বিশ্বজমিন

ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকমপ

‘পৃথিবী যেন জীবন্ত ব্লেন্ডারে পরিণত হয়েছিল’

মানবজমিন ডেস্ক

৬ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার, ৮:৪২ পূর্বাহ্ন

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের বিধ্বংসী ভূমিকমপ ও জলোচ্ছ্বাসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৫৮। ভূমিকমেপর প্রায় এক সপ্তাহ পরে নিজের বোন ও তার মেয়ের লাশ খুঁজে পেয়েছে ইচসান হিদায়াত। ভূমিকমেপর কারণে সৃষ্ট লিকুইফিকশনে অসংখ্য বাড়িঘর তরল মাটিতে ডুবে গেলে তাদের মৃত্যু হয়। সেদিন সুলাওয়েসিতে ছিলেন না হিদায়াত। ৭.৫ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকমেপ সুলাওয়েসি দ্বীপের মাটি অবিশ্বাস্যভাবে তরল পদার্থের ন্যায় আচরণ শুরু করে। এতে তার বোন হুসনুল হিদায়াত ও তার ৪৩ দিন বয়সী মেয়ে আয়শা মারা যায়। উদ্ধারকারীরা হিদায়াতকে জানিয়েছেন যে, তার বোনের লাশ যখন পাওয়া যায় তখনো তিনি তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রেখেছেন। রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হিদায়াত বলেন, আমি প্রার্থনা করছি তারা যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক। এটিই তাদের প্রাপ্য।
ইন্দোনেশিয়া মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম রাষ্ট্র। তবে, সুলাওয়েসি দ্বীপে কিছু খৃষ্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বীরাও বসবাস করেন। এরমধ্যে পালু দ্বীপেই সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৫৫৮ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে দেশটি। তবে, মৃতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনো এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তরল মাটিতে ডুবে যাওয়া অঞ্চলগুলোতে কত লাশ রয়েছে তা এখনো ধারণা করা যাচ্ছে না। দেশটির ন্যাশনাল ডিজাস্টার এজেন্সির হিসেবে প্রায় ১৭০০ বাড়ি মাটির মধ্যে ডুবে গেছে। ৪৪ বছর বয়স্ক হাসনাহ বলছিলেন, তিনি তরল মাটিতে তার পরিবারের সদস্যদের খুঁজছিলেন। তার পরিবারের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য ভূমিকমেপ নিহত হয়েছে। তিনি কাঁদছিলেন ও বলছিলেন, আমি গুনেও বলতে পারছি না আমি কতজনকে হারিয়েছি। আমার দুই সন্তান মারা গেছে, আমার চাচাতো ভাইবোনেরা মারা গেছে, আমার বোন ও আমার দেবর মারা গেছেন, তাদের সন্তানরাও মারা গেছে। হাসনাহ বলছিলেন, পৃথিবী যেন একটি জীবন্ত ব্লেন্ডারে পরিণত হয়েছিল। তিনি জানান, তার কাছে যথেষ্ট খাদ্য ও পানি রয়েছে। তবে, তার এলাকায় উদ্ধার অভিযান শুরু হতে ছয় দিন সময় লেগেছে, এতে তিনি আশাহত হয়েছেন। তিনি বলেন, কর্মকর্তারা বলেছিলেন তারা ভারি যন্ত্র নিয়ে ফিরে আসবেন, কিন্তু তারা মিথ্যা বলেছেন। আশাহত হয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই উদ্ধার অভিযানে নামে। কিন্তু মাটির নিচ থেকে লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পালুতে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। সেখানকার দোকান ও ব্যাংকগুলো খুলতে শুরু করেছে। দুর্গম এলাকাগুলোতেও ত্রাণ ও তেল পৌঁছাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি জানান, পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। দেশটির বিভিন্ন অংশ থেকে ডাক্তাররা এখানে ছুটে আসছেন জরুরি সাহায্যের জন্য। হাসপাতালগুলো ভরে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের অনেকেই ইনফেকশনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা জানায়, লিকুইফিকশন ও কাদার কারণে আহতদের ইনফেকশনগুলো ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সুলাওয়েসি দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার প্রধান পাঁচ দ্বীপের একটি। দেশটির অন্যান্য অঞ্চলের মতো এটিও ভূমিকমপ ও সুনামির উচ্চ ঝুঁকিসমপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status