খেলা

ক্রিকেট ছেড়ে দিলেই খুশি রুমানার মা

১০ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

বাবা মারা গেছেন, মায়ের কাছেই মানুষ বাংলাদেশ নারী ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। ১০ বছর ধরে খেলে ক্রিকেটের সঙ্গেই বেঁধেছেন ঘর সংসার। কিন্তু একটি দিনের জন্যও পাননি মায়ের সমর্থন। এখন দেশের তারকা হয়ে গেলেও মায়ের দাবি ক্রিকেট ছেড়ে দাও। কিন্তু ভাই আর বোনদের সমর্থনেই ২২ গজ আঁকড়ে পড়ে আছেন এই অলরাউন্ডার। তবে, মায়ের চাওয়াকেও অযৌক্তিক মনে করেন না। তবুও ক্রিকেটে লড়াইয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বড় লক্ষ্য নিয়ে। দেশের নারী ক্রিকেটের আগ্রযাত্রায় দারুণ ভূমিকা রাখা রুমানা দৈনিক মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে তুলে ধরেন নিজের পাওয়া না পাওয়ার গল্প। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: নারী ক্রিকেটে কী কী পরিবর্তন এসেছে?
রুমানা: শুরুতে লোকজন হাসাহাসি করতো। এখন সেটি চোখে পড়ে না বরং মাঠে এসে দারুণ সমর্থন দেন। এ ছাড়াও মাঠের ক্রিকেটেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে আমরা এত খেলার সুযোগ পেতাম না। অনুশীলনও অপর্যাপ্ত ছিল। এখন কিন্তু নিয়মিত ক্যাম্প হচ্ছে। এ ছাড়াও আমাদের দেখভালের জন্য ফাহিম (নাজমুল আবেদিন) স্যার আছেন আলাদাভাবে। এ ছাড়াও আমাদের বেতন বেড়েছে, বোনাসও পাচ্ছি। বিশেষ করে এশিয়া কাপ জিতে আসার পর এখন আরো বেশি পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে টিভি, পত্রিকা, অনলাইন ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই আমাদের দারুণভাবে উৎসাহ দিচ্ছে। যা আমরা আগে পাইনি।

প্রশ্ন: প্রধান কোচসহ চারজনই নারী, খেলায় কতটা প্রভাব ফেলছে?
রুমানা: প্রধান কোচ, ট্রেনার, ফিজিও সবাই নারী। আর তারা চারজনই ভারতীয়। এই দুটি বিষয় মিলে যা হয়েছে তারাও একটি টিমের মতো আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। বলতে গেলে আমাদের ক্রিকেটার টিম ও কোচিং স্টাফদের টিম মিলে দারুণভাবে অনুশীলন হচ্ছে। যা আমাদের খেলার উন্নতিতেও ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও তারা নারী বলেই আমাদের সুখ, দুঃখ ও সমস্যাগুলো নিজেদের মতো করেই বুঝেন। আমরা নিজেদের কথা বলতে পারি খোলাখুলিভাবে। এগুলো আমাদের পারফরমেন্সের উন্নতিতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটে আসার উৎসাহ পেলেন কীভাবে?
রুমানা: আমি ছোট বেলা থেকেই কোনো মেয়ে ক্রিকেটারকে দেখে উৎসাহ পাইনি। খেলা দেখতাম হাবিবুল বাশার ভাই, মাশরাফি, সাকিব ভাইদের। আমি তাদের দেখেই শিখেছি।
প্রশ্ন: মেয়েদের জীবনে খেলা খুব কঠিন মনে হয়?
রুমানা: খেলার সঙ্গে সাধারণ জীবন ও সংসার একেবারেই ভিন্ন। ক্রিকেট খেলে ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা করা খুবই কঠিন। ক্রিকেট মাঠেও কিন্তু দায়িত্ব কম নয়। এখানে দেশের জন্য খেলছি। আর মেয়েদের জন্যতো খেলা ভীষণ কঠিন। কারণ তাদের একদিন না একদিন বিয়ে করতে হয়। তবে, আমি আমার সব কিছুই ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। স্কুলে যখন গেছি মন দিয়ে পড়েছি। এখন খেলছি সেটিতেও শতভাগ মনযোগ। যখন বিয়ে হবে সংসার হবে তখন সেখানেও নিজের দায়িত্ব পালন করবো।

প্রশ্ন: অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে সাকিব আল হাসানের ভূমিকাতে দেখেন কি না?
রুমানা: আমি বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং তিনটিই মন দিয়ে করি। শেখার চেষ্টা করি। আর সাকিব ভাইকে তো অবশ্যই ফলো করি। তিনি দেশের নয়, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। আমিও তার মতোই আমার লেগ স্পিন ও ব্যাটিং দিয়ে দলের জন্য অবদান রাখতে চাই।

প্রশ্ন: নারী ও পুরুষ ক্রিকেটের মধ্যে এখনো কি পার্থক্য দেখেন?
রুমানা: সত্যি কথা বলতে নারী ও পুরুষ ক্রিকেটে পার্থক্য আমার চোখে শুধু দুটি। একটি হলো তারা খেলেন ৭০ গজে আর আমরা ৬৫ গজে। আরেকটা হলো পারিশ্রমিক। তাদের পরিশ্রমিক, ম্যাচ ফি’র সঙ্গে অনেক পার্থক্য আমাদের। আর বাকি সবতো সমান। তারা যে ধরনের বল ও ব্যাটে খেলে আমরাও তা দিয়ে খেলি। তারাও ২২ গজের ক্রিজে খেলে আমরাও  খেলি। তাদের যে কষ্ট করতে হয় আমরাও করি। আমি রুমানা যখন অনুশীলন করি আমার কিন্তু ঘামে চারটি টি-শার্ট ভিজে যায়। আমাদের পরিশ্রম কিন্তু অনেকেই দেখে না।
প্রশ্ন: পরিবারের সমর্থন পাচ্ছেন কতটা?

রুমানা: দেখেন বাংলাদেশের সামাজিক পরিস্থিতিতো জানেনই। এখানে মেয়েদের বিয়েটাই আগে। আমার মা, আমি যখন খেলা শুরু করি তখন থেকেই তার আপত্তি। অনেক সময় যখন খেলে বাসায় ফিরি মা বলেন, বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু ক্রিকেট খেলি শুনে কথা সামনে বাড়েনি। আমি জানি আমি যেদিন বিয়ে করবো তারপর আমার আর ক্রিকেট খেলা হবে না। আমার মা’তো চায় আমি কালই ক্রিকেট ছেড়ে দেই। যদি এখন গিয়ে বলি ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছি তাতেই মা ভীষণ খুশি। আমার বাবা নেই। শুধুমাত্র ভাই-বোনরা আমাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলেই আমি খেলে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের পাশাপাশি বিয়ে কেন সম্ভব নয়?

রুমানা: সম্ভব নয়, তা না। আমাদের শুকতারা আছে, পিংকি আছে। শুকতারার স্বামী ক্রিকেট ট্রেনার। পিংকির শ্বশুর বাড়িতেও খেলা নিয়ে আপত্তি নেই। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবারই চায় মেয়ে রান্না-বান্না করুক, সংসারি হোক। তারা খেলাধুলা করে এমন মেয়ে বউ করে নিতে চায় না। সে কারণেই একটু কঠিন এখানে  মেয়ে ক্রিকেটারের জন্য খেলা ও সংসার একই সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status