বিশ্বজমিন

প্যারিসে যৌনদাসী- পর্ব ২

নাদেজের টার্গেট প্রতিদিন ১০০ ইউরো

মানবজমিন ডেস্ক

৭ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

ভাল থাকা ও ভাল বেতনের প্রলোভনে নাইজেরিয়া থেকে প্যারিসে পা রেখেছেন নাদেজে। এখানে আসার পরেই তাকে দিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে। নাইজেরিয়া ছাড়ার আগে কমপক্ষে দু’দফা ধর্ষিত হন নাদেজে। মার কাছ থেকেও তিনি বিচ্ছিন্ন। যে ফুপুর কাছে তাকে থাকতে দেয়া হয়েছিল তাকেও দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। কারণ, তাদের চোখ পড়েছিল নাদেজের ওপর। এরই এক পর্যায়ে এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই নারীই তাকে প্রলুব্ধ করে। তাকে তিনি নিয়ে যান এক ‘জুজু’ উপাসনালয়ে। সেখানে নাদেজেকে শপথ পড়ানো হয়। নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি রীতি আছে যে, এই জাতীয় উপাসনালয়ে কোনো শপথ করলে তা ভঙ্গ করা যাবে না। সেই শপথের জেরে নাদেজেকে নিয়ে যাওয়া হয় প্যারিসে। এক্ষেত্রে তার খরচ বহন করেন ওই ম্যাডাম নামের দালাল। তবে তাকে নাদেজেকে যে শপথ পড়ানো হয়েছে, তিনি যে ওই ম্যাডামের কাছে ঋণী এ কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেয়া হয়। শুধু প্যারিস নয়, ইউরোপজুড়ে নাইজেরিয়ার অসংখ্য নারীকে এভাবে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থী ও মানবপাচার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনজীবি ইয়েহুদি পেলোসি। তিনি বলেন, এসব নারীকে এভাবে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করার সময় এক রকম অনুষ্ঠান করা হয়। তাতে তাকে ‘কোলা’ বাদাম ও মুরগির হৃদপিন্ড খেতে বাধ্য করা হয়। রক্ত এবং বিভিন্ন শষ্যের সংমিশ্রণে তৈরি এক রকম পানীয় পান করতে বাধ্য করা হয়। তাদের বয়োঃপ্রাপ্তির সময়কার শরীরের গুপ্ত লোমের কিছু নিয়ে নেয়া হয়। তাদের মাথা, স্তন ও কাঁধের কিছু অংশে রীতি পালন করতে চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়। এসব নিয়ে কাজ করছে এমন দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, এই শপথ পড়ানোর মধ্য দিয়ে নারীদেরকে বলীয়ান করা হয়। তাদেরকে এমন আশ্বস্ত করা হয় বা এমনভাবে বোঝানো হয় যে, এই শপথ ভঙ্গ করলে তিনি পাগল হয়ে যাবেন অথবা মারা যাবেন। শুধু তা-ই নয়। একই সঙ্গে তার পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, যেসব ম্যাডাম এই যুবতীদের বা নারীদের আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করেন তারা দেশে একদল কুচক্রীকে পালেন। এসব কুচক্রী সেনা স্টাইলের গ্যাং। তারা সংশ্লিষ্ট যুবতীর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়। মাঝে মাঝে পরিবারের সদস্যদের হত্যাও করে। নাদেজে বলেন, তারা আমাকে বলে, আমার পিতামাতা নিরাপদ নন। কিন্তু আমি আমার মাকে ভালবাসি। তার কোনো ক্ষতি হোক এটা আমি চাই না।
নাদেজে কিভাবে ফ্রান্সে গিয়েছেন তা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমাকে ম্যাডাম একটি ভুয়া পাসপোর্ট ধরিয়ে দেন আমাকে। সেই পাসপোর্ট নিয়ে আমি একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে উঠে বসি। পৌঁছে যাই প্যারিসে। এর এক সপ্তাহ পরে তিনি পৌঁছেন প্যারিসে। তারপর বোইস পার্কে। এখানেই আমাকে দিয়ে ‘কাজ’ করানো শুরু হয়। ওই সময় আমার বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। আমার প্যারিসে আসতে ঋণ করতে হয়েছে অনেক অর্থ। ম্যাডাম দিয়েছেন ৫০ হাজার ইউরো। অন্যদের কাছ থেকে নিয়েছি ৬০ হাজার ইউরো। ম্যাডাম আমাকে প্রতিদিন ১০০ ইউরো আয়ের টার্গেট দিয়েছেন। আর ওই যে ভুয়া পাসপোর্ট তা তিনি নিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়। আমি যা আয় করি তার সবটাই তিনি নিয়ে নেন। শুধু খাবার টাকা ও ভাড়ার টাকাটা আমার হাতে দেন। বাকিটা তার। ওই ১০০ ইউরো টার্গেট পূরণ করতে প্রতিদিন আমাকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত একটানা খদ্দেরের মনোরঞ্জন করতে হয়। তারা যেভাবে চান সেভাবেই তাদের সঙ্গে আচরণ করতে হয়। তাদের মন ভরলেই তো অর্থ। তারা আবার আমার কাছে আসবেন। আমাকে খুঁজবেন। তাই কোনো বাধা নিষেধ থাকে না। তাদের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিতে হয়। এমনি করে শরীর বিকিয়ে বাসায় ফিরতে সকাল ৮ টা বেজে যায়।
এরপর দিনের বেলায় অন্য কোথাও কাজ করেন নাদেজে। তিনি কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বিকাল ৩টা থেকে অন্য কোথাও কাজ করেন। যখন সন্ধ্যা ৬টা বেজে আসে তখন তাকে আবার ফিরতে হয় বোইস পার্কের সেই আলো-আধারির পার্কে।
এই পার্কে যেসব নাইজেরিয়ান নারী দেহব্যবসা করেন তাদের বেশির ভাগই যৌনদাসী। তাদেরকে দিয়ে কৃতদাসের মতো এই দেহব্যবসা করানো হচ্ছে। তারা এ ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে অন্যথা হলে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।
নাদেজে বলেন, একবার আমি এক পুরুষ খদ্দেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি কেন এই অন্ধকার জগতে পা রাখেন। ওই পুরুষ আমাকে জবাবে বলেছিলেন, তিনি বিচ্ছেদপ্রাপ্ত। নিজের মনের ও শরীরের ক্ষুধা মেটানোর জন্য তিনি নাদেজের মতো নারীদের কাছে ছুটে যান। তিনি ও অন্য খদ্দেরদের বেশির ভাগই জানেন নাইজেরিয়ান নারীদের অবস্থা। তারা জানেন অল্প টাকায়ই এসব নারীর কাছে পাওয়া যায় শরীর। হারিয়ে যাওয়া যায় নিষিদ্ধ জগতে। তাই তারা এখানেই ছুটে আসেন।
(চলমান)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status