এক্সক্লুসিভ
দেশে বাড়ছে মানসিক রোগী
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১০ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
দেশে প্রতি বছরই মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া যায়। দেশে পূর্ণবয়স্কদের অর্থাৎ আঠারো বছরে ওপরে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ আর শিশু-কিশোরদের ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানসিক রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় দেশব্যাপী ২০০৩-০৫ সালে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। ২০০৬ সালে পূর্ণবয়স্কদের ওপর এবং ২০০৯ সালে শিশু-কিশোরদের ওপর চালানো দুটি গবেষণার ফলে এই চিত্র ওঠে আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের পরিসংখ্যানের মতে, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০১৬ সালে বহির্বিভাগ দিয়ে সেবা নিয়েছেন ৪৭ হাজার ৬০৬ জন, জরুরি সেবা গ্রহণ করেছেন ৩ হাজার ২৪৯ জন এবং ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৫১২ জন। অন্যদিকে ২০১৫ সালে বহির্বিভাগ দিয়ে সেবা নিয়েছেন ৪২ হাজার ৭০৩ জন রোগী, ভর্তি হন ৩ হাজার ৮৫, জরুরি সেবা নিয়েছেন ২ হাজার ৫০১ জন রোগী। ২০১৪ সালে বহির্বিভাগ দিয়ে সেবা নিয়েছিল ৩৫ হাজার ১৪ জন, ভর্তি ছিল ৩ হাজার ১২০ জন আর জরুরি সেবা গ্রহণকারী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৪৫ জন। ২০১৩ সালে ২৪ হাজার ৯৭৬ জন বহির্বিভাগ দিয়ে সেবা গ্রহণ করেন। ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ১৪০ জন আর জরুরি সেবা নিয়েছিল ২ হাজার ১০৩ জন রোগী। ২০১২ সালে ২৩ হাজার ৮৯৮ জন বহির্বিভাগ দিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছিল। ভর্তি হয় এক হাজার ৯২৮ জন আর জরুরি সেবা গ্রহণকারী এক হাজার ৮২৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু রোগী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক রোগীরা আমাদের আপনজন। তারা বিপজ্জনক নয়। এই রোগগুলোর বৈজ্ঞানিক ও ফলপ্রসূ চিকিৎসা রয়েছে। রোগীদের রয়েছে চিকিৎসা পাবার অধিকার। আমাদের সমাজে মানসিক রোগীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। সমাজ মানসিক রোগীদের অনেক সময় সহজভাবে নিতে পারে না। মানুষ মানসিক রোগীদের বলে ‘পাগল’। মানসিক রোগীদের পাগল বলা সামাজিক অপরাধ। সমাজ মানসিক রোগীদের নিয়ে নানা ধরনের কৌতুক করে। কারো মানসিক রোগ হলে তার কথা কেউ গুরুত্ব দিয়ে নেয় না। মুহূর্তে মানুষ হিসেবে তার দাম কমে যায়। সে বা তিনি উত্তরাধিকার থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়ে যান। তাকে পরিবারের কোনো সুস্থ সদস্যের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। সেই আত্মীয়ই তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ তত্ত্বাবধান করে। অনেক সময় ওই আত্মীয় রোগীকে অবহেলা করে। তার যত্ন ও চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়। তারা বলেন, যখন পরিবারের কারো মানসিক রোগ হয় তখন গোটা পরিবারই ভয় পেয়ে যায়। তারা কিছুতেই স্বীকার করতে রাজি হয় না যে তাদেরই একজন মানসিক রোগী। যে পরিবারে মানসিক রোগ আছে তাদের বিয়ে হতে সমস্যা হয়।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগের এক্স সহযোগী অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, মানসিক রোগ ও এর চিকিৎসার প্রতি ভ্রান্ত ধারণা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও বিদ্যমান। পঞ্চাশ দশকের শুরুর দিকে যখন মানসিক রোগ চিকিৎসার আধুনিক ওষুধ আবিষ্কৃত হয় তখন মানসিক রোগ চিকিৎসায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়। কিন্তু এ উৎসাহ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা মানসিক রোগ চিকিৎসায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, কুসংস্কার ও অজ্ঞতা; চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগের অভাব নয়। কারণ মাত্র ৬ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ প্রসঙ্গে বলেন, মানসিক রোগ মানেই লজ্জার কোনো কারণ নয়। মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই অসুস্থতা। সব মানসিক রোগেরই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সম্ভব। বর্তমানে অনেক উন্নত ও কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর সুষ্ঠু ব্যবহারে রোগও পুরোপুরি সেরে যাচ্ছে। রোগীরা কর্মক্ষম থাকছে। কোনো কোনো রোগীকে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয়, যেমনটি খেতে হয় অনেক শারীরিক রোগীদেরও, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ইত্যাদি রোগে প্রায় সারা জীবনই ওষুধ গ্রহণ করে যেতে হয়। আবার অধিকাংশ মানসিক রোগীকেই দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয় না। মানসিক চিকিৎসাসেবার মান এমনিভাবে নানা আঙ্গিক থেকে সফলতার দিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, মানসিক রোগীরা প্রায়ই অপচিকিৎসার শিকার হয়। তথাকথিত কবিরাজ ও ফকিররা তাদের মেরে, পিটিয়ে, পানিতে ডুবিয়ে, নানাভাবে অত্যাচার করে, তাবিজ-কবজ ও পানি পড়ায় কাজ তো হয়ই না, শুধু বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যায়। ফলে রোগ ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং