫৯ ভোট এবং আব্দুল আজিজ পান ৪ হাজার ২৯৬ ভোট।

সম্ভাব্য প্রার্থী যারা: বর্তমান এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান বয়সের ভারে ন্যুব্জ থাকায় তাঁর জায়গায় মনোনয়ন চাইবেন তারই ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল (সিআইপি)। তিনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরো ৪-৫ নেতা নিজ নিজ আঙ্গিকে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির, গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মো. ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, কর্নেল মির্জা হারুন অর রশিদ (অব.), যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নূরুন নবী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি।

এদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছেন। গতকাল ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তার ভাই এ আসনের সাবেক এমপি আব্দুস সালাম পিন্টুর ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। পিন্টুর এ আসনে সবুজ সংকেত পেয়ে পুরোদমে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সালাহউদ্দিন টুকু। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। গোপালপুর-ভূঞাপুরের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়নে স্বপন ফকিরের পরিবারের রয়েছে অপরীসিম অবদান। এ আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবেন সাবেক এমপি শামছুল হক তালুকদার ছানু ও জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে আজিজ বাঙ্গাল। এদিকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াত এ আসনে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তবে গোপনে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলটির এক নেতা জানিয়েছেন।  

সম্ভাব্য প্রার্থীরা যা বললেন: খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল বলেন আমার পিতা খন্দকার আসাদুজ্জামান তিনবার এমপি হয়ে দুইটি উপজেলা ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আমি তার কর্মকাণেণ্ড সরাসরি অংশীদার এবং গণসংযোগ করছি। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমাকেই উত্তরসূরি হিসেবে পেতে চান।

টাঙ্গাইলের আলোচিত আওয়ামী নেতা ফারুক আহমেদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ফ্রন্টে চলে আসেন তানভীর হাসান ছোটমনি। তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। কর্মীবান্ধব ছোটমনি তরুণ যুব সমাজের মধ্যে পাকাপোক্তভাবে স্থান করে নিয়েছেন। বঞ্চিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সমাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সরকারের নানা সফলতা তুলে ধরছেন। ছোটমনি বলেন মানুষ এখানে পরিবর্তন চায়। বর্তমান সময় তারুণ্যনির্ভর ও তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক। রাজনীতি করি মানুষের জন্যে, কোনো চাওয়া পাওয়া থেকে নয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অংশীদার হতে চাই। আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি দলকে এই আসন অব্যশই উপহার দিতে পারবো।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোপালপুর উপজেলা পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছি এবং মানুষের পাশে আছি। মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হবো।

খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতি বলেন, দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলকে সংগঠিত করেছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত গণসংযোগ করছি। আজ সুসময়ে যারা এমপি হতে এসেছেন তারা রাজনীতিতে কেউ কেউ একেবারে নবীন। মনোনয়নের ব্যাপারে দলের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

বড় দু’দলেই কোন্দল: এ আসনটিতে বড় দু’দলেই রয়েছে কোন্দল। তবে বিএনপি’র চেয়ে আওয়ামী লীগের কোন্দল অনেকটা তুঙ্গে। ভূঞাপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপিতে দুটি কমিটি রয়েছে। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা ও অন্যটির সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল খালেক। তবে অধিকাংশ নেতা-কর্মী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফার অনুসারী। কিন্তু বয়স্ক বেশিরভাগ নেতা-কর্মী আব্দুল খালেক মণ্ডলের পক্ষে। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিও তারা পালন করছেন পৃথকভাবে। অপরদিকে দলীয় কোন্দলের কারণে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ। বর্তমানে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রুপে। কিন্তু বহিষ্কৃত ত্যাগী নেতা ও এমপি অনুসারীদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি হওয়ায় প্রকাশ্য না হলেও ভেতরে ভেতরে কোন্দল রয়েইে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের একাধিক নেতা-কর্মী। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে খ্যাত গোপালপুরেও রয়েছে ব্যাপক কোন্দল। গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হালিমুজ্জামান এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. রকিবুল হক ছানার মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এখন দুটি অংশে বিভক্ত। দলীয় কার্যক্রমেও পড়েছে ভাটা। যে যার ইচ্ছেমত নিজের পকেট ভারি করছে।

এদিকে এ উপজেলায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে দলটি। আহ্বায়ক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম লেলিনের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক দ্বন্দ্ব। কেউ কারো ছায়া দেখতেও নারাজ। ফলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিশৃঙ্খলা। বিভক্ত হয়ে পড়েছে দু’টি অংশে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যামোট ভোটার ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭২ জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩২ জন।

আগামীকাল: হবিগঞ্জ-৪
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status