শেষের পাতা

নি র্বা চ নী হা ল চা ল টাঙ্গাইল ৩

মনোনয়ন দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ বিএনপিতে স্বস্তি

মো. মাসুম মিয়া, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে

৪ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

জেলার আলোচিত আসন টাঙ্গাইল-৩। এ আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে থাকায় আসনটি সারা দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঘাটাইল উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে টাঙ্গাইল-৩ আসন গঠিত। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনবার। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি ও জোট সরকারের আমলে মন্ত্রিত্বও লাভ করেন। সেই থেকে ঘাটাইল আসনটি বিএনপির আসন হিসেবেই পরিচিত। তাই আসনটি উদ্ধারে মরিয়া এখন বিএনপি। অন্যদিকে মনোনয়ন প্রশ্নে কয়েক ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। এখানে দলীয় কোন্দল দূর না করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে না আওয়ামী লীগ। এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে সুস্পষ্টভাবে দুটি ভাগে বিভক্ত এ আসনের আওয়ামী লীগ। এর একটির নিয়ন্ত্রণে শহিদুল ইসলাম লেবু অপরটি বর্তমান এমপি রানার অনুসারীরা। হাফ ডজনের উপরে মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও কে হবেন এ আসনে নৌকার মাঝি সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।  

১৯৭০ সালের গণপরিষদ নির্বাচনে এমএনএ এবং ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত শামসুর রহমান খান শাহজাহান। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৮ সালে এ আসনের এমপি হন জাতীয় পার্টির সাইদুর রহমান খান মোহন। কিন্তু ১৯৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদের কাছে পরাজিত হন শামসুর রহমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তন করে রাজনীতিতে নতুন মুখ ডা. মতিউর রহমানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে বিএনপির ভিআইপি প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ২১ বছর পর আসনটি আওয়ামী  লীগকে উপহার দেন ডা. মতিউর রহমান।

২০১২ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে  আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু। তখন  বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন প্রয়াত শামসুর রহমান খান শাহজাহানের ভাতিজা বর্তমান এমপি আমানুর রহমান খান রানা। এই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে লেবুকে হারিয়ে এমপি হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিটে রানা আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

তার অবর্তমানে হাফ ডজনেরও বেশি মনোননয়ন প্রত্যাশী নৌকার টিকিটের জন্য তৃণমূলে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন কারাবন্দি এমপি আমানুর রহমান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু, সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া বিশিষ্ট শিল্পপতি আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিন, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম, প্রয়াত এমপি ডা. মতিউর রহমানের ছেলে তানভীর রহমান, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. নূরুল আলম তালুকদার, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডা. কামরুল হাসান খান, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক  এস আকবর খান এবং তেজগাঁও কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অধীর চন্দ্র সরকার।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু জানান, দলকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে রেখেছি। উপনির্বাচনেও আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। আশা করছি আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন পাব।

১৯৭৯ সালে বিএনপির টিকিটে এ আসন থেকে ডা. শওকত আলী ভূঁইয়া এমপি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ঘাটাইলে বিএনপির গোড়াপত্তন শুরু হয়। পরে এরশাদ সরকার পতনের আন্দোলন মাধ্যমে ঘাটাইলে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। তারপর ১৯৯১ সাল, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ এমপি নির্বাচিত হন। তিনি একাধিকবার মন্ত্রিত্বও লাভ করেন। মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে উপজেলায় উন্নয়নমূলক কাজ করেন। তিনিই এখন পর্যন্ত এ আসন থেকে একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মাইনুল ইসলাম মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলেও ঘাটাইল উপজেলা বিএনপি অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ।

নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকলেও নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে দাবি বর্তমান  কার্যকরি কমিটির নেতাদের। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ. খ. ম রেজাউল করিম ও সাংগাঠনিক সম্পদক শামীম খান বলেন লুৎফর রহমান খান আজাদ বিএনপির একজন জননন্দিত জনপ্রিয় প্রার্থী এবং ঘাটাইলের উন্নয়নের রূপকার। তিনিই বিএনপির একক প্রার্থী। এখানে বিএনপি সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী। সবদলের অংশ গ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এখানে বিএনপির প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘাটাইলের জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই পালন করা হয়েছে। ঘাটাইলের সর্বস্তরের জনগণ তার সাক্ষী। সবদলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ঘাটাইলের জনগণ তাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশা করেন।

এ আসনে অন্য রাজনৈতিক দলের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। জোটভুক্ত নির্বাচন না হলে জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনএফ, জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন এখানে আলাদা প্রার্থী দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

আগামীকাল: ময়মনসিংহ-৬
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status