চিকিৎসা দেয়া জটিল হয়ে উঠে। অনেক সময় রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। তাকে বাড়িতে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। তাকে জীব-জন্তুর মতো ছোট্ট কোনো ঘরে আটকে রেখে জন্তুর মতোই অবহেলায় খাবার খেতে দেয়া হয়। তাকে কেউ ডাকে না, সামাজিক অনুষ্ঠানে নেয় না, তার সঙ্গে গল্প করে না। ছোটরাও তাকে আর সম্মান করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬২ দশমিক ৩৭ শতাংশ রোগীর যত্নগ্রহণকারী রোগীদের চিকিৎসার জন্য কবিরাজ ও ঝাড়ফুঁককারীদের কাছে নিয়ে যায়। মানসিক রোগ বিষয়ে অনেক ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। মানসিক রোগের সঠিক চিকিৎসা হলো ধর্মীয়, কবিরাজি, ইউনানী, হেকেমী ও হোমিও চিকিৎসা।
এই পরিস্থিতিতে আজ অন্যান্য দেশের মতো দেশে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের এ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক রোগীরা আমাদের আপনজন। তারা বিপজ্জনক নয়। এই রোগগুলোর বৈজ্ঞানিক ও ফলপ্রসূ চিকিৎসা রয়েছে। রোগীদের রয়েছে চিকিৎসা পাবার অধিকার। আমাদের সমাজে মানসিক রোগীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। সমাজ মানসিক রোগীদের অনেক সময় সহজভাবে নিতে পারে না। মানুষ মানসিক রোগীদের বলে ‘পাগল’। মানসিক রোগীদের পাগল বলা সামাজিক অপরাধ। সমাজ মানসিক রোগীদের নিয়ে নানা ধরনের কৌতুক করে। কারো মানসিক রোগ হলে তার কথা কেউ গুরুত্ব দিয়ে নেয় না। মুহূর্তে মানুষ হিসেবে তার দাম কমে যায়। সে বা তিনি উত্তরাধিকার থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়ে যান। তাকে পরিবারের কোনো সুস্থ সদস্যের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। সেই আত্মীয়ই তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ তত্ত্বাবধান করে। অনেক সময় ওই আত্মীয় রোগীকে অবহেলা করে। তার যত্ন ও চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়। তারা বলেন, যখন পরিবারের কারো মানসিক রোগ হয় তখন গোটা পরিবারই ভয় পেয়ে যায়। তারা কিছুতেই স্বীকার করতে রাজি হয় না যে তাদেরই একজন মানসিক রোগী। যে পরিবারে মানসিক রোগ আছে তাদের বিয়ে হতে সমস্যা হয়।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগের এক্স সহযোগী অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, মানসিক রোগ ও এর চিকিৎসার প্রতি ভ্রান্ত ধারণা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও বিদ্যমান। পঞ্চাশ দশকের শুরুর দিকে যখন মানসিক রোগ চিকিৎসার আধুনিক ওষুধ আবিষ্কৃত হয় তখন মানসিক রোগ চিকিৎসায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়। কিন্তু এ উৎসাহ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা মানসিক রোগ চিকিৎসায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, কুসংস্কার ও অজ্ঞতা; চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগের অভাব নয়। কারণ মাত্র ৬ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ প্রসঙ্গে বলেন, মানসিক রোগ মানেই লজ্জার কোনো কারণ নয়। মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই অসুস্থতা। সব মানসিক রোগেরই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সম্ভব। বর্তমানে অনেক উন্নত ও কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর সুষ্ঠু ব্যবহারে রোগও পুরোপুরি সেরে যাচ্ছে। রোগীরা কর্মক্ষম থাকছে। কোনো কোনো রোগীকে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয়, যেমনটি খেতে হয় অনেক শারীরিক রোগীদেরও, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ইত্যাদি রোগে প্রায় সারা জীবনই ওষুধ গ্রহণ করে যেতে হয়। আবার অধিকাংশ মানসিক রোগীকেই দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয় না। মানসিক চিকিৎসাসেবার মান এমনিভাবে নানা আঙ্গিক থেকে সফলতার দিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, মানসিক রোগীরা প্রায়ই অপচিকিৎসার শিকার হয়। তথাকথিত কবিরাজ ও ফকিররা তাদের মেরে, পিটিয়ে, পানিতে ডুবিয়ে, নানাভাবে অত্যাচার করে, তাবিজ-কবজ ও পানি পড়ায় কাজ তো হয়ই না, শুধু বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যায়। ফলে রোগ ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং চিকিৎসা দেয়া জটিল হয়ে উঠে। অনেক সময় রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। তাকে বাড়িতে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। তাকে জীব-জন্তুর মতো ছোট্ট কোনো ঘরে আটকে রেখে জন্তুর মতোই অবহেলায় খাবার খেতে দেয়া হয়। তাকে কেউ ডাকে না, সামাজিক অনুষ্ঠানে নেয় না, তার সঙ্গে গল্প করে না। ছোটরাও তাকে আর সম্মান করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬২ দশমিক ৩৭ শতাংশ রোগীর যত্নগ্রহণকারী রোগীদের চিকিৎসার জন্য কবিরাজ ও ঝাড়ফুঁককারীদের কাছে নিয়ে যায়। মানসিক রোগ বিষয়ে অনেক ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। মানসিক রোগের সঠিক চিকিৎসা হলো ধর্মীয়, কবিরাজি, ইউনানী, হেকেমী ও হোমিও চিকিৎসা।
এই পরিস্থিতিতে আজ অন্যান্য দেশের মতো দেশে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের এ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য।’