এক্সক্লুসিভ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ব্যয় বাড়ছে তিনগুণ, বেশিরভাগ ব্যয় আইনশৃঙ্খলা খাতে

সিরাজুস সালেকিন

১১ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতবারের তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে কয়েকগুণ। বাড়ানো হয়েছে ব্যয়ের খাতও। আর সবচেয়ে বেশি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাখাতে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের তুলনায় এবার বরাদ্দ বেড়েছে তিনগুণের বেশি। ওই সংসদ নির্বাচনে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬৮ কোটি, সেখান থেকে বাড়িয়ে এবার করা হয়েছে ৭৩২ কোটি টাকা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে ব্যয়ের খাতও। গত সংসদে যেখানে ব্যয়ের খাত ধরা ছিল ২৯টি, এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৯টি অর্থাৎ এখানেও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
ইসি কর্মকর্তারা জানান- সময়, বাস্তব অবস্থা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সবকিছু বিবেচনা করে নির্বাচনের ব্যয় ও খাত অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণ করতে হয়। গত সংসদে বিএনপি সহ অনেক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে, আসন্ন নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে ধরেই ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে নির্বাচনের আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির ব্যয়। সংসদ নির্বাচনের ব্যয়ের খাত চূড়ান্ত করে কমিশনের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হচ্ছে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে তফসিল পূর্ব সময়ের ব্যয় ছাড় করা শুরু করবে কমিশন। তবে, নির্বাচনী সামগ্রী ক্রয়ে আগেই থোক বরাদ্দ দিলেও এ খাতওয়ারি বরাদ্দ থেকে আগের ব্যয়ের খাত সমন্বয় করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনে দুটিখাতে সার্বিক ব্যয় হয়ে থাকে। একটি নির্বাচন পরিচালনা খাত অন্যটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত খাত। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনার চেয়ে তিনগুণ বেশি খরচ হয় নিরাপত্তাখাতে। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা খাতে যে বরাদ্দ ধরা হয়েছে তার মধ্যে আনসার সদস্যরা একাই বরাদ্দ দাবি করেছে ৫৮ কোটি টাকার বেশি। তবে, পুলিশ সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ চেয়ে থাকে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বলেন, তাদের চাওয়ার মাত্রা ক্ষেত্রবিশেষে এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যা নিরাপত্তা খাতের সব বরাদ্দের চেয়ে বেশি হয়ে যায়।
নির্বাচনের বাজেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম জাতীয় সংসদে আইনশৃঙ্খলাখাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ১৭ কোটি টাকা। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ কোটি। একই ভাবে, সপ্তম সংসদে ১৮ কোটি, অষ্টম 
সংসদে ৪২ কোটি, নবম জাতীয় সংসদে ৯৮ কোটি এবং দশম জাতীয় সংসদে ১৮৩ কোটি অর্থাৎ এ সংসদে ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৬৪ কোটি; যার মধ্যে ওই টাকা ব্যয় হয় শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পেছনে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৩২ কোটি টাকা। এবার ৪০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে নির্বাচনের নিরাপত্তায় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নির্বাচনের ব্যয়ের খাত হঠাৎ বাড়ানো হয়েছে। একখাতকে ভেঙে কয়েকটি করা হয়েছে। আবার নতুন খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদে খাত ধরা হয় ২৯টি, এবার বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৪৯টি। খাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খাত তুলে ধরা হলো; যার মধ্যে ভোটকেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোটকক্ষ প্রস্তুতকরণ, কেন্দ্রের সংস্কার, ভোট কক্ষে ব্যালট পেপার মার্কিং প্লেস- গোপন কক্ষ নির্মাণ, অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র নির্মাণ খরচ-ব্যবহৃত কমিউনিটি সেন্টার-প্রাইভেট বিল্ডিং ভাড়া বাবদ ব্যয়, অস্থায়ী ভোটকক্ষ-অতিরিক্ত ভোটকক্ষ নির্মাণ খরচ, ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য মনোহর সামগ্রী যথা- সাদা কাগজ-কার্বন কাগজ-বল পয়েন্ট কলম-মোমবাতি-সুপার গ্লু-গামপট-ছুরি-আলপিন-সুঁই-সুতা-দিয়াশলাই, ঢাকা থেকে ব্যালট পেপার-ব্যালট বাক্স-বিভিন্ন প্রকার ফরম-প্যাকেট ও ম্যানুয়াল, রিটার্নিং অফিসারের ডাক-ফ্যাক্স-বিশেষ বার্তাবাহক-মুদ্রণ-আপ্যায়ন, নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম বা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত এবং ওই অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য গঠিত নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রয়োজনীয় ব্যয়-মামলা পরিচালনা ব্যয়সহ আনুষঙ্গিক, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নিয়োজিত নির্বাহী-বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পরিষ্কারকরণ-কুলি খরচ ও পরিবহন বাবদ ব্যয় এবং সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আপ্যায়ন ব্যয় ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০শে অক্টোবর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হচ্ছে। আগামী বছরের ২৮শে জানুয়ারি সময়ের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status