বাংলারজমিন

বেড়েছে চায়ের দাম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

১১ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৬ পূর্বাহ্ন

কেজিপ্রতি চায়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি এখনও অব্যাহত রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের বাজারে ক্লোন টি (ছোট দানা) প্রতি কেজি ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্লোন টি (মোটা দানা) ৩৬০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে এখন ৪০০টাকায় এবং গুপ্ত টি স্পেশাল চা প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে। বিটি-২ গ্রেডের চা ৪৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ টাকাতে বিক্রয় হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে উন্নত চা বিটি-গোল্ড বা টি-গোল্ড এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত দামেই অর্থাৎ ৬০০ টাকাতেই এবং গ্রীন-টি এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত দাম অর্থাৎ ৬৫০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
ফিনলে টি কোম্পানির হরিণছড়া চা বাগানের টি-প্লান্টার হক ইবাদুল বলেন, চায়ের দাম বৃদ্ধির জন্য অন্যতম কারণ হলো চা বাগানগুলোতে উৎপাদন কম। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন চা বাগানগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ায় চায়ের উৎপাদন কমে গেছে। বালিশিরা ভ্যালির ৩২টি চা বাগান এবং লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি বাগানের প্রায় সবগুলোতেই ‘লিফরাস্ট’ এবং ‘লোপার ক্যাটারপিলার’ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের কারণেই চা বাগানগুলোতে চায়ের উৎপাদন কম।
চায়ের রোগগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটে এ বছর চায়ের আনকমন দু’টি রোগের নাম হলো ‘লিফরাস্ট’ এবং ‘লোপার ক্যাটারপিলার’। যেটা কোনো বছর হয়নি। ‘লিফরাস্ট’ হলো ছত্রাকজনিত রোগ। এর ফলে চায়ের কুঁড়ি এবং অন্যান্য পাতাগুলো কালো হয়ে পচে যায়। চা পাতা তখন আর সূর্য থেকে খাবার গ্রহণ করতে পারে না। আর ‘লোপার ক্যাটারপিলার’ হলো এক ধরণের পোকার আক্রমণ। যারা এক রাতের মধ্যেই চা পাতার রস শুষে নিয়ে পাতাকে ঝাঝরা করে ফেলে। কীটনাশক বা বালাইনাশক প্রয়োগ করেও উপকার মিলছে না। কারণ ইতিপূর্বে আমরা চা গাছগুলোতে এত পর্যাপ্ত পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করেছি যে এখন আর তা তেমনভাবে কাজ করছে না; তা রেজিস্ট্যান হয়ে গেছে বলে জানান চা বিশেষজ্ঞ হক ইবাদুল। শ্রীমঙ্গলের অকশান বায়ার সর্বাধিক চা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গুপ্ত টি হাউজের স্বত্বাধিকারী পীযূষ কান্তি দাশগুপ্ত বলেন, বাঙালির অন্যতম প্রিয় পানীয় হলো চা। শরীরকে তাৎক্ষণিক চাঙা করতে চা দারুণ কার্যকর। এর ফলেই চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।
তিনি বলেন, একসময় চা বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে তা এর প্রতি অনেকটাই নিরুৎসাহিত দেশীয় চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তবে বর্তমান চায়ের বাজারে বেড়ে গেছে চায়ের দাম। এ দাম বৃদ্ধির ফলেও ধস নামেনি চায়ের বাজারে। ক্রেতারা দামবৃদ্ধির মধ্যেই ক্রমাগত কিনে চলেছেন তাদের প্রিয় পানীয়। চা বিশেষজ্ঞের ধারণা, চা বাগানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা দেয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চা উৎপাদনে।
চা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০ নম্বর অকশানের চা নিলাম থেকেই দাম বাড়তে শুরু করে। তখনই একসঙ্গে ১৪ থেকে ১৬ টাকা এক লাফে বেড়ে যায়। পরবর্তী নিলামগুলোতে সেই বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এপ্রিল থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ পর্যন্ত সারাবছর অবশানে মোট ৪৫টি চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।


চায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামা এবং নিয়মতান্ত্রিক বৃষ্টিপাত না হওয়াতে চা-বাগানগুলোতে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে করে চা-বাগানের চা-গাছে নানা পোকা-মাকড়ের আক্রমণের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকারের রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে কম। একাধিক চা-বাগান সিনিয়র ব্যবস্থাপকদের মতে, এখন পর্যন্ত ২০১৮ সাল চা- শিল্পের জন্য অনুকুল পরিবেশ তৈরী হয়নি। এবছর বৈরী আবহাওয়ায় পড়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭-৮ শতাংশ চা-উৎপাদন কম হওয়ার সম্বাবনা থাকছে। এদিকে চা-শ্রমিকরাও বলছে, পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে চা-গাছে সঠিক সময়ে নতুন পাতা না আসাতে তারাও বিপাকে পড়েছেন। প্রতিদিন এসব শ্রমিকের পাতা উঠানোর নিরিখ পূরণ করতে পারছে না।
তারা বলছেন, জলবায়ূর প্রভাব ও বৈরী আবহাওযায় পড়ে চা উৎপাদন মৌসুমে মৌলভীবাজার জেলার চা-বাগানগুলোতে নানা রোগ ব্যাধির প্রকোপ দেখা দেয়ায় সংশ্লিষ্টদের অভিমত এবছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে চায়ের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status